জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ও বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা, গালাগাল এবং মারধরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম হৃদয়ের বিরুদ্ধে।
ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন সেখানে কর্মরত জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।
‘সময়ের আলো’ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আশরাফুল আলম অভিযোগ করেন, ছবি ও ভিডিও ধারণ করার সময় হৃদয় তাকে সরে যেতে বলেন। পরিচয় দেওয়ার পরও তিনি আশরাফুলকে ‘বেয়াদব’ বলে গালি দেন এবং থাপড়ানোর হুমকি দেন।
এনটিভির প্রতিনিধি রোহান চিশতী বলেন, “আমি প্রতিবাদ জানালে হৃদয় আমার দিকে তেড়ে আসেন এবং মারতে উদ্যত হন।”
সাংবাদিকদের অভিযোগ, ঘটনার সময় উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও কেউ প্রতিবাদ জানাননি কিংবা তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেননি। একইভাবে নীরব থেকেছে কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী বেগম বলেন, “সাংবাদিকদের হেনস্তা কেবল পেশাগত অপমান নয়, এটি ক্যাম্পাসে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করছে। প্রশাসনের নীরবতা অত্যন্ত লজ্জাজনক।”
বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু ইসহাক অনিক বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সবার আগে পাশে দাঁড়ান সাংবাদিকেরা। অথচ আজ তারাই হুমকির শিকার হচ্ছেন—এটি ফ্যাসিবাদী চর্চার স্পষ্ট উদাহরণ।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত জাহান কিবরিয়া বলেন, “গত বছর ছাত্রলীগের হামলার সময়ও প্রশাসন নীরব ছিল। এবার ছাত্রদলের হুমকির পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাহলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা কোথায়?”
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম হৃদয় অর্থনীতি বিভাগের ২০১২–১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তবে তিনি ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পুনরায় ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন। এ নিয়েও সাংবাদিকদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নবাব মো. শওকত জাহান কিবরিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বাপন, দপ্তর ও প্রকাশনা সম্পাদক রোহান চিশতী, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী বেগম, সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু ইসহাক অনিক, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম সাজ্জাদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সব সাংবাদিক।
মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকেরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। উপাচার্য সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করলেও ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ছাত্রত্ব দেওয়ার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি।
সাংবাদিকেরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন।
ইএইচ