Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ছকভাঙা গল্পে কতটুকু মন কাড়তে পারল ‘চণ্ডীগড় করে আশিকি’?

বিনোদন ডেস্ক

ডিসেম্বর ১১, ২০২১, ০৫:৪০ এএম


ছকভাঙা গল্পে কতটুকু মন কাড়তে পারল ‘চণ্ডীগড় করে আশিকি’?

ধরুন আপনি বাজার থেকে সুন্দর টকটকে লাল রঙয়ের একটি ক্যাপসিকাম কিনলেন। কিন্তু ক্যাপসিকামটা কাটার পর দেখলেন আপনি আসলে আবেগে বসে ক্যাপসিকাম নয় টমেটো কিনে ফেলেছেন। কেমন অনুভূতি হবে তখন?

এবার ঠিক এমনই এক গল্প নিয়ে হাজির ভিন্ন ধারার গল্পবাহক আয়ুষ্মান খুরানা। ছক ভাঙাই যেন তার ছক বলিউডে নিজের মাটি শক্ত করার। আর তার সুত্র রিস্ক নেহি তো ইস্ক নেহি। ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমায় যেমন ঝুঁকি নিয়েছিলেন, সফলতা পেয়েও তেমন ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। 

যেখানে বলিউডে সবাই হিরোইজমকে বেঁছে নেয়, সেখানে আয়ুষ্মানের কাছে ভিন্ন ধারার গল্পই প্রধান্য পায়। আর ভক্তারাও কখনও নিরাশ করেনি আয়ুষ্মানকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অভিনেতার নতুন সিনেমায় ট্রান্সজেন্ডার নারীর সঙ্গে প্রেমের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। তবে ছকভাঙা গল্পে কতটুকু মন কাড়তে পারল ‘চণ্ডীগড় করে আশিকি’? 

মনবিন্দর মুঞ্জল ওরফে মনু এক জিমের মালিক। নিজেও ফিটনেস নিয়ে ভীষণ সচেতন।স্বপ্ন শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়া। আর তাই নিজের বডি বিল্ডিং বেশি মন দিতে গিয়ে জিমের ব্যবসা বিশেষ লক্ষ্মীর মুখ দেখে না। এমনই সময়ে জিমে এন্ট্রি নেন জুম্বা ট্রেনার মানবী ব্রার। প্রথম দেখাতেই প্রেম, শারীরিক সম্পর্ক। তারপর একদিন বিয়ের প্রস্তাব। আর তখনই আসে কাহানী মে টুইস্ট। 

মন্নু বিয়ের প্রস্তাব দিলে মানবী তাকে জানায় সে একজন  ট্রান্সজেন্ডার নারী। অর্থাৎ, সে পুরুষ হয়ে জন্মেছিল। লিঙ্গ পরিবর্তন করে নারী হয়েছে। ব্যস, শুরু বিপত্তি। 

তবে, কী হ্যাপি এন্ডিং হবে মানবী-মন্নুর প্রেম কাহিনীর, নাকি সমাজের বেঁধে দেওয়া নিয়মে মন্নু ট্রান্সজেন্ডার নারীর ভালোবাসাকে প্রত্যাখান করবে?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে দেখতে হবে অভিষেক কাপুর পরিচালিত চণ্ডীগড় করে আশিকি সিনেমা। এই সিনেমায় মুখ্য ভুমিকায় অভিনয় করেছেন আয়ুষ্মান খুরানা ও বাণী কাপুর।

‘জেন্ডার স্টিরিয়োটাইপ’ আগেও ভেঙেছে বলিউড। বারবার, নতুন আঙ্গিকে। ‘চণ্ডীগড় করে আশিকী’ সেই তালিকার সাম্প্রতিক সংযোজন। বিনোদনের মশলায় জারিয়ে, রোম্যান্টিক কমেডির আঁচে সেঁকে চণ্ডীগড়ের প্রেক্ষাপটে গল্প বলেছেন পরিচালক অভিষেক কাপুর। যার মূল বিষয়টি আদতে খুবই স্পর্শকাতর। আর পর্দার বাইরের আসল লড়াই আরও অনেক বেশি কঠিন।

