দিন-রাতের কোনো ভেদাভেদ নেই—মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বরিশাল নগরবাসী। বিশেষ করে রাত গভীর হলেই যেন মশার অত্যাচার কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মশার কারণে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
নগরীর সদর রোড, ফকিরবাড়ি রোড, জর্ডন রোড, ব্রাউন কম্পাউন্ড, পলাশপুর, ভাটারখাল-কেডিসি কলোনি, মোহাম্মদপুর, কাউনিয়া, সাগরদী, ভাটিখানা, নথুল্লাবাদের শাহ পরান সড়ক, বিসিক এলাকা সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে—মশার যন্ত্রণায় অনেক বাসায় দিনের বেলাতেও মশারি টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ কয়েল, স্প্রে কিংবা বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করছেন, তবুও মশার হাত থেকে রেহাই মিলছে না।
এসব এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করায় বদ্ধ পানিতে মশার বংশ বিস্তার বেড়েছে। বাজারের উচ্ছিষ্ট ও বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা সরাসরি ড্রেনে ফেলার কারণে অনেক জায়গায় ড্রেন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৮ জুন) থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) পর্যন্ত ১০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন। জুন মাসজুড়ে গড়ে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে।
কালিবাড়ি রোডের কাগজ ব্যবসায়ী ইব্রাহিম বলেন, “সিটি কর্পোরেশনের মশকনিধন কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে তেমন কার্যক্রম চালাচ্ছে না। নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হয় না। মাঝে মাঝে ছিটালেও কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।”
কালুশাহ সড়কের ব্যবসায়ী একরামুল হুদা বাপ্পি বলেন, “ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তি নেই। কয়েল, স্প্রে সব ব্যবহার করেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই নেই। মশকনিধন কর্মীরা মাঝে মাঝে ওষুধ ছিটিয়ে চলে যান, কিন্তু আসলেই ওষুধ আছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।”
ফকিরবাড়ি রোডের বাসিন্দা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “দিন-রাত সব সময়ই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। সন্তানদের দিনেও মশারির নিচে রাখতে হয়। আশেপাশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী থাকায় বাড়তি চিন্তায় রয়েছি।”
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের মশকনিধন কর্মী কামাল বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডে সপ্তাহে একবার করে ওষুধ ছিটানো হয়। কিন্তু মশা কমছে না, কারণ আমরা তো ওষুধ তৈরি করি না। লোকজনও সচেতন নয়—ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলে, তাতেই মশা বাড়ছে।”
সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন অনেক এলাকায় সাবেক সরকারের সময় মশার ওষুধ নিয়মিত ছিটানো হলেও বর্তমানে তেমন কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
শহরবাসীর মতে, মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হলে ওষুধ ক্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। মশকনিধন কার্যক্রম মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি ড্রেন-খাল পরিচ্ছন্ন রাখা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জোরদার করা, মশার লার্ভা ধ্বংসে কার্যকর ওষুধ প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারীর কাছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম সন্তোষজনক নয়। নগরীর খালগুলো অপরিচ্ছন্ন ও বদ্ধ হয়ে পড়েছে, যা জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে।
নাগরিকরা অবিলম্বে বরিশালে মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
ইএইচ