Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার পথে হাটছে বাংলাদেশ

দে লো য়া র জা হি দ

জানুয়ারি ১০, ২০২২, ০৫:২৫ এএম


প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার পথে হাটছে বাংলাদেশ

প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা যখন আমরা ভাবতে শুরু করেছি, যখন ভাবতে শুরু করেছি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ সনদধারী বেকার তৈরি করছে কি না? ভাবতে শুরু করেছি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ১০০ বছর আগের প্রাসঙ্গিকতা এখন প্রাসঙ্গিক কি না? ভাবতে শুরু করেছি আমাদের চাহিদার সঙ্গে এ শিক্ষাব্যবস্থা মানানসই কি না? অভিবাসন, বাণিজ্য, বিদেশী বিনিয়োগ, এবং প্রযুক্তির বিস্তার—বিশ্বায়নের সমস্ত চ্যানেল—আন্তঃসংযুক্ত এবং পারস্পরিকভাবে শক্তিশালী করার উপায়ে মজুরি একত্রিতকরণকে প্ররোচিত করতে কাজ করছে। বিশ্বায়ন স্পষ্টতই এখানে শ্রমবাজারের একীকরণ বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে এবং উন্নত ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে, বিশেষ করে প্রযুক্তির প্রসারের মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্যে মজুরি ব্যবধান কমিয়ে বা বন্ধ করে দিচ্ছে। যা অভ্যন্তরীণ আয়ের বৈষম্য বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে। 

যদি প্রযুক্তির বিস্তার—বিশ্বায়নের সমস্ত চ্যানেল—আন্তঃসংযুক্ত হয়ে থাকে তাহলে এর সাথে তাল মিলিয়ে মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষাব্যবস্থা কেন সংযুক্ত নয়. কেন এখনো আমরা একথা দৃঢ়তার সাথে এ কথা বলতে পারছিনা যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন বা চাহিদা ভিত্তিক নয়. আমরা এখন এ মুহূর্ত থেকে দেশে সনদধারী বেকার তৈরি বন্ধ করবো এবং এর প্রক্রিয়া শুরু করবো স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এর জন্য প্রয়োজন যথা সম্ভব দ্রুত রাজনৈতিক সিদ্বান্ত গ্রহনের।    

দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রায় এক হাজার আসন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে । শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যকে এর কারণ হিসেবে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও নানাহ অগ্রযাত্রার পরও কেন ঢাবি প্রশাসন আসনসংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে— এ বিষয়ে সারাবাংলার সঙ্গে (জানুয়ারি ৮, ২০২২) সবিস্তারে আলাপ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। 

দীর্ঘ আলাপে নীতিগত জায়গা থেকে মূলত দুইটি বিষয়কেই গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। প্রথমত, ডিগ্রিধারী তৈরির বিপরীতে ‘নিড বেজড এডুকেশন’ বা প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে চায় ঢাবি প্রশাসন। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি গবেষণাকেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্য তাদের। …

চাহিদা-ভিত্তিক মডেল সমস্ত শিক্ষার্থী সহায়তা করার জন্য একটি পদ্ধতি যা অনুশীলনগুলি বিকাশ এবং বাস্তবায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। … যদিও আমরা স্বীকার করি যে সর্বজনীন শ্রেণীকক্ষ অনুশীলনগুলি বেশিরভাগ ছাত্রদের চাহিদা পূরণ করে, কিছু ছাত্রের সফল হওয়ার জন্য স্বল্প-মেয়াদী লক্ষ্য যুক্ত সমর্থনের প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমাদের দেশে যে সংখ্যক অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী রয়েছে, অনেক দেশে সেই পরিমাণ জনসংখ্যাই নেই। ভাবতে হবে, এটি আমাদের জন্য যুক্তিযুক্ত কি না, সনদধারী বেকার তৈরি করেছে কি না। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, আজ থেকে ১০০ বছর আগে যা প্রাসঙ্গিক ছিল এখন তা প্রাসঙ্গিক কি না, এ নিয়ে আমাদের ভেবে দেখা দরকার। 

চাহিদার সঙ্গে মানানসই শিক্ষা আছে কি না সেটা দেখা দরকার। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ‘অধ্যাপক ফজলুল হালিম চৌধুরী শিল্প রসায়ন ল্যাবরেটরি’ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষায় জ্ঞান চর্চা খুবই জরুরি। কিন্তু, আমাদের এ জ্ঞানচর্চা সীমিত হয়ে যাবে তা যদি সমাজের মানুষের উন্নয়নে কাজে লাগাতে না পারি। এতে জ্ঞান চর্চার প্রসার ঘটে না। এর সুফল মানুষের কাছে পৌঁছাবে না (দৈনিক শিক্ষা, ০৭ জানুয়ারি, ২০২২)