সংবেদনশীল গল্পের ‘ট্রিটমেন্ট’ কী রকম হতে পারে বা হওয়া উচিত, তা দর্শক ভালই জানেন। ‘চণ্ডীগড়...’ সেই রাস্তাতেই হাঁটতে চেয়েছে, তবে একটু চড়া দাগের রাস্তা ধরে, খুব বেশি জটিলতার মধ্যে না ঢুকেই। 

বদ্ধ ধারণা ভেঙে বোধোদয় ও ‘হ্যাপিলি এভার আফটার’— এ ভাবেই সাধারণত সমাধান করে দেওয়া হয় এ ধরনের ছবির শেষটা। লিঙ্গপরিচয় নিয়ে ছুঁতমার্গ ভাঙার রাস্তাটা আসলে কতটা কঠিন, সে পরীক্ষার ধারপাশ দিয়েও যায় না এ ধরনের চিত্রনাট্য। একজন ট্রান্স নারীর সমাজে যে যন্ত্রনা ভোগ করতে হয় প্রতিটি পদে পদে সে বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ছুঁতমার্গের দিকে আঙুল তোলার এই চেষ্টাটাই সাধুবাদযোগ্য।

‘ভিকি ডোনার’ দিয়ে শুরু করার পর থেকে আয়ুষ্মানের ফিল্মোগ্রাফি সমাজের নানা বদ্ধমূল ধারণার শিকড় ধরে নাড়িয়েছে। ‘ব্র্যান্ড আয়ুষ্মান’ এই বার্তাবাহকের কাজটি সফল ভাবেই করে আসছে এ যাবৎ। এ ছবির মনবিন্দর হয়ে উঠতে চণ্ডীগড়ের ছেলে আয়ুষ্মানকে বিশেষ কসরত করতে হয়নি। শারীরিক কসরতের নমুনা অবশ্য দেখা গিয়েছে ছবি জুড়েই। বারবেল তোলা কিংবা দড়ি বেঁধে আস্ত গাড়ি টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যগুলি আয়ুষ্মান জ্যান্ত করে তুলেছেন নিজের সর্বাঙ্গ দিয়ে। তার অভিনয় নিয়ে নতুন করে আসলেও কিছু বলার নেই। কিন্তু ব্যতিক্রমের তাগিদে যেন বারবার একইরকম চরিত্রে অভিনয় করছেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেতা। এবার তার গতিপথ পরিবর্তন করা উচিত।

তবে যার কথা না বললেই নয়, তিনি বাণী কাপুর। রূপান্তরিত নারীর চরিত্রে বাণী কপূরকে বুদ্ধি করে কাস্ট করেছেন পরিচালক। সে সুযোগও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন বাণী। সবচেয়ে বড় কথা, ছক ভেঙে নিজেকে গ্লামারর্স নায়িকা থেকে একজন ট্রান্স নারী হিসেবে উপস্থাপন করা অনেক সাহসের ব্যাপার। যেটা অভিনেত্রী সাবলীল ভাবে করে দেখিয়েছেন। তবে অভিনয়ের জোরে এগিয়ে যেতে এখনও অনেক পথচলা বাকি তার। 

শারীরিক আকর্ষণটুকু ফুরিয়ে যেতেই আয়ুষ্মান আর বাণীর কেমিস্ট্রির পারদও নেমে যায়। আলগা হয়ে যায় ছবির দ্বিতীয়ার্ধ, টিপিক্যাল সূত্রানুসারে নাটকীয় ভাবে শেষ হয় গল্প।

‘খিঁচ তে নাচ’ ছাড়া বাকি গান তেমন মনে ধরে না। ছবির মধ্যে কিছু প্রডাক্টের বিজ্ঞাপনও বেশ দৃষ্টিকটু। তবে ছবির দৈর্ঘ্য কম হওয়ায় ধৈর্য ধরা যায়। দু’ঘণ্টার বিনোদন ও বার্তা— এ ভাবে দেখলে মন্দ লাগবে না এ ছবি।

আমারসংবাদ/এডি