মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী বেবী নাজনীনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করে আলোচনার জন্ম দেন তিনি।
বেবী নাজনীন পোস্টে মন্তব্য করেন: “এই দেশ শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ। শেখ হাসিনাতেই আস্থা—জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মন্তব্য ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ হলেও, একজন সাবেক জনপ্রতিনিধির সক্রিয় রাজনৈতিক ভূমিকা ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটানোর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার অভিযোগ, বেবী নাজনীন গত পাঁচ বছরে এলাকায় নিয়মিত ছিলেন না। জনপ্রতিনিধি থাকাকালীন সময়ে বহু সভা-সমাবেশে অনুপস্থিত থেকেও তিনি ঢাকায় বসে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সুপারিশপত্র পাঠিয়েছেন। মেয়াদ শেষ হলেও, এসব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের একজন ঠিকাদার জানান, “উন্নয়ন প্রকল্পে দরপত্র জমা দিতে গেলে দেখা যায়, প্রধান সুপারিশকারী হিসেবে বেবী নাজনীন ম্যাডামের নাম। অথচ গত পাঁচ বছরে তাকে এলাকায় দেখা যায়নি। যোগাযোগ করতে বলা হয় ঢাকায় গিয়ে দেখা করতে।”
উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “তিনি বর্তমানে কোনো জনপ্রতিনিধি নন। তবুও মাঝে মাঝে ঢাকায় বসে সুপারিশ পাঠান। প্রশাসনিকভাবে এসব সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়।”
বেবী নাজনীনকে ঘিরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় মোহাম্মদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মৈমুর আলী মৃধা বলেন, “তিনি এখন কোনো পদে নেই। তবুও পুরনো পদবি ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। তার মন্তব্য একপেশে ও বাস্তবতাবিবর্জিত।”
বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মো. আক্তার হোসেন মন্তব্য করেন, “এটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নয়, বরং একটি প্রহসন। এলাকাবাসী তাকে চেনেই না, অথচ ঢাকায় বসে এলাকায় রাজনীতি করছেন।”
মাগুরা-২ আসনে বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বীরেন শিকদারের সঙ্গে একজোট হয়ে বেবী নাজনীন মাগুরায় নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি ও বিভিন্ন প্রকল্পে শত কোটি টাকা লোপাট করেছেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসা পরিচালিত হয়েছে। তিনি বড় অঙ্কের কমিশন ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করতে দিতেন না।”
তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের ব্যক্তিকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেবী নাজনীন বর্তমানে জনপ্রতিনিধি না হলেও তার প্রভাবশালী পরিচয়ের কারণে প্রশাসনের একটি অংশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। এলাকায় সুপারিশ বাণিজ্য ও দলীয় রাজনীতির বাইরের প্রভাব খাটানোর বিষয়েও তদারকি নেই।
মোহাম্মদপুর কলেজপাড়ার বাসিন্দা নাসিরুল ইসলাম বলেন, “কেউ যদি এখন আর জনপ্রতিনিধি না হন, তবুও তার নামে প্রকল্প চলে—তাহলে প্রশ্ন তো উঠবেই।”
বেবী নাজনীনকে একাধিকবার ফোন করা ও বার্তা পাঠানো হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ফলে এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক মো. আবদুল খালেক বলেন, “জনপ্রতিনিধিত্ব না থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ প্রশাসন বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তার করেন, তাহলে তা দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়ায় এবং গণতন্ত্রের মূল্যবোধে আঘাত হানে। প্রশাসনের উচিত এসব প্রভাবশালী সাবেকদের কার্যক্রম তদারকির আওতায় আনা।”
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশ্ন রয়ে যায়—জনপ্রতিনিধি না হয়েও কেউ যদি এলাকায় প্রভাব খাটান, সুপারিশ পাঠান এবং উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করেন, তবে তা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ কবে নেওয়া হবে?
ইএইচ