অবশেষে অভিমান ভাঙলো ‘রাষ্ট্রপতির’

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, ফেনী প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩, ০৬:৫৮ পিএম

অবশেষে দীর্ঘ ১৬ বছর পর অভিমান ভাঙলো নিজেকে ‘ফেনী জেলার রাষ্ট্রপতি’ পরিচয় দেয়া সেই আতাউর রহমান বুলবুল (৫০) এর। অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ফেনী শহরের রাস্তা, বিভিন্ন ভবনের নিচে ও রেলস্টেশনে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে থাকতেন তিনি। পায়ে হেটে ঘুরে বেড়াতেন শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

সেই বুলবুল শনিবার (২৮ জানুয়ারি) অভিমান ভেঙ্গে ফেনী ছেড়ে নিজ জেলা জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। তবে জীবিত নয়; যাচ্ছেন লাশ হয়ে। জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের আবদুস সাত্তার মাস্টারের ছেলে বুলবুল।

শহরের অলি-গলিতে আরও কতশত পাগলের আনাগোনা, কে রাখে কার খবর। কিন্তু অদ্ভুত চরিত্রের বুলবুলকে চেনার আলাদা কারণ ছিলো। ছেঁড়া প্লাষ্টিক বস্তার এক টুকরো পরেই সারা শহর ঘুরে বেড়াতেন। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব সময় একভাবেই থাকতেন।  দেখতে পাগল মনে হলেও ইংরেজি পত্রিকা পড়তে পারতেন। পৃথিবীর নানা প্রান্তের ভূরাজনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সব জানতেন। বলতে দিলে সারা পৃথিবীর আনাচ-কানাচের খবর বলে দিতে পারতেন। দেশের রাজনীতির মূল্যায়নও করতে পারতেন সুচারুভাবে।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে জয়পুরহাট থেকে ফেনীতে আসার পর বুলবুলের নাম পরিচয় না মিললেও মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরেই পরিচয় মিলেছে অভাগার।
বুলবুলের ভাই রেজাউল করিম রিপন জানিয়েছে, তার ভাই বুলবুল ১৯৮৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করার পর মানসিক সমস্যাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। ২০০৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর হঠাৎ বুলবুল নিখোঁজ হয়।

রিপন আরও জানায়, প্রায় ১০ বছর পর আমরা বুলবুলের ফেনীতে থাকার বিষয়টি জানতে পেরে তাকে নিয়ে আসতে যাই। কিন্তু তাকে অনেক জোরজবরদস্তি করেও আনতে পারিনি। এরপর থেকে যাতায়াতের দূরত্বের কারণে বছরের পর বছর তার খবরাখবর আমরা আর পাইনি।

দীর্ঘ সময় ফেনী শহরে তার চলাফেরা হলেও কখনও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত করেননি বুলবুল। নিজের মতো করেই থাকতেন। রাস্তা-ঘাট, রেলপথ, বাসস্ট্যান্ডসহ ফেনী শহরের সব জায়গায় ছিল বুলবুলের পদচারণা খাওয়া-দাওয়ায় অনাগ্রহী এ ব্যক্তির সাথে দেখা হয়নি এমন ব্যক্তি ফেনীর বাসিন্দাদের মাঝে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বুলবুল বেশ কিছু দিন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে অজ্ঞাত হিসেবে চিকিৎসাধীন থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়’র তত্বাবধানে চিকিৎসাকালীন মারা যাওয়ার পর বুলবুলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিলে পরিচয় মেলে তার। গতকাল শনিবার দুপুরে বুলবুলের ছোট ভাই স্থানীয় বড়াইল ইউপি সদস্য মশিউর রহমান লেবু তার মরদেহ নিয়ে যায়। বুলবুলের লাশ জয়পুরহাটে তার মা-বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হবে।

কেএস