- কর্মস্থলে অনুপস্থিতির দায়ে আরও ৪ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত
- এখন পর্যন্ত পলাতক পুলিশের সংখ্যা ২১
- যারা ব্যাখ্যা ছাড়াই গায়েব তাদের বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা
সরকার পতনের পর দায়িত্ব ফেলে পালানো পুলিশের তালিকা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি নির্দেশ ও বিধি লঙ্ঘন করে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে আরও চার পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর মধ্য দিয়ে দায়িত্বচ্যুত পুলিশের সংখ্যা দাঁড়াল ২১ জনে। বরখাস্ত হওয়া চার কর্মকর্তার মধ্যে দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও দুজন সহকারী পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার।
তারা হলেন শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল ইসলাম, ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রওশানুল হক সৈকত, সহকারী পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহানী এবং ট্রাফিক মিরপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান পলাশ। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সহকারী কমিশনার গোলাম রুহানী ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর ছোট ভাই।
চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ, তারা যথাক্রমে গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এর মধ্যে তৌহিদুল ইসলাম ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে, রওশানুল হক সৈকত ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট থেকে, গোলাম রুহানী ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট থেকে, মফিজুর রহমান পলাশ ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
পুলিশের মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর সদস্য হয়ে বিনা অনুমতিতে এভাবে দায়িত্বচ্যুতি সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির চরম লঙ্ঘন বলে মনে করছে প্রশাসন।
পলাতক এসব বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ২(খ), ২(চ) ও ৩(গ) ধারা অনুযায়ী তাদের ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়নের অপরাধে’ অভিযুক্ত করে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, বরখাস্তকালীন তারা কেবল খোরপোশ ভাতা পাবেন, চাকরির অন্য সুবিধা তারা পাবেন না।
কেন এত অনুপস্থিতি এমন প্রশ্নে জবাবে পুলিশের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। অনেক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখান, কেউ কেউ দায়িত্বে ফিরেই আর উপস্থিত হননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, সরকার পতনের প্রেক্ষাপটে এক ধরনের ‘মনোবল ভাঙা’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বাহিনীতে। কেউ কেউ রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘিরে শঙ্কায় আত্মগোপন করেন।
সূত্রটি জানায়, এই তালিকা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে অনুপস্থিতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের সবাইকে শনাক্ত করা হচ্ছে। যারা কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে গায়েব, তাদের বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশের মতো সংবেদনশীল ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা বাহিনীতে যদি একের পর এক কর্মকর্তা দায়িত্ব ফেলে পালান, তাহলে সেটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গভীর উদ্বেগজনক। একইসাথে এই বরখাস্তের ঘটনাগুলো স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে— চাকরির শৃঙ্খলা ভেঙে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, কেউ ছাড় পাবেন না। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার আরও কঠোর অবস্থানে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।