বরিশাল সদর উপজেলাবাসী দীর্ঘ চার দশক ধরে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত—এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা।
তাদের দাবি, বিভিন্ন সরকারের শাসনামলে এ উপজেলায় যে সামান্য কিছু উন্নয়ন হয়েছে, তার মান ছিল নিম্নমানের ও লোক দেখানো। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। হাতে গোনা কিছু সড়ক ছাড়া বেশিরভাগ রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
তীব্র দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হিসেবে স্থানীয়রা উল্লেখ করেছেন ভাঙাচোরা ব্রিজ-কালভার্ট, নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও বর্ষা মৌসুমে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। নদীবেষ্টিত এই উপজেলায় বর্ষাকালে অনেক গ্রামে নৌকা হয়ে ওঠে একমাত্র চলাচলের ভরসা।
বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে আশার বাণী শোনান। তিনি জানান, সদর উপজেলার সড়কগুলোর বর্তমান অবস্থার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বরিশাল সদর উপজেলা ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এর মোট আয়তন প্রায় ২৫৬ বর্গকিলোমিটার। কাগজে-কলমে উপজেলার সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১,২৬৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৫০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক হিসেবে দেখানো হলেও বাস্তবে বেশিরভাগই বর্তমানে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আর ৭৮১ কিলোমিটার সড়ক এখনও কাঁচা। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সদর উপজেলার চরবাড়িয়া, সায়েস্তাবাদ, চরকাউয়া, চন্দ্রমোহন ইউনিয়নসহ অনেক স্থানের রাস্তাগুলো এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কাগাশুরা-মীরগঞ্জ এবং লাকুটিয়া সড়কের বিভিন্ন অংশের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, অনেক জায়গায় রাস্তা বলে চিনে নেওয়াই কঠিন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত সরকারের সময় জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। বরং বর্ষায় কাদা ও জলাবদ্ধতায় মানুষের চলাচল হয়ে পড়ে দুর্বিষহ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরিশাল শাখার সমন্বয়কারী মো. রফিকুল আলম বলেন, “উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাই। আমরা চাই, এবারের বাজেটে এসব এলাকা উন্নয়নের জন্য যথাযথ বরাদ্দ রাখা হোক।” তিনি আরও বলেন, “উন্নয়ন অব্যাহত পদ্ধতিতে হওয়া দরকার—সেটি যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন। জনস্বার্থের প্রশ্নে দলীয় রাজনীতি যেন প্রাধান্য না পায়।”
উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ মাইনুল মাহমুদ জানান, বিগত বছরগুলোতে বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে বড় পরিসরে সড়ক মেরামত সম্ভব হয়নি। তবে একটি বড় প্রকল্পের আওতায় বরিশাল সদর উপজেলায় ২ থেকে ৩ শ’ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, “সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং খুব শিগগিরই রাস্তাগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে।”
এদিকে সদর উপজেলার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্তত রাস্তাগুলোর চলাচলযোগ্য সংস্কার চান এবং বর্তমান সরকারের কাছে স্থায়ী উন্নয়ন কার্যক্রমের দাবি জানিয়েছেন।
ইএইচ