তাজ পোল্ট্রি এন্ড ফিডসের ধোঁয়া-দুর্গন্ধে ‘হাঁসফাঁস’ একলাশপুর

ইমাম উদ্দিন আজাদ, নোয়াখালী প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৫, ১২:২৭ পিএম

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর গ্রামে কে এম তাজ পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিডস লিমিটেডের ধোঁয়া, ধুলাবালি ও দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে কারখানাটি পরিচালিত হওয়ায় ভুক্তভোগীরা গত ১৮ মে শত শত নারী-পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।

কারখানাটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্মাণ হওয়ায় আশপাশের অন্তত ১০০টির বেশি পরিবার শ্বাসকষ্ট, ত্বক রোগসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। এর আশপাশে রয়েছে দুটি মাদ্রাসা ও একটি মসজিদও।

স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন (৬০) বলেন, দুই যুগ ধরে অভিযোগ করে যাচ্ছি, কিন্তু ফল শূন্য। ধোঁয়ার গন্ধে ঘরে থাকা যায় না, ফসলও হয় না। এখন প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজির মামলার ভয় দেখানো হয়।

আরেক বাসিন্দা মিয়া সাহেব (৫০) বলেন, বহু আশা করে ঘর করেছি, সুন্দর একটা গেট দিয়েছি। এখন গেট খোলার সাহস নেই, বাইরে বেরোলেই দুর্গন্ধে মাথা ঘুরে পড়ে যাই।

কারখানার পাশের বাড়ির গৃহবধূ অনু (৬০) বলেন, ভাত-তরকারি ঢেকে রাখলেও ধুলায় খাওয়া যায় না। আমরা বাঁচতে চাই, এভাবে আর থাকা সম্ভব না।

স্থানীয়দের অভিযোগ ও পূর্ববর্তী শুনানির প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মিলন হোসেন গত ২৭ অক্টোবর কারখানাটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তদন্তে দেখা যায়, পরিবেশগত ছাড়পত্রের ৩ ও ৫ নম্বর শর্ত ভেঙে নতুন ড্রায়ার ইউনিট ও বয়লার স্থাপন করে বায়ুদূষণ করা হচ্ছে। এতে স্পষ্টভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ লঙ্ঘিত হয়েছে।

এ জন্য কারখানার মালিক মো. খোরশেদ আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয় (স্মারক ৩৯০, তারিখ: ২৭/১০/২৪)। পরবর্তীতে ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক বরাবর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে নোয়াখালীর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিহির লাল সরদার।

কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ডাকে গেছি, লিখিত বক্তব্য দিয়েছি। ধুলাবালি মেশিনে ধরে রাখি, বাইরে যায় না। কারও জমিও আমরা দখল করিনি।

স্থানীয়রা দাবি করছেন, কারখানাটি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর ধরে আইন ও শর্ত ভঙ্গ করে চলছে। শতাধিক লিখিত অভিযোগ, স্থানীয় প্রতিবাদ ও অধিদপ্তরের প্রতিবেদন সত্ত্বেও এখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

একজন বাসিন্দা লিটন (৪৮) বলেন, আমার জমিতে বর্জ্য ফেলছে। প্রতিবাদ করলেই হয়রানি শুরু হয়।

এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে নোয়াখালীর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিহির লাল সরদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চিঠিতে যা বলা হয়েছে, সেটিই স্যারের অবস্থান।’

বিআরইউ