‘বিদেশে নির্বাচন নিয়ে বৈঠক গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী’

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম
‘বিদেশে নির্বাচন নিয়ে বৈঠক গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী’

বিদেশে নির্বাচন নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়াকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী। 

শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “লন্ডনে বসে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের বৈঠক দেশের জনগণের স্বার্থ এবং গণআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সরাসরি প্রতারণা। শহীদদের রক্তকে অবমাননা করে বিদেশের মাটিতে এমন বৈঠক আয়োজন কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।”

তিনি বলেন, “দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে দেশের জনগণের মাধ্যমে, বিদেশি আলোচনার মাধ্যমে নয়।”

নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর একটি সামাজিক চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন না করে দেশকে ভুল পথে পরিচালিত করা হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় একটি নতুন জাতীয় বন্দোবস্ত জরুরি, যা হতে হবে জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে— কোনো একক দলের সুবিধার জন্য নয়।”

সরকার সংস্কার ও সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থানে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, “বর্তমান সরকার যদি বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হয়, তবে এনসিপি দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থানের দিকে যেতে বাধ্য হবে। আমরা এমন কোনো নির্বাচনেও অংশ নেব না, যা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায় না।”

তিনি বলেন, “শুধু রাজার বদলে রাজা নয়, দরকার কাঠামোগত পরিবর্তন। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “শহীদদের আত্মত্যাগ ও আহতদের কষ্টের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। গ্রামীণ জনপদের মানুষের কাছে গিয়ে জানতে হবে তারা কী চায়। সরকারের উচিত জনগণের বেদনা অনুধাবন করে বিচার ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় সক্রিয় হওয়া।”

বিএনপির অবস্থান নিয়ে প্রশ্নে নাসির উদ্দিন বলেন, “বিএনপি এক সময় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও এখন রমজানের আগেই নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা বিচার, নতুন সংবিধান কিংবা জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র— কোনো কিছুই স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেনি। এতে স্পষ্ট, তারা কেবল ক্ষমতার ভাগ চাইছে, গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছে না।”

তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি একযোগে দেশের জনগণকে উপেক্ষা করে গভীর সংকট সৃষ্টি করছে। জনগণ অতীতেও লড়েছে, ভবিষ্যতেও লড়বে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো সরকারই বৈধতা পায় না।”

নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “শুধু নির্বাচন করলেই হবে না, সঠিক বিচার ও সাংবিধানিক সংস্কার ছাড়া সেই নির্বাচনের অর্থ নেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থার প্রতীক নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তির পক্ষে কাজ করছে। তাই কমিশন পুনর্গঠন, আরপিও সংশোধন এবং জাতীয় ঐকমতের ভিত্তিতে নির্বাচন ছাড়া দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব নয়।”

ইএইচ