Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

নারী দিবসের প্রত্যাশা হোক মর্যাদাময়

মার্চ ৮, ২০২১, ০৮:২৫ এএম


নারী দিবসের প্রত্যাশা হোক মর্যাদাময়

সমাজে নারী মানেই বোঝা, উটকো ঝামেলা। আজও আমাদের দেশে নারীদের বাঁকা চোখে দেখা হয়। নারীদের সবসময় হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। পরিবারের সবচেয়ে যে সদস্য টা কম আদর পায় সে হলো মেয়ে। যৌতুক ছাড়া নারীদের বিয়ে হচ্ছে না। 

বিয়ের পর শশুর বাড়ির লোকদের দ্বারা মানসিক-শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর সেটা আমরা দৈনন্দিন খবর পত্রিকায় দেখতে পাই। এমনকি নারী তার স্বামীর কাছেও ভালো আচরণ পায় না। 

বাবার দ্বারা মেয়ে ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে। নারীদেরকে তার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তারা সমাজে ন্যূনতম মর্যাদা পায় না। অথচ ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ মর্যাদা। প্রতিটি ধর্মে নারীদের বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে।

নারীরা কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সমান অবদান রাখলেও মজুরি তে বঞ্চিত করা হয়। গার্মেন্টস শিল্পগুলোতে অর্ধেকের বেশি নারী শ্রমিক। দিনরাত পরিশ্রম করেও সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না। কারণ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। 

ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নারীরা তাদের অধিকার আদায়ে প্রথম রাস্তায় নামে ১৯০৮ সালে আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি পোশাক তৈরির শ্রমিকদের সম্মান জানাতে  ধর্মঘট ডেকেছিল। 

তাদের দাবি ছিল কর্মঘণ্টা ৮ ঘন্টা করা হোক। ১৯০৯ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যালিস্ট পার্টি রাজনৈতিকভাবে প্রথম নারী দিবস পালন করে। ৮ মার্চ নয় বরং ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো নারী দিবস পালিত হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়ার নারী শ্রমিকরা নারী দিবস উদযাপনের সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এর কয়েকবছর পর ১৯১৭ সালে ৮ মার্চ রাশিয়ায় নারী দিবস পালনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এ দিবসটি পালন করে আসলে ১৯৭৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হচ্ছে। 

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৫৪৬ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫১ জনকে, আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন। 

এছাড়া ৯৭৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ১৪১৩ জন নারী ও ৯৮৬ জন শিশু এবং ২০১৮ সালে ৭৩২ জন নারী ও ৪৪৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

এই ছোট্ট পরিসংখ্যানটা কি বলে দেয় না যে আমরা নারীদের কতটুকু সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছি? কর্মক্ষেত্রে নারীরা কত হেনস্তার স্বীকার হয় তার পরিসংখ্যান না থাকলেও উপরের পরিসংখ্যান থেকে ঠিকি আন্দাজ  করা যেতে পারে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থী ছেলেদের তুলনায় বেশি হলেও উচ্চশিক্ষায় নারী শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার বেশি। আর এই চিত্রটি গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি উপলব্ধি করা যায়। 

কারণ বিশ্লেষণ করলে দেয়া যায় বিয়ে হয়ে যাওয়া। বিয়ের পর খুব কম মেয়েরাই তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। উচ্চশিক্ষায় পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা। নিরাপদ চলাচল ও আবাসের অপ্রতুলতা।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই বাংলাদেশের নারীর পথচলা ছিল সংগ্রামী।

এ সময়কালে নারীর অগ্রযাত্রার নানাবিধ দৃশ্য লক্ষ করা যায়। বেগম রোকেয়া নারীর মাঝে শিক্ষার জোয়ার সৃষ্টি করেছিলেন। তাকে নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয়ে থাকে। নারীর হাত ধরে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয়েছে।

ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে যতই আলোচনা–সমালোচনা হোক। এর সুযোগ–সুবিধা বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীকে এক মর্যাদার অবস্থানে এনে দিয়েছে। যা পরবর্তী সময়ে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জনেও সহায়ক হয়েছিল।

অগ্রযাত্রার কথা বলতে গেলে শিক্ষায় নারী, বিশেষ করে মেয়েশিশুর অংশগ্রহণের বিষয়টি উঠে আসে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আগেই আমরা প্রাথমিকে ছেলে-মেয়ের সমতা অর্জন করেছি। মাধ্যমিকেও মেয়েরা এগিয়ে গেছে। 

নারী শিক্ষকের হারও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। শিক্ষা প্রশাসনেও এখন অনেক নারী কর্মরত আছেন। নারী পাইলট, নারী প্যারাট্রুপার, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী সকল ক্ষেত্রে নারীরা দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছ। একজন নারী যেমন তার পরিবারে সফল তেমনি ভাবে কর্মক্ষেত্রে সফল। 

নারী দিবসে প্রত্যাশা হলো একবিংশ শতাব্দী হোক নারীবান্ধব। ঘরে বাহিরে নারীরা চলবে স্বাধীনভাবে। পরিবার, সমাজ, কর্মক্ষেত্র প্রতিটি জায়গা হোক নারীবান্ধব। যেখানে নারী তার অধিকার পাবে। তাই আসুন নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং তাদের মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট থাকি।

লেখক: ওবাইদুর সাঈদ (ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি, দৈনিক আমার সংবাদ)

আমারসংবাদ/এআই