কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না মাটিদস্যুদের

ফেনী প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৪, ০২:৪৮ পিএম

ফেনীর ফুলগাজীতে মাটিদস্যুদের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের চলছে চোর পুলিশ খেলা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে, দিনে মাটি কাটা বন্ধ থাকলেও রাত ১টার পর শুরু হয় মাটি কাটার মহোৎসব।

গত বছর দিনে না কাটলেও শুরু হতো রাত ৮টার পরে মাটি কাটা। এটা ছিল ওপেন সিক্রেট। মাটির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়ে উপজেলার বেশ কয়েকজন শূন্য থেকে এখন কোটিপতির তালিকায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে সর্বত্র একই দৃশ্য। এই কারবারে জড়িত রয়েছে উপজেলার অর্ধশত ছোট বড় ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে রয়েছে সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও ইউপি সদস্যসহ অনেকেই।

এদের মধ্যে মাটির ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন ফুলগাজী বাজারের সার দোকানের ম্যানেজার বৈরাগপুর গ্রামের বিজয় বাবু ও তার ভাই প্রণয়। নতুন মুন্সিরহাট বাজারের ট্রাক্টর চালক মনির ও নবী দুই ভাই, আমজাদ হাট বাজারের পিকআপ চালক আলমগীর, আমজাদ হাট বাজারের ডেকোরেটর বয় মাজহারউল্ল্যাসহ আরও অনেকে।

এদের প্রত্যেকের কাছে রয়েছে কোটি টাকার পিকআপ ও এস্কেভেটর। ফুলগাজীতে ও ফুলগাজী-পরশুরাম সীমান্তে ইটভাটা রয়েছে ২৩টি। এর মধ্যে তিনটি বন্ধ থাকলেও ২০টি সচল। এই ২০টি ইট ভাটায় ইট তৈরি হয় প্রতি বছর ২০ কোটি পিস এরও অধিক।

এই ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটির জোগান দিতে উপজেলার সর্বত্র ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে ইটভাটাগুলো।

ইটভাটাগুলোতে কাঁচামাল হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমির টপসয়েল। ইটভাটাগুলো গড়ে তুলেছে-স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও জনবসতি এলাকায়।

পরিবেশ অধিদপ্তর, ইউনিয়ন পরিষদের লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস, ভ্যাটসহ সব কাগজপত্র রীতিমতো নবায়ন করা হয়। উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম রয়েছে। ইউনিয়নে ইটভাটা গড়ে উঠেছে ৮টি। এসব ইটভাটার কারণেই এলাকার জনসাধারণ রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

মাটি ব্যবস্থাপনা ও বালুমহাল, ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান থেকে বাঁচতে মাটির ব্যবসায়ীরা উপজেলার সামনে, বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে লোক নিয়োগ করে রাখে সারারাত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুলগাজী বাজারের এক মাটি কারবারি জানান, তারা প্রতিমাসে থানায় ৩৫ হাজার দেন। রাতে প্রতিটি মাটি কাটার পয়েন্টে টহল পুলিশকে ১ হাজার টাকা করে দিতে হয় এবং উপজেলা কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক তাদের প্রতিটা পয়েন্ট থেকে টাকা নিয়েছে নিউজ করবে না এই মর্মে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভুঁইয়া বলেন, মাটি কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। শুধুমাত্র মোবাইল কোর্ট চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকদের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। জানুয়ারিতে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও ফেব্রুয়ারি মাসেই এর পরিমাণ বেড়ে ৬ লাখ টাকা হয়েছে। বেশিরভাগ সময় দিনের তুলনায় রাতে অভিযান হয়েছে।

ইএইচ