আ.লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শুক্রবার

দ্বাদশ ভোট দুর্ভিক্ষের বার্তা

রফিকুল ইসলাম প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২২, ১২:৩৪ এএম
দ্বাদশ ভোট দুর্ভিক্ষের বার্তা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতির মাঠে দলীয় নেতাকর্মীদের করণীয় নির্ধারণ করতে আগামী শুক্রবার কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ও মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের তারিখও নির্ধারণ করা হবে। দেশের মানুষের কল্যাণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা, দলীয় কোন্দল ও দ্বন্দ্ব নিরসন এবং দলীয় এমপিদের আলমনামা তৈরির নির্দেশনাও আসবে বৈঠক থেকে।

এছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন কিভাবে মেকাবিলা করতে হবে— বৈঠক থেকে সে বিষয়ে চূড়ান্ত রূপরেখা দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বিষয়টি আমার  সংবাদকে নিশ্চিত করেছে।

আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, মোট ১১ অ্যাজেন্ডা নিয়ে আগামী ২৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মাঠের রাজনীতিতে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দল মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণ এবং দল ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন তারিখ নির্ধারণ করতে এবারের বৈঠককে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ক্ষমতাসীন দলটি। আগামী বছর দুর্ভিক্ষের কথা মাথায় রেখে দলের জাতীয় কাউন্সিল কাটছাঁট করা হচ্ছে দলটির জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। উৎসবমুখর পরিবেশের চিন্তা রাখা হলেও এ সম্মেলনে থাকবে না কোনো সাজসজ্জা। একই সাথে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পুলিশ প্রশাসন ও বিভিন্ন ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে কৌশল নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে দলটির কার্যানির্বাহী সংসদের বৈঠকে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংযুক্তে রেখে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হতে পারে। এ ছাড়া সংসদ নিবাচনের আগে দেশীয় রাজনীতিতে যেন কোনো ধরনের সংঘর্ষ ও রক্তপাত পরিস্থিতি না হয় সে জন্যও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি— দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের জাতীয় কাউন্সিলকে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ফলে আগামী ২৮ অক্টোবরের দলের কার্যনির্বাহী সংসদের প্রধান অ্যাজেন্ডা থাকবে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের বিষয়। বিশেষ করে বৈঠক থেকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, ঘোষণাপত্র, দপ্তর, প্রচার-প্রকাশনা, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা, মঞ্চ ও সাজসজ্জা, গঠনতন্ত্র, সাংস্কৃতিক, খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি গঠন করে দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দিবস-ভিত্তিক অনুষ্ঠান ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস, ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস নিয়ে বিস্তর আলোচনা হবে। বৈঠকে গুরুত্ব পাবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বিশেষ করে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বের বিষয়ে দলীয় সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা নেতারা। ফলে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখও নির্ধারণ হতে পারে বৈঠকে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ও সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের একগুয়েমি রাজনীতির কারণে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতী লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দেবেন আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনা। দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন একমঞ্চে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলেও জানা গেছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও দেশের মানুষের কল্যাণে আর্থসামাজিক অবস্থান, অগ্রগতি, পরিবতন ও পরিবর্ধনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার কী হবে— তা নিয়ে বিস্তার আলোচনা হবে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের  বৈঠকে।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে তুলে ধরবে সরকারের নানামুখী ত্রুটি। মাঠের রাজনীতিতে বিএনপিসহ বিরোধীদের কিভাবে মোকাবিলা করা হবে? মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের করণীয় কি? সরকারের উন্নয়নচিত্র কিভাবে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে— সে বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় এমপিদের অবস্থান কি? কোথায় কোথায় এমপিদের সাথে দলীয় নেতাকর্মীদের দূরত্ব রয়েছে? তৃণমূলে দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের কারণ কি? সে সকল বিষয়ে তালিকা তৈরির সর্বশেষ কি অবস্থা? তা নিয়ে বৈঠকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে সাংগঠনিক রিপোর্ট চাইবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক আমার সংবাদকে বলেন, ‘৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসসহ দিবস-ভিত্তিক অনুষ্ঠানগুলো এবার কার্যানির্বাহী সংসদের বৈঠকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে বিস্তার আলোচনা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতি ও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বিস্তার আলোচনা হবে। আগামী বছর দুর্ভিক্ষের শঙ্কা করা হচ্ছে, বৈঠকে সে বিষয়ে গুরুত্ব পাবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, দুর্ভিক্ষের বিষয়ে অবশ্যই গুরুত্ব পাবে। যদি দুর্ভিক্ষ হয়- পার্টি আওয়ামী লীগের করণীয় কি? কিভাবে আওয়ামী লীগ দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করবে? সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের নিকনির্দেশনা দেবেন।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘প্রতি বছর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলর উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে হয়। কিন্তু এবার সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগ যে সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করেছে— সে বিবেচনায় এবার সম্মেলন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বৈঠক থেকে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হবে। সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন বিষয়ে সুনিদিষ্ট সিদ্ধান্ত আশার সম্ভাবনা আছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের মানুষের কল্যাণ, অর্থসামাজিক অবস্থান, অগ্রগতি, পরিবতন ও পরিবর্ধনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার কী হবে। তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হবে।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিভিন্ন দিবস, সাংগঠনিক বিষয়, জাতীয় কাউন্সিল, কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ, সহযোগী সংগঠনের সার্বিক পরিস্থিতি ও মাঠের রাজনীতির বিষয়গুলো নিয়েই এবারের কার্যনির্বাহী সংসদের আলোচনা হবে।’