হোসেনপুরে কবর ঘেঁষে টয়লেট নির্মাণে স্থানীয়দের তীব্র ক্ষোভ

রায়হান জামান, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ১১:১৭ এএম

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে দক্ষিণ চর হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দাতার কবরের পাশে স্কুলের টয়লেট নির্মাণকে কেন্দ্র করে দাতা পরিবার, স্কুল শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রামবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের জমিদাতা মৃত রাশিদ মাস্টারের কবরের পাশে পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি ওয়াশ ব্লক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। কবরের পাশ ঘেঁষে এই নির্মাণ কাজ চলায় দাতার পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।

দাতার ছেলে মো. রাজিব মিয়া অভিযোগ করেন, আমার বাবার কবরের পাশে টয়লেট নির্মাণ মানেই তাঁকে অবমাননা করা। আমরা বাবা জীবিত থাকাকালীন তিনি চাননি যে, তাঁর মৃত্যুর পর কবরের পাশে এমন কোনো অবমাননাকর নির্মাণ হোক। আমরা তার ইচ্ছা অনুযায়ী কবর স্কুলের সামনে দিয়েছি। বাবা এলাকার শিশুদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই জমি দিয়েছিলেন, অপমান করার জন্য নয়।

স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কবরের পাশে ওয়াশ ব্লক নির্মাণ অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। যিনি এলাকার শিশুদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই নিজের মূল্যবান সম্পত্তি দান করেছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর প্রতি এভাবে অসম্মান প্রদর্শন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা দাবি করেছেন, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

স্কুলের সাবেক সভাপতি সেলিম মিয়া বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর থেকে ওয়াশ ব্লক বরাদ্দ এলে প্রধান শিক্ষক মাস্টারের দায়িত্বে সার্ভেয়ার দিয়ে জমি মেপে স্থান নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দাতা পরিবারের সদস্যরা কবর ঘেঁষে নির্মাণে আপত্তি জানালে প্রধান শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে পরিবারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং স্কুল প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোতালেব বলেন, জমি একবার স্কুলে দান করা হলে তা আর দাতার বা তাদের পরিবারের থাকে না; সেটা হয়ে যায় স্কুলের সম্পত্তি। এরপর সেই সরকারি জমিতে কবর দেওয়া একেবারেই অন্যায়।

গ্রামবাসী মন্তব্য করেছেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রয়োজন, তবে তা যেন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত না করে। তারা বলছেন, টয়লেটের জায়গা স্কুলে অন্যত্রও রয়েছে, তাই কবরের পাশে এমন স্থাপনা গ্রহণযোগ্য নয়।

হোসেনপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সাগর মিয়া জানান, ওই স্কুলে ওয়াশ ব্লক বরাদ্দ ছিল। প্রধান শিক্ষক ও কমিটি যেখান নির্ধারণ করেছেন, আমরা সেখানে কাজ বাস্তবায়ন করবো। কাজ শুরু হয়েছে স্কুল প্রধান, স্কুল কমিটি, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরের প্রেক্ষিতে।

হোসেনপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফরিদ আল সোহান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি দুই গ্রুপের উত্তেজনা দেখে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছেন।

হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাহিদ ইভা বলেন, আমি স্কুলের জমিদাতা পরিবারের সদস্য ও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আটবার বসেও কোনো চূড়ান্ত সমাধান করতে পারিনি। তবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।

জেএইচআর