ঢাকার রাস্তায় দেশীয় প্রযুক্তির ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানোর উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২৫, ১২:০৯ এএম
ঢাকার রাস্তায় দেশীয় প্রযুক্তির ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানোর উদ্যোগ
  • বর্তমানে রাজধানী ঢাকার সড়কের সংযোগগুলোতে মোট ১১০টি ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে
  • পাইলট প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর ২২টি স্পটে এই সিগন্যাল বাতি লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে
  • দেশীয় প্রযুক্তিতে অত্যন্ত কম খরচে বসানো হবে বাতিগুলো

যানজট নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর সড়কগুলোতে এবার দেশীয় প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিগন্যাল সিস্টেমটিতে অটোমেটেডের পাশাপাশি রাখা হয়েছে ম্যানুয়াল অপশনও। ফলে সিগন্যাল বাতিটি দু’ভাবে কাজ করবে। এটি সেমি অটোমেটেড সিগন্যাল এইড। একটা বাটনের (বোতাম) মাধ্যমে এ ব্যবস্থাকে ম্যানুয়াল আবার অটোমেটেড (স্বয়ংক্রিয়) করা যাবে। 

কম যানবাহন থাকলে নির্ধারিত সময়ের জন্য অটোমেটেড মুডে চলবে। বেশি থাকলে ম্যানুয়ালি সময় পরিবর্তন করে নেয়া যাবে। রাজধানীর যানজট নিরসনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বিশেষজ্ঞরা এই দেশীয় প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বুয়েট এবং সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে রাজধানী ঢাকার সড়কের সংযোগগুলোতে মোট ১১০টি ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। পাইলট প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর ২২টি স্পটে এই সিগন্যাল বাতি লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে অত্যন্ত কম খরচে বসানো হবে বাতিগুলো। 

প্রাথমিকভাবে গত ডিসেম্বরের শুরুতেই ঢাকার চারটি মোড়ে পরীক্ষামূলকভাবে দেশীয় সিগন্যাল বাতি বসানোর পাইলট প্রকল্প চালু করার কথা থাকলেও তা চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে তিনটি মোড়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে টেস্ট চলছে এখন। প্রায় শেষের দিকে বাংলামোটর মোড়ের কাজও। প্রকল্পটি চালু হলে সাশ্রয় হবে সময় ও টাকা। পর্যায়ক্রমে দেশীয় প্রযুক্তির এই সিগন্যাল সিস্টেম ও বাতি লাগানো হবে সব গুরুত্বপূর্ণ স্পটে। 

বর্তমানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট মোড়ে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা ভবন মোড়, কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন মোড়, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড় হয়ে মিন্টো রোডের মোড়ে বসনো হবে। তারপর বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর হয়ে আবদুলাহপুর মোড় পর্যন্ত ২২টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে দেশীয় প্রযুক্তির ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হবে। 

সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারণে বিশ্বের অন্যতম বিশৃঙ্খল ও যানজটের নগরী এখন ঢাকা এখন। যানজটের কারণে নাগরিকদের এই শহরে দিনে ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা একের পর এক নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। অথচ বিপুল টাকা বাজেট পাস করে বাস্তবায়ন হয়েছে একের পর এক প্রকল্প। তাতে অর্থের অপচয় ছাড়া কাজের কাজ কিছু হয়নি। মাঝেমধ্যে কিছু লোকদেখানো প্রকল্প অল্প সময় স্থায়ী হলেও কোনোটাই শেষ পর্যন্ত টেকেনি। আর আগে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছে, সেগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করার খরচ ছিল অনেক বেশি। পাশাপাশি সেগুলো চালানোর জন্য লোকবলের অভাব, উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় তা তেমন কাজে আসেনি। আবার এগুলো নষ্ট হলে পুনরায় আমদানি করতে হতো। আবার তাও অনেক সময়সাপেক্ষ বিষয়। ফলে পুরো সিস্টেমই অচল হয়ে পড়ে। তবে বর্তমান ব্যবস্থাটি বুয়েটেই তৈরি করা হবে দেশীয় প্রযুক্তিতে। ফলে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজও সেখান থেকে দেখা হবে। যখন যেটা নষ্ট বা অকার্যকর হবে, তখনই সেটা পরিবর্তন বা মেরামত করা সম্ভব হবে।

সূত্র আরও জানায়, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ঢাকা শহরে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে ‘ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট’ (কেস) প্রকল্পের আওতায় ১১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯টি মোড়ে সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। আর ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ২০১৬ সালে ঢাকার চারটি মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিস্টেম বসানোর আরেকটি উদ্যোগ নেয়। ওই প্রকল্পে শুরুতে ব্যয় ছিল ৩৭ কোটি টাকা, পরে বেড়ে ৫২ কোটি টাকা হয়। কিন্তু কোনো কাজেই আসেনি। ফলে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা নগরীর সব জায়গায় বর্তমানে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন ম্যানুয়ালি।  
এদিকে দেশীয় প্রযুক্তির সিগন্যাল বাতি প্রকল্পটি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সমন্বয়ে বুয়েট ও সিটি করপোরেশন বাস্তবায়ন করছে। বুয়েট ট্রাফিক সিগন্যালের ডিজাইন ও প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করছে। আর সিটি করপোরেশন ভৌত অবকাঠামে দিয়ে সহযোগিতা করছে। যত্রতত্র যানবাহন ও পথচারী পারাপার বন্ধের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। যত্রতত্র পথচারী পারাপার বন্ধে ওসব মোড়ে জেব্রা ক্রসিংয়ের উভয় পাশে ৫০ মিটার করে বেড়া নির্মাণ করে দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। ফলে এটি একদিকে যেমন যানবাহন চলাচল নিরাপদ করবে, অন্যদিকে পথচারীদের নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্যও কার্যকর হবে। দেশীয় প্রযুক্তির ট্রাফিক সিগন্যাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অনেক পরিবর্তন আসবে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান জানান, দেশীয় প্রযুক্তিতে ট্রাফিক সিগন্যাল বাস্তবায়নের পাইলট প্রকল্প হিসেবে আরও এক মাস আগে চারটি মোড়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়ার কথা ছিল। তিনটি মোড়ে চালু হয়েছে। যা টেস্ট ফেজে আছে।
আরেকটি মোড়ে এ প্রযুক্তি স্থাপনের কাজ শেষের দিকে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে দুটি স্পটে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দুটি স্পটে ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছে। এখনো অপারেশন মুডে যাওয়া হয়নি। বাংলামোটর মোড়ে কাজ শেষ হলেই চারটি মোড়ে অপারেশনে যাবে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে মৎস্য ভবন থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ২২টি গুরুতপূর্ণ স্পটে এটি স্থাপন করা হবে।