দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরসার কথা বলা যথেষ্ট সমস্যার -ইসফাক এলাহী
কূটনীতিক উদ্যোগগুলো এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে -মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম
তাদের শক্তি থাকলেও আমরা ইতোমধ্যে নষ্ট করতে সক্ষম হয়েছি -মো. মাহফুজুল ইসলাম
আরসা বান্দরবান অংশে রয়েছে, আধিপত্য বিস্তারে সন্ত্রাসী কার্যক্রম -ড. রাহমান নাসির উদ্দিন
আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি। জঙ্গি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কমান্ডার ইন চিফ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট যার নির্দেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় এ বাহিনীটি। উত্তপ্ত হয়ে পড়ে পুরো পরিস্থিতি। যার ফলে ওই দেশের সেনাবাহিনী রাখাইনে অভিযান ও রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের তীব্রতায় নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। নিজ দেশে স্বাধীনতা চাইতে ব্যর্থ হয়ে আরসার সমর্থকসহ বৃহৎ গোষ্ঠীটি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। গত ছয় বছরে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্যে ও বিভিন্ন সংগঠনের সাহায্যে চলছে তাদের জীবনযাপন।
কিন্তু এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর সাথেও সংঘর্ষে জড়ায়। অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায় বাংলাদেশের ভূয়কে পরিণত করে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে। গভীর রাত হলে চলে পাহাড়ে আরসার অস্ত্র প্রশিক্ষণ। আর দিনেরবেলায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে গ্রুপে গ্রুপে গোলাগুলি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুনোখুনি এখন নিত্যনৈমত্তিক। সব মিলিয়ে অস্থির হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাস্ক।
বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছেন, এক সময় রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বিষফোঁড়া হবে। সম্প্রতি বান্দরবানের তুমব্রু শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুড়ে যাওয়ার পর সেখানে মিলেছে বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গ। পাশাপাশি সেখানে ছিলো আরাকান গোল্ডেন হোটেল নামে রেস্টুরেন্টও। সুড়ঙ্গ, রেস্টুরেন্ট ব্যবহার হতো আরসার মাদক পাচার, সন্ত্রাসী কর্মকার। আরসার ২ জন দলত্যাগী সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। সেখানে ছিলো মোট ৭টি সুড়ঙ্গ। একটিতে থাকতেন আরসা প্রধান আতাউল্লাহ।
আরেকটিতে সেকেন্ড ইন কমান্ড ওস্তাদ খালেদ। সুড়ঙ্গগুলো দিয়ে সহজেই মিয়ানমারে আসা যাওয়া করা যেতো। র্যাবের সাহসী অভিযানে জঙ্গি তৎপরতা ভেস্তে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা যায় সুড়ঙ্গগুলো ব্যবহার হতো রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ আরসার প্রশিক্ষণ। অস্ত্র তৈরি, আত্মগোপন, মিটিংসহ নানা কর্মকা সেখানে সংগঠিত হতো।
গত দুদিন আগে আরসাপ্রধান একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। এতে করা হয়েছে আক্রোশ প্রকাশ।
র্যাবের অভিযানে যেসব আরসা বাহিনীর সদস্য আটক হয়েছেন, সেটিকে 'নাটক' বলে দাবি করা হয়েছে। ঢাকা থেকে সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে আরসার লোক বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে আতাউল্লাহ দাবি করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চোখ রাখা ব্যক্তিরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তারা বলছেন, আরসা ও রোহিঙ্গারা উগ্রবাদী। শুধু বাংলাদেশ- মিয়ানমারেই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ এতদঞ্চলের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। উগ্রবাদের কারণে পুরো অঞ্চল অস্থির ও সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশাল এই জনগোষ্ঠীতে আরসা, আল-ইয়াকিনসহ অন্তত ১৫টি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন সক্রিয়। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছয় বছরে রোহিঙ্গা ক্যাঙ্কে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছে। মামলা হয়েছে পাঁচ হাজারের অধিক। এসব মামলার বেশিরভাগই হয়েছে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে।
সম্প্রতি এ নিয়ে মুখ খুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই মরণ নেশা ইয়াবা কারবারে জড়িত। তারা অনেক অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে তাদের কাঁটাতারের বেড়ায় আবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করছি।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে অংশ নেয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
১০ ডিসেম্বর কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাঙ্কে রোহিঙ্গাদের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়। ওই ঘটনায় দুই রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এর কিছুদিন পর ২৬ ডিসেম্বর উখিয়ায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে ক্যাঙ্কের রোহিঙ্গা নেতা বা হেড মাঝি মোহাম্মদ হোসেন (৪০) নিহত হন। এরপর ৬ জানুয়ারি উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাঙ্কে গোলাগুলিতে মোহাম্মদ নুরুন্নবী (৪০) নামে এক রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হন। পরে তল্লাশি চালিয়ে একটি গ্রেনেড উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী।
