বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তে মরণফাঁদ: মাইন বিস্ফোরণে একের পর এক ক্ষতবিক্ষত জীবন

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৫, ১১:০৪ এএম

বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্ত এখন আর শুধু একটি ভূ-রাজনৈতিক রেখা নয়—এ যেন প্রাণঘাতী মরণফাঁদ। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ আর সবুজ বনভূমির আড়ালে লুকিয়ে আছে মৃত্যু। মাটির নিচে পুঁতে রাখা মাইনগুলো বিস্ফোরিত হচ্ছে হঠাৎ, কেড়ে নিচ্ছে পা, দৃষ্টি কিংবা পুরো জীবনটাই।

সর্বশেষ মর্মান্তিক ঘটনায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে এক কিশোর মারাত্মক আহত হয়েছে মাইন বিস্ফোরণে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে পাহাড়। স্থানীয়রা আতঙ্কে—জমিতে যাবেন না, পশু চরাতে যাবেন না, এমনকি শিশুরা আর খেলার মাঠেও পা বাড়ায় না।

সীমান্তের মানুষ বলছেন, এখন জীবন যেন সময় বোমার উপর দাঁড়িয়ে আছে। কখন, কোথায়, কে ছিন্নভিন্ন হবে—তা কেউ জানে না। এইসব বিস্ফোরক বসানো হচ্ছে মূলত মিয়ানমারের ভেতর চলমান সংঘাত—জান্তা বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মধ্যে চলা লড়াইয়ের অংশ হিসেবে। কিন্তু এই লড়াইয়ের ছায়া বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়েছে, আহত করছে নিরীহ মানুষকে।

এর আগেও এই সীমান্ত অঞ্চলে মাইন বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা যুবকসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন বা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়েছেন। অথচ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, বেসামরিক এলাকার আশপাশে এমন বিস্ফোরক বসানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

বান্দরবান জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সীমান্ত এলাকা পর্যাপ্তভাবে মাইনমুক্ত করা না হলে বিপদের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন সীমান্তে এই ধরনের মাইন বিস্ফোরণকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। ইউএনএইচসিআরের মতে, এই পরিস্থিতি শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য নয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণ একদিকে যেমন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে তা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকেও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

‘আমার ছেলেটা খেলতে গিয়েছিল, ফিরল হাসপাতালে এক পা হারিয়ে।’—চোখে পানি নিয়ে বলছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ির এক পিতা। এই চিত্র একক ঘটনা নয়—এটি সীমান্তের বাস্তবতা। একটি বাস্তবতা, যেখানে প্রতিটি পা ফেলাই ভয়।

বিআরইউ