নাহিদ ইসলাম

জাতীয় সরকার নিয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য সত্য নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০২:৫০ পিএম
জাতীয় সরকার নিয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য সত্য নয়

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দাবি করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ছাত্রদের পক্ষ থেকে বিএনপিকে দেওয়া হয়েছিল, তবে বিএনপি এখন তা অস্বীকার করছে—যা অসত্য। একইসাথে তিনি সাম্প্রতিক ঢাবিকেন্দ্রিক অভ্যুত্থানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘নেতৃত্ব’ দাবি এবং সাবেক শিবির নেতা সাদিক কায়েমের ভূমিকাও প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাসে নাহিদ এসব মন্তব্য করেন।

জাতীয় সরকার প্রস্তাবের বিষয়ে

স্ট্যাটাসে নাহিদ লেখেন, "বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জাতীয় সরকারের কোনো প্রস্তাবনা ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাদের দেওয়া হয়নি, বরং তারা অন্য মাধ্যমে প্রস্তাব পেয়েছেন। এই বক্তব্য সত্য নয়।"

তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ছাত্রপক্ষ থেকে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে তারেক রহমান এ প্রস্তাবে সম্মতি দেননি এবং নির্বাচনী সময়ের জন্য নাগরিক সমাজের সদস্যদের নিয়ে সরকার গঠনের পরামর্শ দেন। সেই আলোচনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবও উঠে আসে।

নাহিদ আরও দাবি করেন, ৭ আগস্ট ভোরে মির্জা ফখরুলের বাসায় গিয়ে তাঁদের একটি প্রতিনিধি দল উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা করে। পরে তারেক রহমানের সঙ্গে আরেকটি ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রস্তাবিত উপদেষ্টাদের নিয়ে পর্যালোচনা হয়।

শিবির ও সাদিক কায়েমের দাবি প্রত্যাখ্যান

সম্প্রতি একটি টকশোতে সাদিক কায়েম দাবি করেন, ‘ছাত্রশক্তি’ গঠনে শিবির নেতৃত্ব দিয়েছে এবং তারা শিবিরের নির্দেশে কাজ করতো। এর জবাবে নাহিদ বলেন, "এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। ‘ছাত্রশক্তি’ গঠিত হয়েছে ‘গুরুবার আড্ডা’ পাঠচক্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অধিকার পরিষদের পদত্যাগকারী অংশ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্টাডি সার্কেলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। এটি কোনোভাবেই শিবিরনির্ভর সংগঠন নয়।"

তিনি বলেন, "আমরা দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ক্যাম্পাস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সবধরনের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, তবে কোনো পক্ষ আমাদের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করেনি।"

নাহিদ আরও অভিযোগ করেন, সাদিক কায়েম কখনো ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সমন্বয়ক ছিলেন না। কেবলমাত্র ৫ আগস্টের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কৌশলগত কারণে তাকে বসানো হয়, যার ভিত্তিতে পরে তিনি ‘নেতৃত্ব’ দাবি করা শুরু করেন।

‘সায়ের গোষ্ঠী’র বিরুদ্ধে অভিযোগ

নাহিদ ইসলামের স্ট্যাটাসে ২ আগস্ট ২০২৪-এ জুলকারনাইন সায়েরের নেতৃত্বে একটি সামরিক ক্যু প্রচেষ্টার অভিযোগও আনা হয়। তাঁর দাবি, ওই রাতে ছাত্রনেতাদের ‘একদফা দাবি’ ফেসবুকে প্রচার করার জন্য চাপ ও হুমকি দেওয়া হয়, যাতে তারা সরকার পতনের ঘোষণা দিয়ে ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায়।

নাহিদের ভাষ্য অনুযায়ী, "আমরা তখনই বলেছিলাম, সেনাবাহিনী বা তাদের সমর্থিত কোনো গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা গেলে আবার ‘এক-এগারো’ হবে, এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে। আমাদের অবস্থান ছিল—গণঅভ্যুত্থান জনগণের মধ্য থেকেই আসতে হবে এবং তা রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে এগোতে হবে।"

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সায়ের গোষ্ঠী ও সাদিক কায়েমরা অভ্যুত্থানের পর তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা নেতৃত্ব দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছেন। "এরা সার্ভেইল্যান্স, কল রেকর্ড ফাঁস, চরিত্র হনন, অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। কিন্তু মিথ্যার ভিত্তিতে কেউ দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না,"—বলেছেন তিনি।

ছাত্র রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়া

নাহিদের স্ট্যাটাসটি ইতোমধ্যে ছাত্ররাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ছাত্র রাজনীতিতে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বিভক্তি আরও প্রকাশ্য হয়ে উঠছে।

ইএইচ