বাজল দ্বাদশ নির্বাচনি ঘণ্টা

আবদুর রহিম প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৩, ১২:৪১ এএম
বাজল দ্বাদশ নির্বাচনি ঘণ্টা
  • নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে তফসিল
  • ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট
  • অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা একগুচ্ছ সেবায় নির্বাচনি অ্যাপ

যখনই নির্বাচন হয় আমরা প্রস্তুত ইসির অনলাইন প্রক্রিয়া ইতিবাচক
—আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আ.লীগ

আমাদের পরিষ্কার কথা সরকারের পদত্যাগ ব্যতীত নির্বাচনে যাব না
—জয়নাল আবদীন ফারুক
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ, বিএনপি

প্রস্তুতি কী, আমরা কী করব এখনো কিছু জানি না; বুঝেশুনে পরে সিদ্ধান্ত
—কাজী ফিরোজ রশীদ
প্রেসিডিয়াম সদস্য, জাতীয় পার্টি

ভোটে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। বাজল দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনি ঘণ্টা। পূর্বনির্ধারিত রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করতে নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে তফসিল ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এবার নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ করতে বিশেষ নির্বাচনি অ্যাপও চালু হচ্ছে। যার মাধ্যমে নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা, ভোটার, দল, প্রার্থী, প্রতীক, ছবি, ভোটকেন্দ্রের তথ্যসহ সবকিছুই সম্পন্ন করা যাবে। কমিশনও এ অ্যাপের মাধ্যমে সব ধরনের তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারবেন। তবে ইসির প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বাগ্যুদ্ধ রয়েছে। 

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বলছে, আগামী নির্বাচনে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ভোটে যাওয়ার যত প্রস্তুতি রয়েছে, তারা ইতোমধ্যে সেসব শেষ করেছেন। কমিশন যখনই ভোট গ্রহণ করবে, তখনই তারা প্রস্তুত। তবে মতভিন্নতা রয়েছে এখনকার সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির। তারা বর্তমান সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবে কি না এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ও অজানা। 

তবে একাধিকবার ক্ষমতায় থাকা বিএনপি বলছে, তারা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রয়েছে। অন্যকিছু নিয়ে ভাবছে না। নির্বাচন কমিশন কী ঘোষণা দিচ্ছে— তা শুনতেও চাচ্ছে না একাধিকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলটি।   

নির্বাচন কমিশনের তফসিল, অনলাইনে মনোনয়ন এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে ভোটের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে তাদের শিডিউল ও সংবিধান অনুযায়ী সব কাজ করছে; এ জন্য তাদের ধন্যবাদ। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য আমাদের অনেক ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের মাননীয় নেত্রী যথাসময়ে ভোটের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে আগেই নির্দেশ দিয়েছেন আর আমরাও সে অনুযায়ী ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। যখনই নির্বাচন হয়, আমরা প্রস্তুত। জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। আর নির্বাচন কমিশন অনলাইনে মনোনয়ন জমার যে বিষয়টি বলেছে, তা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। আমরা কমিশনকে স্বাগত জানাই এমন ভালো উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।  

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক আমার সংবাদকে বলেন, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। এটা আমাদের পরিষ্কার কথা। আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। কোন নির্বাচন কমিশন কী ঘোষণা দিলো— এগুলো দেখার সময়  নেই আমাদের। জানারও সময় নেই। আমরা এগুলো শুনতেও চাই না, দেখিও না। রাজনৈতিক দল হিসেবে ভোটের প্রস্তুতি সব দলেরই থাকে। বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেয়া দল, জনপ্রিয় দল। আমরা অবশ্যই নির্বাচনে যাব জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য; তবে এই সরকারের অধীনে নয়। 

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ আমার সংবাদকে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) কী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে— সে বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিইনি আমরা। আমাদের প্রস্তুতি কী, কী করব, সে বিষয়ে এখনো আমরা কিছু জানি না। এ ব্যাপারে আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবই ভালো বলতে পারবেন। অবশ্যই তিনি বুঝেশুনে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন। যখন তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদেও জানাবেন, তখন আমরা বলতে পারব। 

নভেম্বরে তফসিল : ইসি আনিছুর

আসছে নভেম্বরের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আাানিছুর রহমান বলেন, তার আগেই নির্বাচনি ব্যবস্থাপনার অ্যাপটি চালু হয়ে যাবে। গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। তিনি জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করতে হলে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। অন্তত ৪০-৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিতে হবে। সেক্ষেত্রে তফসিল ডিসেম্বরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে তফসিলের আভাস দিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, কমিশন আলোচনা করে ‘যথাসময়ে’ তফসিল দেবে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের কথা। কাজেই ডিসেম্বরে তো যেতে পারব না, অন্তত ৪৫ দিন আগেই তফসিল দিই সাধারণত। আশা করা যায় সব প্রস্তুত হয়ে গেলে সিইসি যে সময় বলেছেন, ওই সময়ে তফসিল দেয়া যাবে।’ তফসিল হয়ে গেলে অনলাইনে মনোনয়ন জমার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সে কারণে তার আগেই নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা অ্যাপ চালু করতে হবে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা, ভোটার, দল, প্রার্থী, প্রতীক, ছবি, ভোটকেন্দ্রের তথ্য জানানোসহ একগুচ্ছ সেবা দিতে ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অ্যাপ’ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। 

আনিছুর রহমান বলেন, ‘যে অবস্থায় রয়েছে, আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না, নভেম্বরে অ্যাপটি চালু করতে পারব।’ সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে সিইসির দেয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, ‘সিইসি মহোদয় তো বলেই দিয়েছেন ওই সময়ের মধ্যে তফসিল হবে। আপনারাও জানেন তিনি নভেম্বরের কথাই তো বলেছেন।’ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কবে হতে পারে— তা স্পষ্ট করে না জানালেও গত ৩০ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, অক্টোবরের আগে তারা তফসিল দিচ্ছেন না। 

তিনি সেদিন বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনাও হয়নি, সিদ্ধান্ত হয়নি। অক্টোবরের আগে তফসিল দেয়া সম্ভব নয়। সাংবিধানিকভাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ১ নভেম্বর শুরু হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা। নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথা অনুযায়ী  ভোটের তারিখের আগে ৪০-৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের সময় ও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারের জন্য সময় রাখা হয়।