Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

মরিচ চাষেই ভাগ্য বদল মমিনের

ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২১, ০৯:৫০ এএম


মরিচ চাষেই ভাগ্য বদল মমিনের

তখন পড়ন্ত বিকেল, পূবের সূর্যটা হেলে গেছে পশ্চিমাকাশে। শেষ বিকেলের হেলে পড়া সূর্যের লালচে আভায় চিকচিক চিকচিক করছিল শংকোষ নদীর তীর ঘেঁষা দিগন্ত জোড়া সবুজে মরিচের ক্ষেত। 

সরেজমিনে গত কয়েকদিনের শৈত্য প্রবাহ আর গাঢ় কুয়াশায় মরিচের ক্ষতি হয়েছে কিনা তা জানতে গিয়ে ক্ষেতের এদিক সেদিক তাকাতেই পরম মমতায় এক ব্যক্তিকে মরিচের পাতা ও ডগা স্পর্শ করতে দেখে নাম জানতে চাইলে তিনি নিজেকে মমিন নামে পরিচয় দেন। তিনি নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের মোল্লা পাড়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা। দুই ছেলে তিন মেয়ে আর এতিম দুই ভাতিজী নিয়ে টানাপোড়েনের তার সংসার।

জমাজমি বলতে বসতভিটে ছাড়া আর কিছু নেই। দু'হাতের উপরেই সংসার চলে। পরিবারের অন্য সব সদস্য কর্মক্ষম না হওয়ায় একা-একা পরিবারের ভরণপোষণ ও জোগাতে অনেক কষ্টে তার সংসার চালাতে হত। এভাবে কেটে যায় তার ১৫টি বছর। পরে পরিবারে সচ্ছলতা আনতে ধারকর্জ করে শুরু করেন কাঁচা মরিচের ব্যবসা। ব্যবসার মাল জোগান দিতে আশপাশের ক্ষেত-খামারে কখনো সাইকেলে আবার কখনো পায়ে হেঁটে হেঁটে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে মরিচ কিনতেন তিনি, বেঁচতেন বিভিন্ন হাটবাজারে। এ থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে যেন লবণ আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা তার। তারপরেও মনোবল হারায়নি মমিন। পরিবারে সচ্ছলতা আর নিজেকে স্বাবলম্বী করতে আরো ভালো কিছু করার প্রত্যয়ে গত তিন বছর আগে সাত টাকা হারে মাসিক সুদে একলক্ষ টাকা নিয়ে মরিচ চাষের লক্ষ্যে সংকোষের নদীর তীরবর্তী আট বিঘা জমি বন্ধক দেন তিনি। 

প্রতিবারের মতো এবারেও তিনি সে জমিগুলোতে মরিচ করেছেন। ফলনও বেশ ভাল হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি দুই ধাপে ১৫০ মণ মরিচ তুলেছেন তিনি। এই দুইধাপে মরিচ বিক্রি করে তিনি ঋণ সহ দোকানের বাকিবকেয়া সব পরিশোধ করেছেন। আরো আরো একবার মরিচ উঠবে তার। মরিচ চাষাবাদে খরচাপাতি হিসাব করে দেখা যায়- আর কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে শেষ ধাপের মত মরিচ তুলে বিক্রি করলে তা প্রায় দেড় থেকে প্রায় দুই লক্ষ টাকা ঘরে উঠবে তার। প্রথম থেকেই তিনি মরিচ চাষাবাদে কখনো লোকসানের মুখ দেখেননি, বরং বেশ লাভের মুখ দেখেছেন তিনি। এভাবেই আস্তে আস্তে তার সংসারে সচ্ছলতা এসে যায়। এসব গল্পের তালেতালে এ প্রতিবেদককে বলছিলেন তিনি।

আলাপের এক পর্যায়ে এখন কেমন চলছে তার জীবন জীবিকা, মরিচের কেমন ফলন হয়েছে, মরিচ চাষাবাদে যা আয় হয় তা দিয়ে তিনি স্বাবলম্বী কিনা, আর কৃষিতে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা ইত্যাদি সব জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আল্লাহ রহমতে এখন বেশ খুব ভাল আছি। যতদিন থেকে মরিচ আবাদ করছি ততদিন থেকে সংসার চালাতে আর কোনো কষ্ট হয় না। এবার বেশ ভাল ফলন হয়েছে। আশা করছি এই ৪/৫ মাস ধরে মরিচ আবাদে দেনাদারী ও খরচাপাতি শেষে প্রায় দুই থেকে আড়াইলাখ টাকা ঘরে আসবে আমার। 

সে সাথে তিনি মরিচ চাষাবাদে কোনো সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পাননি এ কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, সরকারি-বেসরকারি কোনো অর্থ সহযোগিতা পেলে তার খুব উপকার হত। 

মরিচ চাষে সফল কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সফল কিনা জানি না। তবে আমার এখানে পর্যায়ক্রমে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৬০০-৭০০জন কৃষি শ্রমিক কাজ করে তাদের সংসার চালায়। আমরাও এই মরিচের উপরেই ৯ জন মানুষ বাঁচি, কোনো সমস্যা হয় না। তবে সফল না হলেও তিনি যে এখন স্বাবলম্বী তা অনায়াসেই স্বীকার করেন তিনি। 

আমারসংবাদ/কেএস