ছুটির দিনে জমে ঈদবাজার

মো. নাঈমুল হক প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৩, ০৫:২২ এএম
ছুটির দিনে জমে ঈদবাজার
  • ম্যাচিং এবং একই রঙের কাপড়ে আগ্রহ বেশি
  •  বাজারে নারী ক্রেতার উপস্থিতি বেশি
  •  বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা হয়ে এসেছেন অনেকেই
  •  নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের আগ্রহ ফুটপাত

 রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে ঈদবাজার। ফুটপাত, বিপণিবিতান, শপিংমল, সুপার মার্কেট সর্বত্রই রয়েছে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। যদিও ঈদের বাকি আরও দুই সপ্তাহ। মাস শেষে এরই মধ্যে বেতন পেয়েছেন চাকরিজীবীরা। তাইতো প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ঈদবাজারে। তবে বাজারে পুরুষের তুলনায় নারী ক্রেতার উপস্থিতি বেশি। মূল্যস্ফীতির কারণে এ বছর রয়েছে বাড়তি দাম। এরপরও কেনাকাটায় এর প্রভাব খুবই কম। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রেতাদের রুচিতে এসেছে বেশ পরিবর্তন। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের আগ্রহ ফুটপাতের কেনাকাটায়। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন- মধ্যবিত্তরা ছুটছেন বিভিন্ন শপিংমল ও সুপার মার্কেটে। 

এছাড়াও রাজধানীর বাইরে থেকে কেনাকাটা ও দর্শনার্থী হিসেবে এসেছেন অনেকেই। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, গাউসিয়া, নূর ম্যানশন, চন্দ্রিমা মার্কেট, বসুন্ধরা শপিং সেন্টার, মোতালেব প্লাজা, রাজধানী মার্কেট, গুলিস্তান বাজার ঘুরে দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের প্রচুর আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। অন্য দিনগুলোর মতো বিক্রেতাদের হাঁকডাক নেই। প্রতিটি দোকানেবিক্রেতাদের রয়েছে ব্যস্ততা। নির্দিষ্ট দামের দ্বিগুণ বা তারও কিছু বেশি দামও হাঁকছেন বিক্রেতারা। ফলে দরদাম না করলেই ঠকতে হচ্ছে ক্রেতাদের। অনেক ক্রেতার অভিযোগ, অর্ধেক থেকে দ্বিগুণ লাভ করছেন বিক্রেতারা। মাতুয়াইল থেকে রাজধানী সুপার মার্কেটে এসেছেন সুমাইয়া বেগম। তিনি বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও কেনাকাটা করছি রাজধানী সুপার মার্কেটে। স্বামী-সন্তানসহ প্রতি বছর একসঙ্গেই মার্কেট করি। ছুটির দিন ছাড়া একসঙ্গে আসা সম্ভব হয় না। এ বছর দাম একটু বেশি। এরপরও না কিনে তো আর পারা যায় না।

নিউমার্কেট এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে মার্কেট করতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, শুক্রবার সব বন্ধুরা একত্রিত হতে পারি। অন্য দিনগুলোতে টিউশন, ক্লাসের ব্যস্ততা থাকে। তাই বাড়িতে যাওয়ার আগে বন্ধুরা সবাই একসঙ্গে ঈদবাজার করছি। গতবার থেকে এবার দাম বেশি। গতবার এ ধরনের পাঞ্জাবি ৮০০ টাকায় কিনেছি। এবার সেটি ১১০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও অনেক কথা বলে ১০০ টাকা কমাতে পেরেছি।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রেতাদের রুচিতেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার বাজারে কাপল জামার বিক্রি বেশি। স্বামী-স্ত্রী বা বন্ধু-বান্ধবী, আত্মীয়দের মধ্যে মিল রেখে ম্যাচিং কাপড় কেনার চাহিদা বেশি। কেউ পাঞ্জাবির রঙের সঙ্গে শাড়ির রঙের মিল খুঁজছেন; কেউবা একই কালারের অনেকগুলো শার্ট চাচ্ছেন।

ক্রেতার বিভিন্ন চাহিদার কথা জানিয়ে নীলক্ষেতের গাউছিয়া মার্কেটের বিক্রেতা শরীফ হাসান বলেন, তরুণ ও যুবকদের অধিকাংশই এসেই জিজ্ঞেস করছেন একই রঙের হবে কি না! এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা নতুন বর-কনেদের সংখ্যাই বেশি। কেউ আবার অন্য দোকান থেকে শাড়ি বা পাঞ্জাবি কিনে এসে একই রঙের কাপড় চাচ্ছেন। মধ্য বয়সিরা কাপড়ের মানটা বেশি দেখেন। শিশুরা উজ্জ্বল বা চকচকা জামা পছন্দ করছে।

এবার ঈদে বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়েছে। ছোট থেকে বড় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। পায়জামা, পাঞ্জাবি, আতর, গজকাপড়, শাড়ি, জুতাসহ সবকিছুর দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

দামের বিষয় জানিয়ে বিক্রেতা ইরফান মোল্লা বলেন, নতুন ক্রেতারা দামাদামি কম করেন। পুরাতন ক্রেতারা একটু বেশি দামাদামি করছেন। আমাদেরও তো এবার বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এছাড়া এবার যাতায়াত ভাড়াসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। সেজন্য দাম না বাড়িয়ে আমাদের উপায় ছিল না।

রাজধানীর ফুটপাতে নিম্নবিত্তদের আগ্রহ বেশি। ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, বায়তুল মোকাররমের চারপাশে, নিউমার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেটের সামনে, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সামনে, মিরপুর-১০ নম্বর ওভারব্রিজের নিচে, মালিবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও, গুলিস্তানের কয়েকটি এলাকায় অস্থায়ী নিয়মিত বিক্রেতার তুলনায় নতুন বিক্রেতা বেড়েছে। অস্থায়ী দোকানগুলো চৌকি পেতে বসেছে, কেউ কাঠের টেবিল বা ভ্যানের ওপর, কেউ হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে, আবার কেউ চাদর বিছিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাকের সঙ্গে প্রসাধনী সামগ্রী সাজিয়ে রেখেছেন। নিম্ন-মধ্যবিত্তদের কেউ কেউ ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করছেন। তাদের কেউ কেউ নিয়মিত এখানকার ক্রেতা। কেউ আবার নতুন করে এখান থেকে কিনতে এসেছেন।

রিকশাচালক আব্দুল আহাদ সন্তানের জন্য ঈদের জামা কিনছেন। প্রতি বছর গুলিস্তানের ফুটপাত থেকে তিনি বাজার করতেন। তিনি বলেন, দুটি সন্তান আছে। নিজের জন্য কিছু কিনতে না পারলেও ওদের জন্য তো কিনতে হবে। এবার রোজার শুরুতেই জামার জন্য আবদার করে রাখছে। সেজন্য আজ কিনতে এসেছি। তিনি জানিয়েছেন, মার্কেটগুলোতে কাপড়ের দাম একটু বেশি থাকে। তাই এখান থেকে কিনতে এসেছি।

এছাড়াও রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। অনেকেই আবার শখ করে ঈদবাজারে ঘুরতেও এসেছেন। এলাকায় কাপড়ের দাম বেশি, তাই কেউ কেউ রাজধানী থেকে পরিবারের সবার জন্য মার্কেট করার জন্য ঢাকায় এসেছেন।