হুমকির মুখে খাদ্য নিরাপত্তা

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম
হুমকির মুখে খাদ্য নিরাপত্তা
  • মোট ১০৫টি হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ
  •  মৎস ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা বিপাকে
  •  ১৫৩ কেন্দ্রের ৫৫টি সক্ষমতার কম উৎপাদন করে
  •  ডিপিডিসি ঘণ্টায় ৩২০, ডেসকো ২৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করছে

জ্বালানি সংকট হলে জাতীয় অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়বে

—অধ্যাপক ড. এম শামসুর আলম

জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, (ক্যাব)

দেশে জ্বালানি সংকটে বিদ্যুতে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে দিনে আট থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে ধুঁকছে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি খাতে বড় আকারে ভর্তুকি দেয়ার সময় এসেছে। কারণ জ্বালানি নিরাপত্তা ছাড়া দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ঘনঘন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে নষ্ট হচ্ছে খাদ্য ও উৎপাদনের কাঁচামাল। হিমায়িত খাদ্য ও মেডিসিন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) পরিচালক এস হুমায়ুন কবীর জানান, পচনশীল পণ্য হওয়ায় চিংড়িকে সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এ ছাড়া চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতি ধাপে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, চিংড়ি ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখতে সারাক্ষণ বিদ্যুৎচালিত অ্যারেটর (বায়ুবাহক) ব্যবহার করতে হয়। লোডশেডিং হলে চিংড়ির উৎপাদন কমে যায়, কখনো কখনো সব মাছই মারা যায়।

কাশেম নামের এক বরফ ব্যবসায়ী আমার সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, আমি যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে বরফ দেই। একটি কারখানায় বরফ জমাতে একটানা ১৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দরকার হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটর ব্যবহার করে বরফ তৈরি করতে হচ্ছে। ফলে বরফের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে মোট ১০৫টি হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত করা হয় খুলনার বিভিন্ন কারখানায়। 

রাজধানীর কাজীপাড়ার বাসিন্দা কান্তা বলেন, দিনে ছয় থেকে সাতবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া রাতেও লোডশেডিং হচ্ছে। এতে দৈনন্দিনের কাজে অনেক সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে ফ্রিজের খাবার নষ্ট হওয়ার দশা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ফ্রিজ খোলা যায় না। ফ্রিজে যে খাবার থাকে, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে সেই খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মালিবাগের হোটেল ব্যবসায়ী আমির হোসেন আমার সংবাদকে মুঠোফোনে জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বারবার জেনারেটর চালু করতে হয়। ফ্রিজের খাবার নষ্ট হচ্ছে। এতে প্রতিদিন ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁর রান্না ঘর এমনিতেই উত্তপ্ত। সেখানে বিদ্যুৎ গেলে কি হয় তা কেবল কর্মীরাই জানেন। বিদ্যুতের অভাবে কাজে ব্যাঘাত হচ্ছে উৎপাদন।

লোডশেডিংয়ের কারণে সব বয়সী মানুষই ভুগছেন দুর্ভোগে। শ্রমজীবীরা বলছেন, সাধারণ মানুষের সমস্যা বেশি হচ্ছে। কারণ রাতে লোডশেডিংয়ের কারণে গরমে ঘুমানো যায় না। এর ফলে দিনের বেলায় কাজ করা কঠিন হয়ে উঠছে। রাজধানীতে ডিপিডিসি প্রতি ঘণ্টায় ৩২০ এবং ডেসকো প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং করছে প্রায় আড়াইশ মেগাওয়াট। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি খাতকে সেবা খাত হিসেবে দেখতে হবে। তা না হলে ভঙ্গুর হবে অর্থনীতি। বর্তমানে দেশের ১৫৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৫৫টি সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন করতে বাধ্য হচ্ছে। যার মূল কারণ গ্যাস, কয়লা এবং তেলের সংকট। যে কারণে লোডশেডিং নাকাল করছে দেশবাসীকে। 

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অধ্যাপক ড. এম শামসুর আলম বলেন, ‘জ্বালানি সংকট হলে জাতীয় অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়বে। এই বোধ থেকে এ খাতকে সংস্কার করতে হবে। অতীত থেকে এ পর্যন্ত যা করা হয়েছে, তার মূল্যায়ন করতে হবে।’