নাহিদ ইসলাম

পিন্ডি ভেঙেছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়

রাইসুল ইসলাম লিটন, টাঙ্গাইল প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৬:০১ পিএম
পিন্ডি ভেঙেছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আমরা পিন্ডি ভেঙেছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়।” 

বলেন, মওলানা ভাসানী পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে যেমন লড়েছেন, তেমনি দিল্লির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন।

মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে এনসিপি আয়োজিত ‘জুলাই পদযাত্রা’ উপলক্ষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “এই টাঙ্গাইলের প্রতি ইঞ্চি মাটি সংগ্রামের সাক্ষী। কৃষকের ঘামে গড়া এই জনপদেই মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে বহু ঐতিহাসিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। তিনি শুধু বাংলাদেশের নয়, উপমহাদেশের এক অনন্য রাজনৈতিক প্রবাদপুরুষ। আসামের বাঙালি মুসলমান কৃষকদের জমির অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তার ভূমিকা আজও প্রাসঙ্গিক।”

তিনি আরও বলেন, “ভাসানী ছিলেন গণমানুষের নেতা, তৃণমূল রাজনীতির পথিকৃৎ। তিনিই প্রথম উপলব্ধি করেন যে পাকিস্তানের সঙ্গে এক ছাদের নিচে বাঙালির টিকে থাকা অসম্ভব। কাগমারী সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকদের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, ভাসানী ও শেরে বাংলা ফজলুল হকের মতো নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি, ইতিহাসে তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও ভাসানীর রাজনৈতিক ধারার উত্তরসূরি ছিলেন। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেপথ্য কারিগর ছিলেন মওলানা ভাসানী।”

নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা তার আদর্শ বুকে ধারণ করে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে দেশের সামনে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে চাই।”

সম্প্রতি রংপুরের একটি উপজেলায় হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা ও লুটপাটের প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। নবীজিকে (সা.) সেখানে কটূক্তি করা হয়েছে—আমরা অবশ্যই বিচার চাই। তবে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সভ্যতার ওপর কেউ আঘাত করলে তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের নবীজি কখনোই অন্য ধর্মের ওপর আঘাত করার শিক্ষা দেননি। বরং তিনি সব সময় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। এই ঘটনার মূল উদ্দেশ্য ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক। এরা সাম্প্রদায়িক উসকানি ও লুটপাটের উদ্দেশ্যে এসব করেছে। দোষীদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে, যে ব্যক্তি ধর্ম অবমাননা করেছে তাকেও।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো শক্তিশালী কৃষক সংগঠন নেই। ফলে কৃষকদের জন্য কোনো প্ল্যাটফর্মও নেই। কৃষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার পায় না, সরকারি ভর্তুকিও পায় না, আবার ফসল বিক্রি করেও ভালো দাম পায় না। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে কৃষকরা তাদের অধিকার পাবে।”

টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারতের ‘জিআই পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের নয়, বাংলাদেশের। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ কীভাবে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ নামে জিআই স্বত্ব পেল, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। আমরা তাতশিল্পের পুনরুদ্ধার চাই।”

সমাবেশে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “আগামীর বাংলাদেশে প্রশাসন ও পুলিশসহ সব বাহিনীকে দেশের ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আর কোনো দল বা গোষ্ঠীর দাস হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র চলবে না। গণমাধ্যমও যেন আর কোনো ব্যক্তি বা দলের দালালি না করে, সেটিও আমরা চাই।”

এ সময় তিনি দেশে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান।

উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আজাদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (সঞ্চালনায়), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, সিনিয়র সদস্য সচিব সারোয়ার নিভা, ডা. তাজনুভা জাবিন প্রমুখ।

সমাবেশের আগে এনসিপি নেতারা জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

ইএইচ