কুষ্টিয়ায় আ.লীগ নেতার গুলিতে আহত ২, গ্রেপ্তার তিন

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি: প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৪, ১১:৫৩ এএম

কুষ্টিয়ায় কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জের ধরে এবার কুষ্টিয়া-২ আসন মিরপুরের স্বতন্ত্র-এমপির সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও তার সমর্থকেরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে স্বতন্ত্র এমপির ২ সমর্থক।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা আতাহার আলী’র লাইসেন্সকৃত পিস্তলের ছোড়া গুলিতে রেজাউল হক (৫০) নামে পথচারী এক ভ্যানচালক এবং হাসেম গাজী (৫৫) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে একজনের অবস্থা অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। 

এই ঘটনায় মিরপুর থানা পুলিশ সাবেক চেয়ারম্যান ও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ৩জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আটক করেছে।

 শনিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া বাজারে গুলিবর্ষণের এ ঘটনাটি ঘটেছে। 

গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন- কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন গাজীর ছেলে
আওয়ামী লীগ কর্মী হাসেম গাজী (৫৫) এবং বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া এলাকার মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে ভ্যান চালক রেজাউল (৫০)।  

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাহার আলী লোক পাঠিয়ে নিজ বাড়ির সামনে থেকে হাসেম গাজীকে শিমুলিয়া বাজারে ডেকে এনে প্রকাশ্যে লোকজনের সামনে কথাকাটাকাটি শুরু করে।

এক পর্যায়ে আতাহার আলী নিজ নামীয় লাইসেন্সকৃত নাইন এমএম পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এসময় সেখানে থাকা ভ্যানচালক রেজাউল ও হাশেম গাজী নাদের দুই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত জখম গুরুতর আহত দুইজনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।

গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত হাশেম গাজীর ছেলে সোহেল (২৭) জানান, গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার বাবা নৌকা মার্কার ভোট না করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক প্রতীকের ভোট করাকে কেন্দ্র করে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আতাহার আলীর সাথে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। বেশ কিছুদিন ধরে আতাহারের ক্যাডার বাহিনী আমার বাবাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। গত কয়েকদিন আগে আমাদের বাড়ির উঠানে ককটেল নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আতাহারের লোকজন। আজকেও আতাহার আলী একদম পরিকল্পিত ভাবে লোকজন সাথে করে এসে বিদেশি পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ হামলা করেছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: তাপস কুমার সরকার জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুজনের মধ্যে হাশেম গাজী(৫৫) নামের রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ জানান, শনিবার সন্ধ্যায় গুলিবর্ষণে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহতের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাহার আলী ও তার ভাতিজা রিগ্যান এবং ভাগ্নে আয়নালকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এছাড়া ঘটনাস্থলে নতুন করে উত্তেজনা ঠেকাতে উক্ত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এই ঘটনায় জাসদ সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনুর দিকে আঙুল তুলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মিরপুর-ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া-২) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কামারুল আরেফীন । তিনি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন চলাকালে হাসানুল হক ইনুর সাথে থেকে প্রশাসনের ছত্রছায়া অস্ত্র উঁচু করে আতাহার মাস্তানি করে বেড়িয়েছে। আমরা অসহায় এর মত তাকিয়ে থেকেছি। সে সময় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আজ নিরীহ তিনটি মানুষ গুলিতে আহত হতো না।

বিআরইউ