চার দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৭ মে) সকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, দাবিগুলো দ্রুত মানা না হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে।
সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভাস্কর্য চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে উপাচার্য ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন, ‘প্রহসনের বাজেট মানি না’, ‘বৈষম্যের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আবাসন চাই, বঞ্চনা নয়’, ‘ইউজিসির গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’!
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বাজেট বরাদ্দে বৈষম্য চলে আসছে। ঢাকার মধ্যে অবস্থিত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জবির শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন এক এলাকায় বাস করি যেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী নাস্তা পর্যন্ত করতে পারে না। পুরান ঢাকার ভাড়া, পরিবেশ—সব মিলিয়ে আমরা বেঁচে আছি কষ্টে। আবাসন ভাতা ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে থাকা যায় না।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, ‘ইউজিসি চেয়ারম্যানদের পদে বসতে জবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভূমিকা আছে। অথচ আজ সেই জবির শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। এ অবিচার আর মানা হবে না।’
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, ‘হয় জবি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চলবে, নয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। এই ঢাকায় দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়—একটির জন্য যত সুবিধা, অন্যটির জন্য ততই বঞ্চনা—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
আন্দোলনকারীদের চার দফা দাবি হলো—
১. ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জবির বরাদ্দ বৃদ্ধি ও অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা অন্তর্ভুক্ত করা।
২. দ্বিতীয় ক্যাম্পাস এবং পুরান ঢাকায় ড. হাবিবুর রহমান হল ও বাণী ভবনের নির্মাণকাজ ১০ মে’র মধ্যে শুরু করা।
৩. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ১৫ দিন অন্তর হল ও ক্যাম্পাস নির্মাণসংক্রান্ত অগ্রগতি মুক্তমঞ্চে তুলে ধরার বাধ্যবাধকতা।
৪. আগামী ১৫ মে’র মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা রয়েছে। আমরা আবাসন ভাতা দেওয়ার চেষ্টা করছি এবং অন্যান্য দাবিও বিবেচনায় আছে। তবে আমাদের বাজেট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ইউজিসি সংস্কারের প্রস্তাবও দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার কেন্দ্রে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আবাসন সংকট ও বাজেট বৈষম্যের কারণে এখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায়ে প্রয়োজনে তারা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে প্রস্তুত।
বিআরইউ