হজের খরচ আরও বাড়বে চলতি প্যাকেজেই নিবন্ধনের অনুরোধ

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৩, ১১:৩৭ এএম
হজের খরচ আরও বাড়বে চলতি প্যাকেজেই নিবন্ধনের অনুরোধ
  • হজ প্যাকেজ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না : হাইকোর্ট
  • বিমানভাড়া কমিয়ে হজ প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণের দাবি

হারাম শরীফের নিকটবর্তী বিভিন্ন হোটেল ভেঙে ফেলায় এ বছর অধিক ব্যয়ে হোটেল ভাড়া করায় হজের খরচ বেড়েছে জানিয়ে চলতি প্যাকেজে নিবন্ধনের অনুরোধ করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী বছরগুলোতে হজ প্যাকেজের মূল্য আরও বাড়বে।

গতকাল রোববার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও সৌদি আরবের হারাম শরীফের নিকটবর্তী বিভিন্ন হোটেল ভেঙে ফেলায় এ বছর হোটেলের ভাড়া নেয়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং অধিক পরিমাণ অর্থে হোটেল ভাড়া করা হচ্ছে।  ‘সার্বিক বিবেচনায় বিভিন্ন কারণে এ বছরের হজ প্যাকেজকে কমকৃত প্যাকেজ হিসেবে ধরা যায় এবং সেই বিবেচনায় একই ধারাবাহিকতায় বলা যায় যে, আগামী বছরগুলোতে হজ প্যাকেজের মূল্য আরও বাড়বে।

কারণ ভেঙে ফেলা বাড়ি-হোটেলগুলো আবার গড়ে তুলতে আরও দু-তিন বছর লাগবে।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ বছরের ঘোষিত হজ প্যাকেজই সর্বনিম্ন হিসেবে বিবেচনা করা যায়। সেই বিবেচনায় হজযাত্রীদের এবারের হজ প্যাকেজে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। হজের খরচ এবার বেশি হওয়ায় হজযাত্রী নিবন্ধনের সংখ্যাও কম। কয়েক দফা বাড়িয়ে সবশেষ আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় দেয়া হয়েছে। বাড়ি ভাড়া এবং বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ পড়বে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গতবারের চেয়ে খরচ এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৪ টাকা বেড়েছে। গতবার যা ছিল পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্য বছরগুলোতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি প্যাকেজে হজযাত্রীরা অংশ নিতে পারতেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবার মাত্র একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। গত বছর সরকারি প্যাকেজ-১ এর তুলনায় খরচ বেড়েছে ৯৬ হাজার ৬৭৮। প্যাকেজ-২ এর তুলনায় এক লাখ ৬১ হাজার ৮৬৮ টাকা বেড়েছে। গত বছর প্যাকেজ-১ এ পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৩৪০ টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ পাঁচ লাখ ২১ হাজার ১৫০ টাকা ছিল।

সরকারি খরচের মধ্যে বিমান ভাড়া বাবদ হজযাত্রীদের এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা খরচ হবে। তবে রাজকীয় সৌদি সরকার হজের সেবার খরচ কমানোর কারণে প্যাকেজের মধ্যে ১১ হাজার ৭২৫ টাকা কমানো হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১২ বছরের নিচের ব্যক্তিদের হজ করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সৌদি সরকার। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। ৯ জানুয়ারি সৌদি সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করার সুযোগ পাবেন।

হজ প্যাকেজ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না —হাইকোর্ট : সরকার ঘোষিত উচ্চমূল্যের হজ প্যাকেজ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

গত ১২ মার্চ হজের প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে পুনরায় প্যাকেজ ঘোষণা করতে রিট দায়ের করা হয়। রিটে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও যেকোনো এয়ারলাইন্সে টিকিট কেটে হজে যাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান এ রিট দায়ের করেন। ধর্ম সচিব, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

বিমানভাড়া কমিয়ে হজ প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণের দাবি : অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমিয়ে হজ প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

গতকাল রোববার হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। হাব সভাপতি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ‘অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া পুনর্নির্ধারণের আবেদন’ শিরোনামে লেখা চিঠিতে বলা হয়, যেসব হজযাত্রী ২০২৩ সালে হজ করবেন তাদের অধিকাংশই ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রাক-নিবন্ধিত হয়ে তখনকার করা আর্থিক বাজেটে হজে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন। কিন্তু হজযাত্রীদের অতিরিক্ত বিমান ভাড়াসহ হজের খরচ বাড়ায় এরই মধ্যে হজযাত্রীসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এ বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বাস্তবতার নিরিখে অনেক বেশি এবং অযৌক্তিক। এ কারণে ঘোষিত হজ প্যাকেজ সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হয়নি এবং সমালোচিত হয়েছে। যেহেতু বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ফলে তাদের একক কর্তৃত্বে ভাড়া নির্ধারণ যথার্থ হয়নি। এতে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। মূলত, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জেট ফুয়েলের মূল্যবৃদ্ধি এবং করোনার কারণে বিমানের কিছু আসন খালি রেখে ফ্লাইট পরিচালনার কারণে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল।

তবে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের প্রত্যাশা ছিল করোনা-পরবর্তী বিমান ভাড়া কমতে পারে। ‘বর্তমানে জেট ফুয়েলের দাম বাড়েনি, সৌদি আরব কোনো নতুন চার্জ আরোপ করেনি, বিমানের খালি আসন রেখেও হজযাত্রী পরিবহন করতে হবে না। অথচ হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ৫৭ হাজার ৭৯৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। যা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অযৌক্তিক মনে করেন এবং তাদের মধ্যে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমিয়ে হজ প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণ করতে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।