ওয়াসার পানিতে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগজীবাণু

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ১২:১৪ এএম
ওয়াসার পানিতে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগজীবাণু

রাজধানীতে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে, বিভিন্ন এলাকায় সেই পানি ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত। এমনকি পানিতে থাকে ময়লা ও পোকামাকড়। রান্না, গোসল, খাওয়াসহ দৈনন্দিন কাজে এসব ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহারে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা। ওয়াসার ময়লা পানি ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। 

চিকিৎসকরা বলছেন, দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ নানা ধরনের চর্ম রোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি। 

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের মেডিসিন ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আফতাব রাসেল বলেন, দূষিত পানি ব্যবহারে শিশুদের বেশি সমস্যা হয়। এছাড়া বয়স্ক মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে। দূষিত পানির ফলে ডায়রিয়াজনিত রোগ ও পানিবাহিত রোগ বাড়ে। চর্ম রোগসহ দীর্ঘমেয়াদি ক্রনিক রোগ হতে পারে। 

রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে শুরু করে ওয়াসার ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির এমন অভিযোগ জুরাইন, কল্যাণপুর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মধুবাগ, মগবাজার, খিলগাঁও, বাড্ডা, বাসাবো, মুগদা, মানিকনগর, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের। 

নগরবাসীদের মতে, ওয়াসার পানির সমস্যার বিষয়ে ফোন করে অভিযোগ অভিযোগ জানালেও কোনো কাজে আসে না। ওয়াসা থেকে বলা হয়, পানির ট্যাংক পরিষ্কার করতে। মূলত, রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকার পানিতে পোকা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি এলেও সেটিকে বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকের সমস্যা হিসেবে দেখছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। 

অন্যদিকে দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে অনেকেই ডিপ টিউবওয়েলের পানি ব্যাবহার করছেন। আবার অনেকে সেই গন্ধযুক্ত পানিই ব্যবহার করছেন। বাসিন্দারা বলছেন, এই গরমের মধ্যে পানি ছাড়া তো চলা অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে এই ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহার করা লাগছে। অনেকে এটি ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। 

বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন যাবত পানি থেকে কেঁচো ও দুর্গন্ধ আসায় পানি ব্যবহার করা অসম্ভব হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরীর বাসিন্দারা। তারা বলছেন, গোসল, ধোয়ামোছাসহ সব ধরনের কাজে এই দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এই পানি ফুটিয়ে খেলেও গন্ধ যাচ্ছে না। পানির কারণে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আগে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। 

এর আগে রাজধানীর কল্যাণপুর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে ওয়াসার পানির সঙ্গে পোকা পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানান, কোথাও কয়েক মাস ধরে এই সমস্যা চলছে। তারা জানান, পোকা ও দুর্গন্ধের কারণে বাড়ির ট্যাংকও পরিষ্কার করিয়েছেন। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। বরং আগের মতোই পানি আসছে। ওয়াসায় এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। 

রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার পানিতে পোকা আসার বিষয়টি ঢাকা ওয়াসার সমস্যা বলতে রাজি নন কর্মকর্তারা। তারা জানান এটি বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকের সমস্যা। 

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, এমন অভিযোগ আমরা আগেও পেয়েছি। পরে দেখা যায় যে, বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংক বহুদিন ধরে পরিষ্কার করা হয় না। যার কারণে পানিতে পোকা ও দুর্গন্ধ দেখা দেয়। আমাদের ওয়াসার পানিতে কোনো সমস্যা নেই। পোকা হওয়ার কোনো সুযোগও নেই। এছাড়া পানিতে ক্লোরিন দেওয়ার কারণে কিছুটা গন্ধ থাকতে পারে। সেটি কোনো ক্ষতিকর কিছু নয়। কিছুদিন এমন পোকা ও দুর্গন্ধের অভিযোগ এলেও এখন সেটি তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ সবাই তাদের রিজার্ভ ট্যাংক পরিষ্কার করায় এটি দূর হয়েছে। আমাদের আগে গরমে কিছু এলাকায় পানির সংকট দেখা দিলেও এখন আর সেই সংকট নেই। কারণ আমরা ডিএমএ স্থাপন করার পরে এই সমস্যাও দূর হয়েছে। 

ঢাকা ওয়াসার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে জরুরি পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ৩৮৮টি গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন করবে ঢাকা ওয়াসা। সে লক্ষ্যে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি ঢাকা শহরে জরুরি পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ৩৮৮টি গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন কাজের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করবে। ফলে যেসব এলাকায় পানির সংকট বেশি, সেখানে কিছুটা হলেও সমস্যা নিরসন হবে। 

কবে নাগাদ গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিস্থাপনযোগ্য গভীর নলকূপের তালিকা ও উৎপাদন সাইটে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। পরে কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেখানে নলকূপ স্থাপন করা হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব এলাকায় পানির সমস্যা বেশি সেসব এলাকা গুরুত্ব পাবে।