কনটেইনার ডিপোতে অবৈধ ফিলিং স্টেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২, ০১:৩৫ এএম
কনটেইনার ডিপোতে অবৈধ ফিলিং স্টেশন

বিধি-বিধান ছাড়াই কনটেইনার ডিপোতে অবৈধ ফিলিং স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। অথচ জ্বালানি সরবরাহে পাম্প স্থাপন করতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অনুমতি বাধ্যতামূলক। তারপর বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির যেকোনো একটির কাছ থেকে ডিলারশিপ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু অন্তত ১০টি কনটেইনার ডিপোতে ফিলিং স্টেশন স্থাপনে ওসব নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিপিসির রেকর্ড অনুযায়ী কনটেইনার ডিপোগুলোতে বৈধ কোনো ফিলিং স্টেশন নেই। ফলে বৈধভাবে ওসব স্টেশনে কোনো বিপণন কোম্পানি জ্বালানি সরবরাহ করে না। বিপিসির বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিলারশিপ ছাড়াই ১০ কনটেইনার ডিপোতে ফিলিং স্টেশন স্থাপিত হয়েছে। আর ওসব ফিলিং স্টেশনে কিভাবে জ্বালানি যায় তাও জানে না বিপিসি।

চলতি বছরের জুন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর দেখা যায় ওই ডিপোতে প্রবেশ মুখের কাছে একটি ফিলিং স্টেশন ছিল। ওই ফিলিং স্টেশন থেকে কাভার্ড ভ্যান, লরি ও বিভিন্ন যানবাহনে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়ে আসছিল। সূত্র জানায়, শুধু বিএম কনটেইনার ডিপোতে নয়, ওই রকম বহু ডিপোতে ফিলিং স্টেশন করা হয়েছে।

তবে ওসব ফিলিং স্টেশন স্থাপনে বিপিসির কোনো অনাপত্তি এবং বিপণন কোম্পানিগুলোর বৈধ কোনো ডিলারশিপ নেয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী বিপিসি থেকে অনাপত্তি নেয়ার পর ফিলিং স্টেশন স্থাপনে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ‘এম’ ফরমে একটি আবেদন করতে হয়।

তারপর জেলা প্রশাসক কার্যালয় ওই আবেদনের একটি কপি ফায়ার সার্ভিস, একটি পরিবেশ অধিদপ্তর, একটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ, একটি পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠায়। ওসব প্রতিষ্ঠান থেকে অনাপত্তিপত্র, ছাড়পত্র দেয়ার পর জেলা প্রশাসক অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর দেয়। আরো পরে বিস্ফোরক অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স পাওয়ার পর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ফিলিং স্টেশন স্থাপন করতে পারে। কিন্তু বহু কনটেইনার ডিপোতে ফিলিং স্টেশন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ওসব নিয়ম মানা হয়নি। ফলে ওসব ফিলিং স্টেশনে সরকারের আমদানি করা জ্বালানি কিভাবে যায় তা বিপিসির জানা নেই।

সূত্র আরো জানায়, কনটেইনার ডিপোগুলো বিপিসির অধীনে নয়। ফলে চাইলে বিপিসি সেগুলোতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ওসব ডিপোর সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় ভিত্তিক একটি কমিটি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সে জন্য বিপিসির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে বিপিসির পক্ষ থেকে কনটেইনার ডিপো পরিদর্শন করা যাচ্ছে না। আর নিয়মানুযায়ী ওসব ফিলিং স্টেশনে তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি থেকে জ্বালানি নেয়ার কথা। কিন্তু কেউ বিপিসির ওই তিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তেল গ্রহণ করে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কিভাবে ওসব ফিলিং স্টেশন তেল নিচ্ছে তা খতিয়ে দেখার।

ওসব বিষয় নিয়ে বিপিসির পক্ষ ডিপো পরিদর্শন করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। বর্তমানে কয়টি কনটেইনার ডিপোতে ওই ধরনের ফিলিং স্টেশন রয়েছে তার কোনো রেকর্ড নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে, চট্টগ্রামে ১০ কনটেইনার ডিপোতে অবৈধ ফিলিং স্টেশন রয়েছে। ওসব স্টেশনের জন্য বিপিসির কাছ থেকে কোনো অনাপত্তিপত্র নেয়া হয়নি।

এসব বিষয়ে বিপিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিএম কনটেইনার ডিপোতে ফিলিং স্টেশন থাকার বিষয়টি জানার পর আরো বেশ কয়েকটি ডিপোতে ওই ধরনের ফিলিং স্টেশন প্রতিষ্ঠার কথা জানা যায়। কিন্তু বিপিসির পক্ষ থেকে ওসবের কোনোটিরই অনুমোদন দেয়া হয়নি। ওই বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করার জন্য বিপিসির পক্ষে মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।