মৌসুমি বলয় ‘ঈশান’-এর প্রভাবে টানা ভারী বর্ষণের কারণে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও জলাবদ্ধতায় জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। অধিকাংশ এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বুধবার মধ্যরাত থেকে বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে পানি বাড়তে থাকে।
বৃষ্টি কমলে পানি কিছুটা কমে, আবার বৃষ্টি বাড়লেই পানি দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ১৮ ইঞ্চি পরিমাণ জলকপাট খুলে দিয়ে পানি কর্ণফুলী নদীতে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বাঘাইছড়ি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “গত ১০-১৫ দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতে ফসলি জমি ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং সড়কপথে যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।”
গতকাল (৫ আগস্ট) বাঘাইহাট-সাজেক সড়কের মাচালং ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেলে সাজেকে তিন শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েন। উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
বুধবার সকালে সড়ক থেকে পানি নেমে গেলে পর্যটকরা নিরাপদে ফিরে যান বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার।
বাঘাইছড়ি পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ খাজা বলেন, “ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি পৌরসভা এবং উপজেলার আটটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, অনেক এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। জেলা প্রশাসকের প্রতি আহ্বান, কাপ্তাই হ্রদের পানি আরও দ্রুত সরিয়ে দিলে বাঘাইছড়ির পানি দ্রুত নামবে।”
বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পূর্ব লাইল্যাঘোনা ও আশপাশের অধিকাংশ বাড়িই পানিবন্দি। একইসঙ্গে পৌরসভার ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নিচু এলাকাসমূহ এবং প্রায় সব ইউনিয়নের ফসলি জমি ও সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।
পূর্ব লাইল্যাঘোনা গ্রামের বাসিন্দা মো. ইকবাল হোসেন জানান, “বাঘাইছড়িতে কয়েকদিন বৃষ্টি হলেই বন্যা দেখা দেয়। প্রতি বছর প্লাবনে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দুঃখজনকভাবে আমাদের এলাকায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। আশ্রয়ের জন্য অনেক দূরের গ্রামে যেতে হয়, যা ঝুঁকিপূর্ণ। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী, পূর্ব লাইল্যাঘোনায় একটি স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হোক।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার জানান, “প্লাবিত এলাকাগুলোতে আমরা সর্বক্ষণিক নজর রাখছি। ইতোমধ্যে উপজেলার ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে উৎসাহিত করার জন্য। পৌর এলাকার বাসিন্দাদেরও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
ইএইচ