Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

না পারল ভয় দেখাতে, না পারল হাসাতে

বিনোদন ডেস্ক

ডিসেম্বর ১৩, ২০২১, ১০:৪০ এএম


না পারল ভয় দেখাতে, না পারল হাসাতে

‘ভূত আমার পুত, পেত্নি আমার ঝি, রাম-লক্ষণ থুড়ি সাইফ-অর্জুন সঙ্গে আছে করবে আমায় কী?’ বলিউড প্রেমীরা ট্রেলার দেখে এমনই আশা করেছিলেন। কারণ বরাবরই বলিউডের হরর সিনেমা হতাশ করে দর্শকদের। সিনেমা দেখে বোঝা মুশকিল হয়ে যায় সেটা হরর সিনেমা নাকি রোমান্টিক সিনেমা, একটু ১৮+ ভাবে বলতে গেলে বলতে হয় স্ফট পর্ণ সিনেমা। কারণ যে কোনো মুহুর্তে হোক সেটা রোমান্টিক মুহুর্ত কিংবা ভূতের বাড়িতে ভয়ানক পরিবেশ নায়ক নায়িকার রোমান্স যে কখন শুরু হয়ে যায় বোঝা মুশকিল। আর গল্পের বেলায় থাকে কাঁচকলা।  

তাই যখনই বলিউডে কোনো হরর সিনেমা রিলিজ হয়, হরর সিনেমাপ্রেমীরা একবুক আশা নিয়ে বসে থাকে এইবার বুঝি নতুন কিছু এলো। পরী আর শেষমেষ ছোরি ছাড়া তেমন কোনো সিনেমা দর্শক হৃদয়ে ভয়ের শিহরন জাগাতে পারেনি।

তাই এবার যখন সাইফ-অর্জুন একসাথে এলো ভুত পুলিশ খেলতে আবারও দর্শক আশা বাঁধল মনে। তবে ঠিক কতটুকু আশা পূরণ করল সাইফ-অর্জুনের ভুত পুলিশ? 

দুই ভাই বিভূতি আর চিরুঞ্জি  দু’ জনেই পারিবারিক ব্যবসা তন্ত্রসাধনার সঙ্গে যুক্ত। একদিকে ছোট ভাই চিরুঞ্জি ব্যবসা ঠিকঠাক চালাতে চায় আর অন্যদিকে বড় ভাই বিভূতি ধাপ্পাবাজিতে সিদ্ধহস্ত। 

একদিকে বিভূতির কেরিয়ারের দুটি লক্ষ্যা নারী ও টাকা। সে নিজেই বলে যে কোনও ধরনের নারীই আমার চলবে... অ্যানি টাইম ইজ মাই টাইপ। অন্যদিকে চিরুঞ্জির লক্ষ্য উল্টা বাবার লেগেসি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

একদিন এই দুই ভাইয়ের খোঁজে তাদের কাছে যায় মায়া নামের একটি মেয়ে। মায়া জানায় তাদের হিমাচল প্রদেশের এক ছবির মতো সুন্দর চা বাগানে কিচকান্ডি নামের এক ভূতের অত্যাচারের কথা। কিচকান্ডির অত্যাচারে চা বাগানের কর্মীরা ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। আর তাই ক্ষতির মুখ দেখছে কোম্পানি। মায়া তাদের জানায় তাদের বাবা উল্টা বাবাই এর আগে  কিচকান্ডির হাত থেকে রক্ষা করেছিল তাদের এলাকাকে। 

তারা যেহুতু উল্টা বাবার সন্তান তাই তারাই পারবে কিচকান্ডিকে তাড়াতে। বিভূতি সেখানেও ঠকবাজি করতে চাইলে, চিরুঞ্জি জানায় তারা যাবে এবং কোনো ফিস লাগবে না। 

কারণ বিভূতি এইসব ভূতে বিশ্বাস না করলেও চিরুঞ্জি বিশ্বাস করে তার বাবার তন্ত্র সাধনা সত্য ছিল। আর চিরুঞ্জির বিশ্বাসই সত্য হল। একদিন যারা ভূত ধরার নামে মানুষকে বোকা বানাত, সেই ভুয়ো তান্ত্রিক জুটি এবার খপ্পরে পড়ল পেত্নির। আর সেই পেত্নির ঠ্যালায় একেবারে নাজেহাল অবস্থা দুজনের।

তবে বিভূতি-চিরুঞ্জি কী পারবে কিচকান্ডির হাত থেকে মায়া এর কানুর চা বাগানের মানুষদের বাঁচাতে? নাকি ঠকবাজির পরিণাম ভুগতে হবে তাদের? 

