চলাচলের অযোগ্য কালাইয়ের বোড়াই-ধুনট সড়ক

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২২, ০৩:০৩ পিএম

সংস্কারের অভাবে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বোড়াই-ধুনট প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা সংযোগ রাস্তাটি চলাচলের জন্য একেবারেই অযোগ্য হয়েছে। রাস্তার উন্নয়ন না হওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ মুখ থুবড়ে পড়েছে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ ছয় গ্রামের প্রায় নয় হাজার মানুষ চলাচল করে। 

গ্রামের মানুষের উৎপাদিত কৃষিপণ্য হাটবাজারে নিয়ে যেতে হয় এ রাস্তা দিয়ে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কাঁচা রাস্তাটি অনেকটাই ভেঙ্গে গেছে এবং বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙ্গে যাওয়ার স্থানে স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকো তৈরী করে চলাচল করছেন। স্থানীয় জন-প্রতিনিধি ও এমপি’র অবহেলার কারণে এই কাঁচা সংযোগ রাস্তাটি বছরের পর বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ।

এলাকাবাসি জানান, আশপাশের কাঁচা রাস্তাগুলো পাকাকরণ হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও পূর্ণাঙ্গভাবে এ রাস্তাটি পাকা করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচন এলেই  প্রার্থী ও রাজনৈতিক নেতারা রাস্তাটি পাকা করার প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচিত হওয়ার পর পাকা করা তো দূরের কথা মেরামত করারও কোনো উদ্যোগ নেন না। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা মাঝে এক-হাটু পানি জমে থাকে। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজারো লোকেরা পানি, কাঁদা ভেঙ্গে যাতায়াত করতে হয়। 

ভ্যান, অটোভ্যান, ইজিবাইক, বাই-সাইকেল, মোটরসাইকেল তো দূরের কথা, মানুষ পায়ে হেঁটে চলতেও কষ্টের শিকার হতে হয়। এ সড়ক দিয়ে উপজেলার আরবাব, ধুনট, বাগুইল, বাগুনী, বোড়াই ও বিনোইল গ্রামের প্রায় নয় হাজার মানুষের চলাচলের এক মাত্র এই রাস্তা। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় গ্রামবাসী বাধ্য হয়েই কাঁদা-পানি মাড়িয়ে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে।

সরেজমিন দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে উপজেলার বোড়াই-ধুনট প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা সংযোগ রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। আর তাতে প্রতিনিয়ত জমছে বৃষ্টির পানি। পায়ে হেঁটে চলাচল করাও এখন কষ্টসাধ্য। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার মাটি পিচ্ছিল হয়ে পথচারীদের পা পিছলে গিয়ে শরীরে জামা-কাপর কাঁদা-পানি দিয়ে অপরিস্কার হচ্ছে। 

কাদায় চলতে গিয়ে অনেকেই পড়ে গিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার আগেই বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হন। বিশেষ করে প্রয়োজনে অসুস্থ রোগী ও কৃষিপণ্য নিয়ে রাস্তার অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কাঁচা রাস্তাটি মাঝখানে ভেঙ্গে গেছে। সেখানে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরী করে চলাচল করছেন। 

এই রাস্তার কারণে এলাকার মানুষের পরিবহনের ব্যয় ও ভোগান্তি হচ্ছে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ লোকজন এ রাস্তা দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। হাজার-হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র বোড়াই-ধুনট কাঁচা সংযোগ রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। 

উপজেলার ধুনট গ্রামের হবিবর হোসেন নামে এক সমাজসেবক বলেন, উপজেলার বোড়াই-ধুনট প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা সংযোগ রাস্তাটি পাকা করন হলে একদিকে যেমন বিভিন্ন গ্রামের ছাত্র-ছাত্রী ও লোকজনের যাতায়াতে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে মুমূর্ষু রোগী বহনে বেগ পেতে হবে না। শ্রমজীবী মানুষেরা ভ্যান, অটোভ্যান, ইজিবাইক, অটোরিকশা চালিয়ে সহজে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। এলাকার কৃষকরা ধান, পাট, আলু, কাঁচা ফসল কম খরচে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন।

উপজেলার আরবাব গ্রামের মো.মোমিন, জলিলসহ অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন, আমরা চরম অবহেলিত এলাকায় বসবাস করি। গ্রামীণ এই অবহেলিত রাস্তাটিতে এখন পর্যন্ত আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। জরুরি মুহূর্তে বয়স্ক মানুষ ও রোগীকে কাঁধ করে পাকা সড়কে নিয়ে যেতে হয়। চলাচলের জন্য আর কোনো রাস্তা নেই। গ্রামের মানুষের চালাচলের জন্য মাঝে মধ্যে নিজেদের উদ্যোগেই এই কাঁচা রাস্তাটি মাটি ও বাঁশ দিয়ে মেরামত করা হয়। আমরা এই কাঁচা রাস্তাটি খুব দ্রুত পাকাকরণ চাই।

উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আমি এ এলাকার মেম্বার হিসেবে সব সময় চাই এই রাস্তাটি পাকারন হোক। কারণ বোড়াই-ধুনট প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা সংযোগ রাস্তাটি পাকা করন হলে এলাকার মানুষের চালাচলের অনেক সুবিধা হবে। কিন্তু এই রাস্তাটি পাকা করতে হলে আমাদের জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন-এর সু-নজরের প্রয়োজন। কারণ তিনিই পারেন এ রাস্তাটি পাকা করনের কাজ করতে।

কালাই উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বোড়াই-ধুনট কাঁচা সংযোগ রাস্তাটি আড়াইশো কিলোমিটা পাকাকরণের কাজ আমাদের কাছে এসেছে। আর বাকিটা এলাকাবাসীর চলাচলের উপযুক্ত করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 আমারসংবাদ/এআই