‘নিড বেজড এডুকেশন’ বা প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা তুলে ধরে ড. মাকসুদ কামাল সারাবাংলাকে বলেন, শিক্ষার্থী কমানো বা বাড়ানো নয়— নীতিগতভাবে আমরা মূলত ‘নিড বেজড এডুকেশনে’র দিকে যাচ্ছি। অবকাঠামো বা ফ্যাসিলিটি এখনো কম আছে। তাছাড়া উন্নত দেশগুলোতে সবাই উচ্চশিক্ষায় আসেও না। দেখা যায়, ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর একটি ডিপ্লোমা করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। 

তাছাড়া এখন বিশ্বব্যাপী গবেষণা খাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেভাবে মানসম্মত গবেষণার উপযোগী আকার রেখেই শিক্ষার্থী সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। এক হাজার শিক্ষার্থী কম ভর্তি করার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আরও আলাপ-আলোচনা করব।"

প্রয়োজন-ভিত্তিক মানে শিক্ষকের পেশাদার বিকাশ প্রোগ্রাম যা একজন শিক্ষক হিসাবে তার নির্দিষ্ট চাহিদাগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। এটা 'একটি সব মাপ ফিট' জাতিয় কিছু নয়, কারণ প্রত্যেক শিক্ষক তাদের কর্মজীবনের একটি ভিন্ন পর্যায়ে আছেন, এবং তাদের পেশাগত বিকাশের জন্য বিভিন্ন চাহিদা ও প্রয়োজন রয়েছে৷

সমস্যা ভিত্তিক শিক্ষা কেন প্রয়োজন? প্রথমত এর জবাব খুঁজতে হবে. "কোর্সের বিষয়বস্তু ছাড়াও, PBL সমালোচনামূলক চিন্তা, দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার বিকাশে তা উন্নীত করতে পারে। এটি গোষ্ঠী কাজ করার, গবেষণার উপকরণ গুলোর সন্ধান ও মূল্যায়ন এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ প্রদান করতে পারে (Duch et al, 2001)।

যখন উন্নত দেশগুলির মতামত দেয়ার মতো নেতারা ফার্মেসির বিশেষায়িত ক্ষেত্রগুলির জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করাতে পাঠ্যক্রমের আহ্বান জানান, তখন ১-৪ টি উন্নয়নশীল দেশ তাদের পরিবর্তিত স্বাস্থ্য পরিবেশের সাথে তাল মেলাতে রোগী-কেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম এবং জনস্বাস্থ্য ফার্মেসি খুঁজছে। কারিকুলাম অবশ্যই ক্যারিয়ারের বিস্তৃত দিকনির্দেশকে আরও ভালভাবে প্রতিফলিত করবে যা ভবিষ্যতে ফার্মাসিস্টরা সর্বদা পরিবর্তনশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গ্রহণ করবে। 

পাঠ্যক্রম থেকে জ্ঞান এবং দক্ষতার উপর ফোকাস করার জন্য একটি উদীয়মান চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা ফার্মাসিস্টদের এমন লোক হিসাবে গড়ে তুলবে যারা "চিন্তা করবে, কাজ করবে এবং এমনভাবে কাজ করবে যা দেখায় যে তারা সত্যিকারের রোগী-কেন্দ্রিক ফার্মাসিস্ট।

বিশ্বব্যাপী ফার্মেসি শিক্ষাবিদরা স্টেকহোল্ডারদের প্রয়োজনীয়তা পূরণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন যা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সম্পদের অভাব (মানব এবং অন্যথায়), দক্ষতা, অবকাঠামো এবং বিশ্বায়নের বর্ধিত চাপের কারণে আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। উন্নত বিশ্বে সমন্বিত রোগী-ভিত্তিক ফার্মাসি পরিষেবাগুলিতে রূপান্তর অনেক বছর ধরে একাডেমিক এবং অনুশীলনের অভিযোজন এবং গুণমান নিশ্চিতকরণ স্বাস্থ্য-সিস্টেম পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের একটি কারণ। যা এই তৃতীয় স্বাস্থ্য পরিচর্যা পরিবেশের একটি পণ্য হয়েছে।


লেখক : দেলোয়ার জাহিদ, সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ) কানাডা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডা ইউনিট কমান্ড নির্বাহী, প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার (আলবার্টা) নিবাসী।