কুমিল্লার সমাবেশে মির্জা ফখরুল

ভাঙা নৌকায় উঠব না

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২, ০২:৫৮ এএম
ভাঙা নৌকায় উঠব না

সব রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের  আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। 

তিনি বলেন, অবৈধ প্রধানমন্ত্রী, জোর করে দুবার নির্বাচন করেছেন।’১৪ সালে কেউ ভোট দিতে যায়নি, নির্বাচনের আগে তাদের ১৫৪ জন জয়ী হয়ে গেছেন। ’১৮-তে রাতেই ভোট শেষ। তিনি নাকি আবার নির্বাচন করবেন। আপনারা কি আবার তাদের ভোট দেবেন? তারাও জানে, ভোট হলে জামানত থাকবে না। তাই আবার আগের কৌশলে যেতে চায়। কিন্তু তা হবে না। আপনাদের সাথে নিয়ে আমরা আরো দুর্বার আন্দোলন তৈরি করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব। এরপর জনগণের একটি সরকার আমরা গঠন করব।

গতকাল শনিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য মির্জা ফখরুল এসব কথা 
বলেন।

 তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যশোরে জনসভা করেছেন, রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে সেখানে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন, বলেছেন আবার নৌকায় ভোট দেন। এ কথা শুনে আমার আব্বাস উদ্দিনের গানের কথা মনে পড়ে গেছে ‘আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না’। এ দেশের মানুষও এখন সেই গান গাইতে শুরু করেছে। আমরাও আর ভাঙা নৌকায় উঠব না। ভুলে যান, দেশের মানুষ আর চায় না। সময় থাকতে মানে মানে চলে যান। না হয় পরিণতি ভালো হবে না।

তিনি বলেন, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে জীবন দিতে হচ্ছে। তারা সরাসরি ভোট দিতে চায় না। কারণ ভোট হলে জামানত থাকবে না। এ জন্য ফন্দি ফিকির শুরু করেছে। তারা থাকবে ক্ষমতায়, তারা মন্ত্রী-এমপি থাকবে, আর আমরা ভোট দেবে। এ জন্য আবার সমস্যা শুরু করেছে। ফের গায়েবি মামলা হয়েছে। পত্রিকায় হেডলাইন হচ্ছে। বলা হচ্ছে ককটেল বিস্ফোরণের কথা; কিন্তু পাবলিক বলছে আমরা শুনিনি। তাদের গণ্ডারের মতো চামড়া হয়েছে। বেশরম, বেহায়া হয়ে গেছে সরকার।

তিনি বলেন, ঢাকার গণসমাবেশ নস্যাৎ করতে আগে থেকেই মামলা দেয়া হয়েছে। এসব করে আমাদের সমাবেশ বন্ধ করা যায়নি, যাবেও না। ঢাকা-রাজশাহীতেও সমাবেশ বন্ধ করা যাবে না। আমাদের কথা পরিষ্কার। আমরা অধিকার আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। অগ্নিসন্ত্রাস করে আপনারা বিরোধী দল— বিএনপির নাম দিচ্ছেন। চট্টগ্রামেও ছাত্রলীগের আগুন সন্ত্রাসের পর বিএনপির নামে মামলা দেয়া হয়েছে। কুমিল্লায়ও একই ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লার হিরু-হুমায়ূনকে গুম করা হয়েছে। তাদের সন্তানেরা বাবাকে পায় না। সন্তানদের চোখ ছল ছল করে, আমরা সান্ত্বনা দিতে পারি না। সিলেটের ইলিয়াসকে গুম করা হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রিজার্ভ কি আমরা চিবিয়ে খেয়েছি? আমি বলি— রিজার্ভ আপনারা চিবিয়ে খাননি, গিলেই খেয়ে ফেলেছেন। সব খেয়ে ফেলেছেন, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। বিদ্যুতের জন্য ৭৮ হাজার কোটি টাকা তারা এক বছরে পাচার করেছে। বিদ্যুতের দাম কত বাড়িয়েছে? দাম দিতে দিতে আমরা দিশাহারা হয়ে গেছি। অকটেন, ডিজেল পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। সব কিছুর বাদম বেড়ছে। আয় বাড়েনি; কিন্তু ওদের আয় বাড়ে। তারা ফুলে ফেঁপে যাচ্ছে। একজনের চারটি বাড়ি থেকে ১০টি বাড়ি হয়েছে। আমাদের সাধারণ মানুষেরা দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না। আমাদের মা-বোনেরা তাদের সন্তানকে একটি ডিমও খাওয়াতে পারছেন না।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নেতা আট হাজার মাইল দূর থেকে ডাক দিয়েছেন ট্যাক-ব্যাক বাংলাদেশ। কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম। যে স্বপ্ন দেখে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আমাদের দেশের মানুষ সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে, সেই বাংলাদেশ। কিন্তু এই সরকার কোথাও কিছু রাখেনি। ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে দেয়। এখানের উপস্থিত আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে ৫০-৬০টি করে মামলা রয়েছে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে, তিনি দেশে আসতে পারছেন না। একমাত্র খালেদা জিয়ার মাধ্যমে দেশের পরিবর্তন সম্ভব। আমরা সব দল নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সহসম্পাদক এবং সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়াসহ কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগের শীর্ষ নেতারা। গণসমাবেশ পরিচালনা করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী আবু ও সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু।

মঞ্চে ঠাঁই মেলেনি বহিষ্কৃত সাক্কু-কায়সারের : কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু গণসমাবেশস্থলে উপস্থিত হলেও মঞ্চে ঠাঁই মেলেনি। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে তাকে মাঠের পূর্বপাশে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া স্বেচ্ছাসেবক দলের কুমিল্লা মহানগর সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারও সমর্থকদের সারিতে বহর নিয়ে বসতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, দল আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি দল ছাড়িনি। ৪৪ বছর ধরে বিএনপি করছি। আমি সমাবেশ শুরু হওয়ার বহু আগে থেকে প্রচারণা চালিয়েছি। দলের একজন কর্মী হিসেবে সকাল ৯টায় সমাবেশস্থলের হাজির হয়েছি। নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, কোন পরিস্থিতিতে নির্বাচন করেছি আপনারা সবাই জানেন। যা করেছি দেশের মানুষের জন্যই করেছি। আজীবন দলের কর্মী হয়ে থাকতে চাই। তাই সকাল ৮টায় সমাবেশস্থলে এসে উপস্থিত হয়েছি।