Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

কেরানীগঞ্জে সবজি বাজারে স্বস্তি, কৃষকের মুখে হাসি

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

নভেম্বর ২৯, ২০২০, ১০:৫৫ এএম


কেরানীগঞ্জে সবজি বাজারে স্বস্তি, কৃষকের মুখে হাসি

একটা সময় ঢাকা শহরের শাক সবজির অক্সিজেন ভাবা হতো কেরানীগঞ্জকে। শহরের শাক সবজির বিশাল অংশের যোগান দিতো কেরানীগঞ্জ ও তার আশপাশ এলাকার কৃষকরা। কিন্তু শিল্পায়ন ও নগরায়ণের চ্যালেঞ্জে হেরে বসে ছিলো এই এলাকার কৃষকরা। কোন্ডা থেকে হযরতপুর হয়ে পাশের ভাকুর্তা ও হেমায়েতপুর জুড়ে ছিলো শাক সবজির বিশাল ভান্ডার। এই এলাকার কৃষকেরা ধান পাটের চেয়ে সবজির দিকেই দেশি মনোযোগী। 

কিন্তু ঢাকা শহরের জনবসতি বৃদ্ধি ও ভূমি দস্যুদের চাপ সইতে পারেনি কেরানীগঞ্জে। উপজেলার শুভাঢ্যা, কোন্ডা, শাক্তা অনেক আগেই চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোন মতে টিকে আছে রোহিতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, হযরতপুরসহ কিছু এলাকা। তাই কম জায়গায় উচ্চ ফলনশীল ও দামি সবজি চাষ করে ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে এসব এলাকার কৃষকেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যায় কয়েক দফা লোকসানের পর কেরানীগঞ্জের কৃষকরা একটু খুশি। মাঠে মাঠে যেনো সবুজের হাসি। কেউ ক্ষেতের সবজি তোলা নিয়ে ব্যস্ত, কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউ কেউ আবার জমি প্রস্তুতি করছে আবাদের জন্য। সবমিলে শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, কাঁচামরিচ, মূলা, করলা, লাউ, ঢেঁড়স, গাঁজর, লালশাক, পালংশাক, নাপা শাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে আছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। যা সকাল হলেই শোভা বাড়ায় বাজারগুলোর। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক ডাকে ভারী হয়ে উঠে বাজারের চার পাশ। ফুলকপি, বাধাকপি, লাউ, কুমড়া আর বাহারি শাক সবজিগুলোকে দেখলেই মনে হয় যেন গুছানো বাগান।

হযরতপুরের সবজি চাষী কবির হোসেন দৈনিক আমার সংবাদকে বলে, দুই দফা বন্যার পানিতে প্রায় লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন লাল শাক, পালন শাক, শষা ও ধুন্দুল বিক্রি করে ক্ষতি পোষাতে চেষ্টা করছি। প্রথমদিকে সবজির দাম ভালো থাকলেও এখন দাম পাচ্ছি না। আমাদের তুলনায় খুচরা বিক্রেতারা বেশি লাভবান হচ্ছে।

রুহিতপুরে চাষি আব্দুল জলিল বললেন প্রায় একই কথা! দামের সময় ফসল পাইনি। এখন ভালো ফসল হলেও দাম নেই তেমন। তবে বাজার এমন থাকলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। আর সরকারে পক্ষ থেকে যে বীজ, সার ও ঔষধ দেওয়া হয় তাও অপ্রতুল।

এখন প্রতি পিছ লাউ বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা যা কিছু দিন আগেও ছিলো ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ফুল কপি ২০ থেকে ৪০, বাধা কপি ৩০ থেকে ৪০, সিমের কেজি ৬০/৭০ টাকা এবং শাক বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৫ থেকে  ২০/৩০ টাকা আঁটি।

কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর, কলাতিয়া, আটিবাজার, ভাওয়ার ভিটির হাট গুলো বেশি জমজমাট। বাজার গুলোতে ফজর নামাজের আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় কেনাবেচার। সকাল ৮টার আগেই বেচা-কেন শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হচ্ছে। সকাল সকাল বাজারের কাজ শেষ করে নতুন দমে বুনতে শুরু করে সোনালী স্বপ্ন।  

কলাতিয়া সবজি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খুব ভোরে কলাতিয়া, তারানগর, হয়রতপুরের বিভিন্ন জায়গা হতে টাটকা শাক সবজি নিয়ে আসছে কৃষকরা। আর কেরানীগঞ্জের সব চেয়ে বেশি সবজি আসে এখানেই। তাই বেঁচাও কেনা প্রচুর। এখানে স্থানীয় ব্যবসায়ী ছাড়াও শহরের বড় বড় পাইকাররা ট্রাক, পিকাপ, সিএনজি নিয়ে চলে আসে টাটকা শাক সবজি নিতে। তাই স্থানীয় বাজারসহ ঢাকা শহরবাসীর চাহিদাও মিটাচ্ছে কেরানীগঞ্জের শাক-সবজি। পর্যন্ত শাক সবজি বাজারে উঠায় দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে।

শহরের মিরপুর কৃষি মার্কেট থেকে আসা ব্যবসায়ী জিয়া জানান, এই এলাকার শাক সবজির চাহিদা বেশি শরের মানুষের কাছে, তাই কাওরানবাজার রেখে এখানে চলে আসি। লাভও বেশি এখানকার শাক সবজি বেচে।

মোহাম্মদপুর টাউন হল থেকে আসা আশিক জানান, মোহাম্মদপুরবাসীর প্রথম পছন্দ কেরানীগঞ্জের শাক সবজি। তাই আমরা একটু বেশি দামে হলেও এখন থেকেই সবজি কিনি। চাহিদা ভালো হওয়ায় লাভও ভালো হয়। 

কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল আমীন বলেন, আমরা কেরানীগঞ্জের কৃষি নিয়ে ব্যাপক কাজ করছি। গতবারের তুলনায় এবার জমির পরিমাণ কম হলেও উৎপাদনের লক্ষ মাত্র বেশি। গতবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে উপজেলায়  ৩৩০২ হেক্টর জমিতে ৭০১৫৮ মেট্রিকটন লক্ষ মাত্রা ছিলো এবার আরও বেশি আশা করছি। আর আমরা বিষ মুক্ত নিরাপদ শাক সবজির দিকে নজর রাখছি।

আমারসংবাদ/কেএস