সাদিক কায়েম

স্ক্রিনশটে নাম থাকা কেউ শিবিরের পদে ছিল না

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৫, ১২:৩৬ পিএম
স্ক্রিনশটে নাম থাকা কেউ শিবিরের পদে ছিল না

‘নিজেদের ছাত্রলীগ প্রমাণ করতে শিবিরের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করতেন’—এমন অভিযোগ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের। তার এই অভিযোগের বিরোধিতা করে পাল্টা পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি এবং সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম।

সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে আবু সাদিক কায়েম বলেন, “স্ক্রিনশটে যাদের নাম রয়েছে, তারা কেউই শিবিরের সঙ্গে যুক্ত নন। ৫ আগস্টের পর থেকে তাদের কাউকে শিবিরের কোনো কর্মসূচি বা দায়িত্বে দেখা যায়নি। সুতরাং ‘ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবির’ রক্ষায় আমি সহায়তা করেছি—এই ন্যারেটিভ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”

তিনি আরও লেখেন, “জুলাই বিপ্লবের পর দুটি বিষয় সামনে ছিল—এক, অপরাধের বিচার; দুই, বিচারের নামে নিরীহ কাউকে হয়রানি না করা। সে সময় অনেকেই জানান, তারা ছাত্রলীগে যুক্ত হলেও কোনো অপরাধে জড়িত ছিলেন না এবং তাদের নাম শুধু ব্যক্তিগত আক্রোশে মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে তথ্য যাচাই-বাছাই করা জরুরি হয়ে পড়ে।”

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কিছু অভিযোগ এনসিপির নেতা ও সংস্কার কমিশনের সদস্য আরমান হোসেন এবং মাহিনকে ফরওয়ার্ড করি। তাদের বলি—এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হতে, যেন নিরপরাধ কেউ ভিকটিম না হন।”

সাদিক কায়েম আরও দাবি করেন, মামলার তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের নেতারা পারস্পরিক আলোচনা ও যাচাইয়ের ভিত্তিতে কাজ করেছেন। আবদুল কাদের নিজেও সেই প্রক্রিয়ার অংশ ছিলেন। “কাদের নিজেই বলেছেন, মামলার তালিকাগুলো পারস্পরিক আলোচনা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ না হতো, তবে যাচাই-বাছাই কীভাবে সম্ভব হতো?”—যোগ করেন কায়েম।

তিনি আরও বলেন, “সাঈদী নামের এক ছেলেকে মামলা থেকে রক্ষার জন্য আমি বিভিন্ন জায়গায় কল করেছি—এই দাবিও মিথ্যা। সে অপরাধী, তাকে রক্ষার কোনো প্রশ্নই আসে না। একইভাবে মুহসিন হলের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, সেটিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাকে আমি চিনি না।”

আবদুল কাদেরের পোস্টে উল্লেখ ছিল, “চব্বিশ সালের সেপ্টেম্বরে মামলার পর শাহাদাত নামের একজনকে নিয়ে কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপর ওই পোস্টদাতার সঙ্গে শিবিরের তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েম যোগাযোগ করেন।”

এই প্রসঙ্গে কায়েম বলেন, “যদি আমি ফোন দিতেই চাইতাম, তা হলে মামলা হওয়ার আগেই দিতাম। মামলা হওয়ার পরে কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট করলে, তাকে ফোন দেওয়ার কোনো কারণ ছিল না।”

পোস্টে কায়েম আরও উল্লেখ করেন, “অনেকে আছেন যারা এক সময় শিবিরে যুক্ত ছিলেন, তামিরুল মিল্লাতে পড়ার সময় সংগঠনের কোনো আয়োজনে অংশ নিয়েছেন, পরবর্তীতে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিবিরবিরোধী অবস্থানে গিয়ে ছাত্রলীগ বা অন্য সংগঠনে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এখন শিবিরবিরোধী অবস্থান থেকে তারা শিবিরকেই দোষারোপ করছেন। এটি আত্মবিরোধী অবস্থান।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশট প্রকাশ নিয়ে তিনি বলেন, “যে চ্যাটের স্ক্রিনশট আবদুল কাদের প্রকাশ করেছেন, তা আসলে তার সঙ্গে নয়, এনসিপির অন্য সদস্যদের সঙ্গে হয়েছে। তৃতীয়পক্ষের ব্যক্তিগত আলাপ চুরি করে বিকৃতভাবে প্রকাশ করাটা রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে অবিশ্বাস ও অনাস্থার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “স্ক্রিনশট পলিটিক্স শুরু হলে এনসিপি-বাগছাসে থাকা অনেক ‘শিবিরবিরোধী’র রাজনীতি হুমকিতে পড়বে, যাদের অতীতেও শিবির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।”

ইএইচ