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে পবন কৃপালানি পরিচালিত ভুত পুলিশ সিনেমায়। এই সিনেমায় মুখ্য ভুমিকায় অভিনয় করেছেন সাইফ আলি খান,জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ,ইয়ামি গৌতম,অর্জুন কাপুর। 

এখন নিশ্চয়ই আপনারা জানতে আগ্রহী, এই সিনেমাটা কী দর্শকদের আশা পূরণ করল? চলুন এই বিষয়ে একটু চুলচেরা বিশ্লেষণ করা যাক। 

ঘরানায় ফেলতে হলে ‘ভূত পুলিশ’ একটি হরর কমেডি। তবে ছবিটা কোনও দিক দিয়ে ভয়েরও নয়,কমেডিও নয়। অর্থাৎ, না পারে ভয় দেখাতে, না পারে হাসাতে।

পবন কৃপালানি চেষ্টা করেছিলেন হরর কমেডিকে যথাসম্ভব ভূতুড়ে করে তোলার। কিন্তু শেষ রক্ষ হয় না। পুরোটাই বড্ড ছেলেখেলা হয়ে দাঁড়ায়। জমে না কোনও মোচড়। নেপোটিজম আর করোনা নিয়ে কয়েকটি ওয়ান লাইনার বেশ মজার। কিন্তু ওই পর্যন্তই।

অভিনয়ের কথা বলতে গেলে সাইফ আলি খানের বাঁধাধরা গতের বাইরে ছবি করার ক্ষেত্রে তার ঝোঁক প্রশংসনীয়। তবে অভিনয় মন দিয়ে দেখলে বোঝা যায়, কিছু কিছু জায়গায় খুবই চেষ্টা করছেন কমিক টাইমিং পারফেক্ট করার। এগোনও ভালো গতিতে। কিন্তু হঠাত্‌ করেই যেন ফিউজ উড়ে যায়। সইফ বোধহয় ভুলে যান ঠিক কী করতে চাইছিলেন। ফলে খেই হারিয়ে ফেলে তাঁর চরিত্রটি। বাংলা মায়ের অ্যাংলো ছেলের মতো, অ্যাকসেন্টে গ্রামের দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলার মধ্যেও কোনও কৌতুক খুঁজে পেলাম না।

তবে সাইইফের যথেষ্ট চেষ্টা ছিল কমিক রিলিফ দেওয়ার জন্য। কিন্তু অর্জুন তো সেটাও পারলেন না। তবে যথা সাধ্য চেষ্টা করে গেছেন ইয়ামি। বাকি ৩ জন যেন হলিডে কাটানোর ফাঁকে মাঝেমধ্যে এসে অভিনয়ের দায় সেরে গেছেন।

ভুত পুলিশের উদ্দেশ্য ছিল ঠগ তান্ত্রিকদের এক্সপোজ করা। মানুষের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের অভ্যাসকে বিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন পরিচালক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবটাই হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়াল। এবার আসি এমন এক অভিনেত্রীর কথায়, শুধুমাত্র যার জন্য এই ছবি বসে দেখতে পারেন। তিনি আর কেউ নন, কমেডিয়ান জনি লিভারের-এর গুণী মেয়ে জ্যামি লিভার। তার কমিক টাইমিং এবং অভিনয় দক্ষতা সত্যিই তারিফ যোগ্য। এক কথাই বাপকা বেটি সেপাই ঘোড়া, কুছ নেহি তো থোরা থোরা বললে ভুল হবে, পুরোটাই জ্যামি কমেডিতে ঠাসা। 

মোদ্দা কথা হল, ‘ভূত পুলিশ’ ছবির চিত্রনাট্য এতটাই দুর্বল যে অভিনেতাদের তেমন কিছুই করার ছিল না। শেষমেশ, বলা যায় সাইফ-অর্জুনের ‘ভূত পুলিশ’ ছবি অন্তত মাঝারিমানের একটি সিনেমা। যা কিনা দেখতে বসলে, বেশিক্ষণ দেখা প্রায় অসম্ভব।

আমারসংবাদ/এডি