ফরিদপুর-১ আসন

সভা-সমাবেশে ব্যস্ত আ.লীগ-স্বতন্ত্র, পিছিয়ে নেই বিএনএম

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতো ঘনিয়ে আসছে ফরিদপুর-১ আসনে (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) নির্বাচনি এলাকা ততোই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াচ্ছে। নির্বাচনী মাঠ গরম হয়ে উঠছে। ভোটের মাঠে বিএনপি-জামায়াত না থাকলেও ভোটের মাঠ গরম করছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী, বিএনএম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে এ আসনে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠ সরগরম করছেন তিন প্রার্থী। আসনটি স্বাধীনতা পর থেকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত।

ফরিদপুর-১ আসনে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দুইবার সংসদ সদস্য ছিলেন বর্তমান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার আব্দুর রহমান। দুইবার এমপি হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করে আলোচনায় আসেন তিনি। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন তিনি। ওই নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে এ আসনে নৌকা প্রতীক নৌকা নিয়ে সংসদে যান সাবেক এলজিআরডি সচিব মনজুর হোসেন। তিনি এলাকায় তেমন কোন উন্নয়ন ও সময় দেননি। যার কারনে রাজনৈতিক নেতাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে জোরেসোরেই আলোচনায় আসেন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে জায়গা করে নেওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুইবারের আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার আব্দুর রহমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পান।

[271841]

তিনি ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সময় বর্তমান বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক দুইবারের আরেক সংসদ সদস্য (১৯৯৬ ও ২০০১) কাজী সিরাজুল ইসলাম ২৫ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারান। আব্দুর রহমান দশম সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী কামরুজ্জামান মৃধার কাগজ পত্রের জটিলতায় মনোনয়ন পত্র বাতিল হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আব্দুর রহমান।

গত কয়েক বছর আব্দুর রহমান নিজের দক্ষতায় নির্বাচনী এলাকায় দলকে সাংগঠনিকভাবে একতাবদ্ধ রেখেছেন। যার ফলে এ আসনের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৭৫ ভাগ নেতাকর্মীরাই তার সমর্থক। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীরা এক হয়ে নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছেন। দলের সিনিয়র নেতারা প্রতিনিয়ত আসনটির বিভিন্ন এলাকা, পাড়া মহল্লায় নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন জোরেশোরে। বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশে উঠান বৈঠকসহ নানামুখী প্রচারণায় মাঠ কাঁপাচ্ছেন নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। এ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের আসন হিসেবে ফরিদপুর-১ আসনটি পরিচিত। বরাবরের মত শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন বলে বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারমান এম এম মোশাররফ হোসেন জানান।

[271847]

অন্যদিকে তার প্রতিদ্ব›দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৪ বারের বিভিন্ন দল থেকে সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর লড়ছেন নোঙর প্রতীক নিয়ে। নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে তিনি বিএনএম নামে নতুন দল গঠন করেন। তার সাথে তিন উপজেলার বিএনপির অধিকাংশ ছোটপদের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে নির্বাচন করছেন। তবে বড় বিএনপির পদধারী নেতাকর্মীরা তলে তলে শাহ্ জাফরকে ইতিমধ্যেই সমর্থন দিয়ে ফেলেছেন। শাহ্ জাফরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অন্য দুই প্রার্থীর মত বড় কোন সভা-সমাবেশ করতে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে রাজনৈতিক দুই নেতার মাঝখানে ফরিদপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে মাঠে লড়ছেন সাংবাদিক আরিফুর রহমান দোলন। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর চেয়ে প্রচার প্রচারণায় পিছিয়ে নেই তিনি। সভা সমাবেশ, শোডাউনে করে নির্বাচনী মাঠ সরগরম করে তুলেছেন দোলন। আওয়ামী লীগের ও স্বতন্ত্র কিছু জনপ্রতিনিধি ঈগল প্রতীককে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনী মাঠে আরিফুর রহমান দোলনের সাথে একাত্বতা হয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। 

[271849]
ব্যানার পোস্টার ও প্রচার প্রচারণায় পৌর শহর থেকে শুরু করে গ্রাম, পাড়া মহল্লার চায়ের দোকানেও নির্বাচনি হাওয়া বইছে। কোথাও কোথাও ঘটছে দলীয় ও স্বতন্ত্র কর্মীদের রেশারেশি। তবে নির্বাচনী মাঠ সুষ্ঠু স্বাভাবিক রাখতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যেই গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে মাঠে নেমেছেন বিজিবি।

এ আসনে আরো জাতীয় পার্টির আখতারুজ্জামান খান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির নুর ইসলাম শিকদার (একতারা) নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে ভোটের মাঠে তাদের তেমন কোন পদচারণা দেখা যাচ্ছে না। পোষ্টার ফেস্টুনও চোখে পড়েনা।

[271843]

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর-১ আসনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মেহেদী হাসান জানান, নির্বাচনি মাঠে কোনো প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতিমধেই কয়েকজনকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা করা হয়েছে। এলাকায় নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এআরএস