‘রিকশা না চালালে উপোস থাকতে হয়’

মাদারীপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২, ০২:১৭ এএম
‘রিকশা না চালালে উপোস থাকতে হয়’

অশীতিপর বৃদ্ধ আবদুল লতিফ। সংসারের চাকা ঘোরাতে ৪০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন। তবে বয়সের ভারে এখন আর ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারেন না। কিন্তু রিকশা না চালালেও সংসার চলে না। স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে না খেয়ে থাকতে হয়। আবদুল লতিফ মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বালিগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা। তার সাত মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

এরমধ্যে ছয় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়ে প্রতিবন্ধী এবং ছেলে সবার ছোট। তিনি মাদারীপুর শহরের আশপাশের এলাকায় রিকশা চালান। বয়সের কারণে খুব বেশি দূরের ভাড়ার যাত্রী নিতে পারেন না। আবার ধীরগতি আর চোখে কম দেখার কারণে অনেকেই তার রিকশা ভাড়ায় নিতে চান না।

আবদুল লতিফ বেপারী বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। আগে শক্তি ছিল ভালো করে রিকশা চালাতে পারতাম। কিন্তু এখন আর শরীর চলে না। রিকশা চালিয়ে সারা দিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে ওষুধ কিনব, নাকি সংসার চালাব? সাত মেয়ের মধ্যে ছয়জনকে রিকশা চালিয়ে বিয়ে দিয়েছি। এক মেয়ে প্রতিবন্ধী আর ছেলে আজিজুল হাকিমের বয়স কম। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে নামতে হয় রিকশা চালাতে।

তিনি আরও বলেন, অনেক সময় এক দিন রিকশা চালালে পরদিন অসুস্থতার কারণে পারি না। সারা শরীর এবং হাড়ে ব্যথা করে। কিন্তু রিকশা না চালিয়ে উপায় নেই। বাড়িতে চাল না কিনলে ছেলেমেয়ে-স্ত্রী না খেয়ে থাকে।

তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর ঠিকমতো চোখে দেখি না। চশমাটাও ঠিকমতো কাজ করে না। শেষ বয়সে আমি একটু বিশ্রাম করে নামাজ-রোজা করে পার করে দিতে চাই। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করছি।

আবদুল লতিফ বেপারী আক্ষেপ করে বলেন, আমি বুড়ো বলে অনেকে আমার রিকশায় উঠতে চান না। আবার অনেক যাত্রী তাড়াতাড়ি বা জোরে চালাতে বললে পারি না। অনেক যাত্রী তখন রাগ করেন, অনেক সময় রিকশা থেকে নেমেও যান। তখন আমার অনেক কষ্ট লাগে। আমি তো সব যাত্রীকে তাড়াতাড়ি নিরাপদ গন্তব্যে পৌঁছে দিতেই চাই, কিন্তু বয়সের কারণে পারি না।

অপর এক রিকশাচালক মান্নান সরদার বলেন, আমরা যুবক মানুষ, তাও ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারি না। আর আবদুল লতিফ বেপারী ৮০ বছর বয়সে কীভাবে রিকশা চালাবেন? রিকশা চালাতে গেলে হাত-পা কাঁপে। কেউ উঠতে চায় না তার রিকশায়। এক দিন চালালে তিন দিন চালাতে পারেন না। সরকার এবং বিত্তবানরা যদি তার পাশে থাকেন, তাহলে তিনি অভাব থেকে একটু পরিত্রাণ পেতে পারেন। আরেক রিকশাচালক সাইদুল শরিফ বলেন, সরকার তো অনেক লোককে অনেক কিছু দেয়। এই বৃদ্ধকে যদি একটি দোকান করে দেয়া যেত, তাহলে ছেলেমেয়ে-স্ত্রীর মুখে দু’মুঠো খাবার দিতে পারতেন। এ বয়সে তার পক্ষে রিকশা চালানো কঠিন। সরকারের কাছে আমাদেরও দাবি, সরকার যেন তাকে একটা স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেয়।

বালিগ্রাম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফারুক চৌকিদার বলেন, আমরা তাকে অবশ্যই সাহায্য-সহযোগিতা করব। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে যতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা আসে, আমরা তাকে দেয়ার চেষ্টা করব।

ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন ইয়াছমিন বলেন, এই বৃদ্ধের বিষয়ে প্রথম শুনলাম। তিনি যদি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের কাছে এলে তাকে অবশ্যই সরকারের পক্ষ থেকে একটি স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।