১৮ জানুয়ারি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমরু সীমান্তে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা ও আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সদস্যদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গোলাগুলিতে হামিদুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ঘরবাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে পুড়ে যায় প্রায় ৫০০ ঘর। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযানে জঙ্গি সংগঠনের কয়েক নেতাকে আটকের পর দলটির প্রধান মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও ক্ষোভের নজর দিয়েছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বাংলাদেশের র্যাবের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
আরসা কমান্ডার জুনুনির ভিডিও বার্তায় র্যাব নিয়ে প্রশ্ন ও ১৮ জনকে হত্যার দাবি
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সীমান্তের তুমব্রুর শূন্যরেখা এলাকায় গত ১৮ জানুয়ারি বিবদমান দুই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসা ও আরএসওর সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন আরসা কমান্ডার ইন চিফ আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি। গত শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে মো. সৈয়দ আলম নামে ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন তিনি। ভিডিওতে আরসা কমান্ডার ইন চিফ দাবি করেছেন, ১৮ জানুয়ারির ওই সংঘর্ষে আরএসওর ১৮ জনের বেশি সদস্য নিহত হয়েছেন। তবে এ সময় আরসার কোনো সদস্য নিহত হননি বলে দাবি করেন জুনুনি।
এ সময় আরসাপ্রধান বলেন, 'গত ১৮ জানুয়ারি ভোরে সীমান্তের তুমব্রুর শূন্যরেখায় আমাদের রোহিঙ্গা ভাইবোনদের ওপর যে হামলা হয়েছে ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে— এটা নিয়ে আমি অনেক চিন্তিত ছিলাম। আসলে প্রকৃত ঘটনা জানানোর জন্য আমি ফেসবুক লাইভে এসেছি।
প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ওইদিন আরএসও সদস্যরা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কোনারপাড়া নোম্যান্সল্যান্ডের আশ্রয় শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের হুমকি ও মারধরের চেষ্টা করে। এই খবরে আমি এবং দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। তাদের কাছ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। তারপর তারা আমাদের সামনে রোহিঙ্গাদের মারধরের চেষ্টা করে। এ নিয়ে বাগবিতা হলে আরএসও সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। আমরাও জীবন রক্ষায় পাল্টা গুলি ছুড়ি।'
আরসাপ্রধান আরও বলেন, 'আরএসও সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা করবে- সেটা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে আসছিল। যেটি আমরা বুঝতে পারিনি। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র ছিল, যেটি আমাদের কাছে ছিল না। তবে তা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে আমার দলের সদস্যরা কৌশলে সারাদিন যুদ্ধ করে। যাতে আমরা আলহামদুলিল্লাহ সফল হয়েছি। তাদের তিনটি পরিকল্পনা ছিল। যেগুলো আমাদের কাছে ধরা পড়ে যায়। তারা মনে করেছিল, আমরা তাদের কাছে আসমর্পণ করব। কিন্তু আমরা করিনি। উল্টো আমরা তাদের কাবু করেছি।'
আরসাপ্রধান ভিডিও বার্তার এক পর্যায়ে উখিয়ায় র্যাবের হাতে আটক দুই জঙ্গির ঘটনাকে 'নাটক' বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, 'ঢাকা থেকে তাদের আটক করে এনে কুতুপালং ক্যাঙ্ক সংলগ্ন এলাকায় এনে আরসা সদস্যসহ আমাকে ফাঁসাতে র্যাব এ ঘটনা ঘটিয়েছে।'
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বিদেশি পিস্তল তার সামনে রেখে তার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী পাশে নিয়ে শূন্যরেখার হামলা ও র্যাবের দুই জঙ্গি আটক নিয়ে বর্ণনা দিচ্ছেন আরসাপ্রধান।
জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান ও বোমা বিশেষজ্ঞ আটকে স্বস্তি
নব্য জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাশেকুর রহমান ওরফে রনবীর। পার্বত্য চট্টগ্রামে ৫৫ জনসহ অনেককে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব মাঠে নেমে শনাক্ত করে রোহিঙ্গা ক্যাঙ্কে তার অবস্থান।
গতকাল সোমবার ভোরে রোহিঙ্গা ক্যাঙ্কে তার অবস্থান শনাক্তের পর র্যাবের অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যায় রনবীর এবং তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার। পরে পিছু নিয়ে গহীন পাহাড়ে গোলাগুলির পর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয় তাদের।
এ ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মূলত নব্য জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাশেকুর রহমান ওরফে রনবীর দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহ করছিল। এটিও তার একটি অসৎ উদ্দেশ্য হতে পারে। ক্যাঙ্কে তার সদস্য সংগ্রহ করা বা আগোপনে থাকায় আমরা সন্দেহ করছি এ জন্যই সে ক্যাঙ্কে আসতে পারে। এক পর্যায়ে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। হয়তো জিজ্ঞাসাবাদে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারব।
রোহিঙ্গা ক্যাঙ্ক থেকে আরসা কমান্ডার ডা. রফিকসহ আটক ৫
কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাঙ্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে আরসা কমান্ডারসহ পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন আরসা কমান্ডার ডা. রফিক (৫৪), সদস্য মোহাম্মদ রফিক (২০), নুরুল আমিন (৩৪), মোহাম্মদ রফিক (২১), খায়রুল আমিন (৩২)। তারা সবাই উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাঙ্কের বাসিন্দা। তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিনিয়র সহকারী পরিচালক) আবু সালাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'গভীর রাতে সন্ত্রাসীদের অবস্থানের খবরে এপিবিএন ও জেলা পুলিশসহ আমরা যৌথভাবে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাঙ্কে যৌথ অভিযান পরিচালনা করি। এতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন 'আরসা'র কমান্ডারসহ পাঁচ সদস্যকে আটক করা হয়। এর মধ্য গ্রেপ্তার ডা. রফিক আরসা সংগঠনের একটি গ্রুপের কমান্ডার। বাকিরা দলের চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহের দায়িত্বে ছিল। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক ও পুলিশ লাঞ্ছিতসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের মামলা দিয়ে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সম্প্রতি উখিয়ায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আটকও হচ্ছে। আমরা দেশের ভূখরে ভেতরে বিশৃঙ্খলাকারীদের আটকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, সাম্প্রতিক সময় আমরা পুলিশ, র্যাব, এবিপিএন, গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয়দের সমন্বয় উদ্যোগে আমরা সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করি। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন উগ্রবাদীকে আমরা আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এতে করে এখন ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়দের মধ্যে অনেক স্বস্তি প্রকাশ পেয়েছে। তবে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। আসলে মিয়ানমারের আশ্রিত রোহিঙ্গারা কিছু কিছু উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যেটি আমাদের 'ল'-এর মধ্যে পড়ে। আমি বলব, এখন তাদের শক্তি একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। অভিযানের মাধ্যমে আমরা সেটি প্রমাণ পেয়েছি। তাদের যদি কিছু শক্তি থেকেও থাকে সেই শক্তির ইস্যু আমরা ইতোমধ্যে নষ্ট করতে সক্ষম হয়েছি অভিযানের মাধ্যমে। যারা উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়াবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক কনস্যুলেট প্রধান সিটওয়ে মিয়ানমার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, কফি আনান কমিশনের রিপোর্টে দেখা যাবে মিয়ানমার, বিশেষ করে আরাকান অঞ্চলের ওপর যে রিপোর্টটি দিয়েছে: সেখানে বলা হয়েছে— যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই রোহিঙ্গাদের বিষয়টি দ্রুত এবং যথাযথভাবে বিবেচনায় না আনে বা সমাধান না করে, তাহলে এ অঞ্চলটি উগ্রবাদের একটি উর্বর ভূমি হিসেবে পরিগণিত হবে। যার কারণে উগ্রবাদ শুধু বাংলাদেশ-মিয়ানমারেই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ এতদঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। উগ্রবাদের কারণে পুরো অঞ্চল অস্থির ও সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, এখনো দু-একজন ধরা পড়ছে মাত্র। এটি শুধুমাত্র আলামত। এটি হয়তো ভবিষ্যতে আরও কঠিন ও কঠোর আগ্নেয়গিরি হিসেবে দেখা দেবে। যদি ১১ লাখ রোহিঙ্গা দীর্ঘ সময় গুবিদ্ধ জীবনযাপন করতে থাকে, তবে তা আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের আগে যেমনটি ঘুমিয়ে থাকে, ঠিক তেমন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে এখনো একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারিনি। কূটনৈতিক উদ্যোগগুলো এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইসফাক এলাহী আমার সংবাদকে বলেন, আসলে এই রোহিঙ্গাপ্রধান আতাউল্লাহ কোথায় থাকেন? তিনি আসলেই পাহাড়ে থাকেন, এটি আমরা সবাই জানি। তিনি কিন্তু বাংলাদেশ ভূখনেন। যদি আমাদের সীমানার মধ্যে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া যেত। এখন যেহেতু গোপনীয় যায়গায় বসে আমাদের বাহিনী নিয়ে কথা বলছেন, এতে আমাদের যথেষ্ট সমস্যা তৈরি হবে। দেশের বিষয়ে, আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তার কথা বলা অবশ্যই অনুচিত। এখনই তাদের সব কর্মকাণ্ড অপসারণে আমাদের র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা গবেষক অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন বলেছেন, আমি রোহিঙ্গাদের সাথে বাস করি। কাজ করি। এটা নিয়ে গবেষণা করি। এখানে সুড়ঙ্গ আছে আমরা জানতাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যারা জানার কথা তারা কতটুকু জানেন। জানলে তারা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এখন বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। ৩১ টা ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবন অংশে যে ক্যাম্পটা রয়েছে। সেখানে আরসা এবং আরএসও অবস্থান করছেন। ২০১৬ সালে আরসা বাংলাদেশে প্রথম আসে। আর এটি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী সংগঠন। এরা এখন নিজদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মুহিবুল্লাহকে মেরে ফেলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এরা এই সন্ত্রাসী সংগঠন ধারা হয়েছে। এখন এদের প্রতি আমাদের প্রশাসন নজর দিয়েছেন এটি অবশ্যই ভালো বিষয়।