Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪,

ধ্বংসের পথে মহেশ গল্পের জমিদারবাড়ি

মো. মিঠুন মাহমুদ, জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা)

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০, ০৭:৩২ পিএম


ধ্বংসের পথে মহেশ গল্পের জমিদারবাড়ি

বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল ঐতিহাসিক চুয়াডাঙ্গা জেলা। দেশ বিভাগের পূর্বে এটি পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার অন্তর্গত ছিলো। চুয়াডাঙ্গা জেলায় রয়েছে কয়েকশ বছরের ঐতিহাসিক পটভূমি।

ঐতিহ্যবাহী এই জেলাটির নানা দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জীবননগর উপজেলায় অবস্থিত কাশীপুর জমিদার বাড়ি। এটি আজ অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হওয়ার পথে।

জীবননগর শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে কে.ডি.কে ইউনিয়নের কাশীপুর গ্রামে জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। এই জমিদার বাড়িটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় লেখক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত স্থান হিসেবে। কাশিপুর এই জমিদার বাড়িটি ছিলো শরৎচন্দ্রের মামা জমিদার বিনয় কুমার চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক সময় মামা বাড়ি কাশিপুর জমিদার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। এখানে বেড়াতে এসে রচনা করেন তার জনপ্রিয় ছোট গল্প ‘মহেশ’।

গল্পের মূল চরিত্র ছিলো দরিদ্র কৃষক গফুর, তার পালিত গরু এবং ছোট মেয়ের করুণ দৃশ্য জমিদার প্রথার কলুষিত অধ্যায়কে তুলে ধরেছে। জমিদার বিনয় কুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন অত্যাচারী জমিদার।

প্রজাদের ওপর নির্মম অত্যাচারের কারণে তিনি দুর্নাম অর্জন করেন। প্রজারা তার অত্যাচারের ভয়ে সব সময়ই আতঙ্কে  দিন কাটাতো। প্রজাদের প্রতি রাজার অত্যাচারের এমন নমুনা শরৎচন্দ্রের মহেশ গল্পে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে নিজ জমিদার মামার প্রজাদের প্রতি কঠিন এবং অত্যাচারী রূপ দেখেই তিনি মর্মাহত হন এবং রচনা করেন এই উল্লেখযোগ্য গল্পটি।

জমিদার বাড়িটি ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত বিভাগের ফলে বাড়িটির বর্তমান বাসিন্দাদের পূর্বপুরুষদের সাথে বিনয় কুমার মজুমদার ভারতের ১২০০ বিঘা জমির বিনিময় করেন এবং দেশ ছেড়ে সপরিবারে ভারতে চলে যান।

এখনো বাড়িটিতে জমিদারের ব্যবহূত নানা জিনিসপত্র রয়েছে। রয়েছে খাট-পালঙ্ক, সোফা, টেবিল, ডাইনিং টেবিলসহ আরও নানা জিনিসপত্র। রয়েছে মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলনের বিশেষ মোটরও। বর্তমানে বাড়িটি অযত্ন, অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

জমিদার বাড়ি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাশিপুর গ্রামে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। বর্তমানে বাড়িটিতে হাবিল এবং কাবিল নামের দুজন বসবাস করেন।

হাবিল ও কাবিল বলেন, বাড়িতে থাকা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, তারপরও আমরা এখানে বসবাস করছি। এখানে শরৎচন্দ্র অনেক সময় কাটিয়েছেন এবং তার মামা জমিদার বিনয় কুমার চট্টোপাধ্যায় সাধারণ প্রজাদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন করতেন, তেমন একটি ঘটনা নিয়ে তিনি গল্প লিখেছিলেন। মহেশ গল্পটি ছোট হলেও এটা সারা দেশে জনপ্রিয় একটা গল্প।

আর গল্পের জন্য গোটা দেশ আজ জীবননগর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের নাম জানেন। তাছাড়া জমিদার বাড়িটি দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে থাকে, এ জন্য বাড়িটি এখনো আছে এবং তৎকালীন সময়ে জমিদারদের ব্যবহূত কিছু জিনিসপত্র এখানে এখনো আছে।

যশোর থেকে জমিদার বাড়ি দেখতে আসা কলেজছাত্র আতিকুর রহমান বলেন, শরৎচন্দ্রের লেখা মহেশ গল্পের মাধ্যমে কাশিপুর জমিদার বাড়ির কথা জানতে পারি। অনেক দিনের আশা ছিলো জমিদার বাড়িটি দেখার। আজ এখানে এসে ভালো লাগছে, তবে জমিদার বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকার ফলে তার সোন্দর্যটা হারিয়ে ফেলেছে। এটা যদি সরকারিভাবে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ভালো হতো।

কে.ডি.কে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার শিপলু বলেন, কাশিপুর জমিদার বাড়িটি আসলে আমাদের এ উপজেলার একটি ঐতিহবাহী স্থান।

এখানে দেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গল্প মহেশ লেখা হয় এবং কাশিপুর জমিদার বাড়িটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মামা বাড়ি। এটি সংস্কারের জন্য প্রশাসনিকভাবে যদি ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে এটি সম্ভব।

আর এটি সংস্কার হলে কাশিপুর জমিদার বাড়িটি একটি দর্শনীয় স্থান হবে। এদিকে কাশিপুর জমিদার বাড়িটি যাতে সংস্কার করা হয় সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় জনগণসহ সুধী মহল।

আমারসংবাদ/এআই