ভাঙ্গুড়ায় নড়বড়ে টিনের ঘরে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা

মো. মেহেদী হাসান, ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বেতুয়ান গ্রামে অবস্থিত বি বি দাখিল মাদ্রাসার এবতেদায়ী (প্রাথমিক) শাখার শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলছে—তবে সেই শ্রেণিকক্ষটি দেখে সাধারণ কেউ একে শ্রেণিকক্ষ ভাবতেই পারবেন না। 

জরাজীর্ণ টিনশেড ঘর, ছাদের ফুটো, বৃষ্টি হলে পানি পড়া এবং বাতাসে দুলে ওঠা কাঠামোর মধ্যে শিশুরা প্রতিদিন বাংলা, ইংরেজি, অঙ্কের পাশাপাশি পবিত্র কোরআন ও হাদীসের পাঠ নিচ্ছে।

১৯৭৪ সালে বেতুয়ান ও ফরিদপুর উপজেলার বৃলাহিড়ীবাড়ি গ্রামের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মাদ্রাসা। দুই গ্রামের আদ্যাক্ষর নিয়েই রাখা হয়েছে ‘বি বি’ নামটি। ১৯৯৪ সালে সরকারি এমপিওভুক্ত হয় এবং আজ পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে এবতেদায়ী (১ম–৫ম শ্রেণি) এবং দাখিল (৬ষ্ঠ–১০ম শ্রেণি) পর্যায়ে মোট প্রায় ৩৫০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

তবে বছরের পর বছর ধরে প্রাথমিক শাখার শিক্ষার্থীদের ভবন অবকাঠামোগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নড়বড়ে কাঠামোর মধ্যে শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে বইপত্র ভিজে যায়।

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবাইয়া জানিয়েছেন, “আমরা অনেক ভয় পাই। বাতাসে ঘরটা কাঁপে, মনে হয় ভেঙে পড়বে। বৃষ্টি হলে বই ভিজে যায়।”

সহকারী শিক্ষক মো. আলী আকবর বলেন, “ছাত্রছাত্রী কম থাকলে ক্লাস নেওয়া যায়, তবে বেশি হলে অন্য ভবনের বারান্দায় পাঠ দিতে হয়।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ১৯৯৪–৯৫ অর্থবছরে একটি ভবন নির্মাণ করা হলেও দীর্ঘ ব্যবহারে তা পরিত্যক্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সরকারিভাবে সংস্কার করা হলেও প্রাথমিক পর্যায়ের জন্য নতুন ভবন এখনও নির্মিত হয়নি। ২০২৩–২৪ সালে এলাকাবাসীর সহায়তায় একটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যা দাখিল শাখার সংকট কমিয়েছে, তবে ছোটদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন আনে নি।

মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে কোনও সীমানা প্রাচীর নেই। ফলে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায়। স্থানীয়রা মাঠ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। ফলে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ চলাকালীন বহিরাগত যুবকদের উপস্থিতি নিয়মিত দেখা যায়।

শৌচাগারের সংখ্যা অপ্রতুল। ছেলে ও মেয়েদের জন্য মাত্র চারটি শৌচাগার, যা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়কেই ব্যবহার করতে হয়। শিক্ষকরা বসার উপযুক্ত স্থানও পাননি।

মাদ্রাসার সহকারী সুপার মাওলানা মো. হযরত আলী বলেন, “মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত পরিবেশ থাকা দরকার। শিক্ষক হিসেবে আমরা অনেক সময় অসহায় বোধ করি যখন তা নিশ্চিত করতে পারি না।”

মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ভাতা বাবদ প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব আয় সীমিত। কয়েকটি দোকান ভাড়া এবং অল্প কিছু সরকারি অনুদানেই চলে খরচ।

সুপারিনটেনডেন্ট মো. শামসুল আলম বলেন, “গত সরকারের সময় আমরা অনুদান থেকে বঞ্চিত ছিলাম। বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন করেছি এবং আশা করি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

স্থানীয় সচেতন মহল দাবি করছেন, একটি সুনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বি বি দাখিল মাদ্রাসার অবকাঠামোগত উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা হোক।

ইএইচ