- শয্যার তুলনায় তিনগুণ বেশি রোগী
- ঢাকার বাইরের মেডিকেলগুলোতে একই সংকট
- জনবল নেই, অনেক বেড চালু হয়নি
- যন্ত্রপাতির বড় অংশই অকেজো
- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে ১২ হাজার চিকিৎসকের ঘাটতি
রোগীর ভিড়ে ঠাঁই নেই সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে। কোনো হাসপাতালে শয্যার চেয়ে তিনগুণের বেশি রোগী, কোথাও আবার মেঝে, বারান্দা বা করিডরই হয়ে উঠেছে ওয়ার্ডের বিকল্প।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামপ্রতিক তথ্য বলছে, দেশের অধিকাংশ সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যার চেয়ে গড়ে দেড় থেকে দুইগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকছে।
ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিলেট, খুলনা- সবখানেই একই অবস্থা। বিশেষ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ১ হাজার হলেও প্রতিদিন ভর্তি থাকছে চার হাজারের মতো রোগী। অর্থাৎ শয্যা পূরণের হার ২৩৪ শতাংশের বেশি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অবস্থাও একইরকম। বছরে গড়ে ১০-১২ লাখ রোগী সেখানে চিকিৎসা নেয়। শয্যার তুলনায় রোগী থাকে দেড় থেকে দুইগুণ বেশি। কিন্তু আইসিইউ, টেস্ট মেশিন, পর্যাপ্ত নার্স ও টেকনিশিয়ানের ঘাটতি সেখানে প্রকট।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল (শজিমেক) হাসপাতালেও সংকট চরম। ১২০০ শয্যার স্থাপনা থাকলেও চালু আছে ৫০০-৬০০। গড়ে প্রতিদিন ভর্তি থাকছে ১২০০ জনের বেশি রোগী।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শয্যা ৯০০, কিন্তু রোগী থাকে তিন-চার হাজার। চিকিৎসা নিতে আসেন শুধু সিলেট না, পার্শ্ববর্তী জেলার রোগীরাও। বাস্তবে সেখানে সুযোগ-সুবিধা আছে মাত্র ৫০০ বেডের জন্য।
খুলনা, কুমিল্লা, দিনাজপুর, রাজশাহী, ফরিদপুরসহ অন্যান্য সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেও শয্যা পূরণের হার ১২০ থেকে ১৯৫ শতাংশের মধ্যে। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন হিমশিম খাচ্ছে রোগী সামলাতে।
একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “রোগী বেশি হওয়া সমস্যা নয়, সমস্যা হলো- আমরা সেই চাপ সামলাতে পারছি না। চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেরাই কখনো কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়ি।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, “অনেক হাসপাতালে শয্যা আছে, কিন্তু লোকবল নেই। নতুন করে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য বিশেষ বিসিএস নেয়া হবে। ইতোমধ্যে নিয়োগ চলছেও।”
তিনি জানান, দেশে এখনো স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। ধাপে ধাপে তা পূরণে কাজ চলছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতির সংকটও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কিছু জায়গায় মেরামত না করেই ফেলে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। রোগীর চাপে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ওয়ার্ড স্যানিটেশন, খাবার ও রোগী সহায়ক সেবাও ভেঙে পড়ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত না হলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর থেকে চাপ কমানো যাবে না। পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ না দিলে এই সংকট আরও বাড়বে।