ইসলামী ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দিবে বাংলাদেশ ব্যাংক

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ০৮:৪২ পিএম
  •  আমানত উত্তোলনে শাখাগুলোতে ভিড় বাড়ছে
  • সংকট উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ চায় গ্রাহক-শেয়ারহোল্ডাররা

শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে তারল্য সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলমান পরিস্থিতিতে সৃষ্ট তারল্য সংকট মোকাবেলায় ব্যাংকগুলো যাতে বড় সমস্যায় না পড়ে তাই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে ১৪ দিন মেয়াদে এ সুবিধা পাবে ব্যাংকগুলো।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, ইসলামিক আর্থিক ব্যবস্থাকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এ তারল্য সুবিধা দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলো সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে নিয়মিতভাবে এই সুবিধা গ্রহণের জন্য একটি ফর্মে আবেদন করতে পারবে। প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে এ ধরনের আবেদন ফর্মও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, তিনটি ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে বেনামে ঋণের মাধ্যমে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এ সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আস্থার সংকটে পড়ে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো। ব্যাংকের শাখাগুলোতে আমানত উত্তোলনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে ইসালামী ব্যাংকের আমানতে নি¤œমূখী প্রবণতা লক্ষকরা যাচ্ছে। আমানতে ভাটার পাশাপাশে উত্তোলনের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে তীব্র তারল্য সংকট বিরাজ করছে। আন্তব্যাংক থেকে ধার করেও যখন টেকা যাচ্ছে না তখন সংকট মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারল্য সুবিধা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকগুলোকে দ্রæত গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় বড় সংকট তৈরী হলে এর ধাক্কা আসবে সার্বিক অর্থনীতিতে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ না নেয়ায় গ্রাহকরা হতাশায় ভুগছেন বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে গত রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে সরকার সমর্থিত লোকজনের হামলার অভিযোগ রয়েছে। এতে সংকট আরও ঘনীভুত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এভাবে তারল্য সহায়তা দিয়ে কত দিন ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখা যাবে তা নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী ব্যাংকের একজন শেয়ারহোল্ডার আমার সংবাদকে বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে গ্রাহকের আস্থা ফেরত আসবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক উল্টো পথে হাটছে বলে মনে করেন সাধারণ গ্রাহকরা।’

সংকট সমাধানে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা। পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক (পিআরআই) ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত দ্রæততম সময়ে ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়া। এরপর তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আন। এরপর স্বচ্ছ লোকদের দ্বারা পর্ষদ গঠনের ব্যবস্থা করা।  

এবি