সুপ্রিম কোর্টে মারামারি : আরও ৪ আইনজীবীর আগাম জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৪, ০৮:০৬ পিএম
ছবি: সংগৃহিত

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির মামলায় আরও ৪ আইনজীবীর আগাম জামিন হয়েছে। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (২০ মার্চ) তাদের জামিনের আদেশ দেন।

জামিন প্রাপ্তরা হলেন- যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী অ্যাডভোকেট যুথী, অ্যাডভোকেট শাকিলা রৌশন, অ্যাডভোকেট চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা) ও অব্যাহতি পাওয়া সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ। 
তাদের পক্ষে জামিন শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এম কে রহমান ও শেখ আওসাফুর রহমান বুলু। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি। এ তথ্য নিশ্চিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু জাফর শেখ মানিক।

এদিকে মারামারির ঘটনায় বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. রেজাউল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

সোমবার হাই কোর্টের একটি বেঞ্চের এক বিচারক নাহিদ সুলতানা যুথীর আগাম জামিনের আবেদন শুনতে ‘বিব্রত বোধ’ করলে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চকে বিষয়টি শোনার দায়িত্ব দেন প্রধান বিচারপতি। এরপর জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য এই বেঞ্চে পাঠানো হয়।

গত ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন শেষে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। সেসময় আক্রমণের শিকার সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান চৌধুরী সাইফ ২০ জনকে আসামি করে ঢাকার শাহবাগ থানায় ৮ মার্চ একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী যুথী এ মামলায় এক নম্বর আসামি। দুই নম্বর আসামি বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক পদপ্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল। অন্য আসামিরা হলেন- অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ (৫৫), শাকিলা রৌশন, কাজী বশির আহম্মেদ, ব্যারিস্টার ওসমান, অ্যাডভোকেট আরিফ, সুমন,  তুষার, রবিউল, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা কবিতা, সাইদুর রহমান জুয়েল (৪০), অলিউর, জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, অ্যাডভোকেট তরিকুল ও সোহাগ। এ ছাড়া ৩০/৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়, ‘এক নম্বর আসামির নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নিচ তলার শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অস্ত্র হাতে ঢুকে বাদীসহ নির্বাচন সাব-কমিটির অন্য সদস্যদের গালিগালাজ করেন আসামিরা। দুই আসামি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশে মাথায় আঘাত করতে গেলে বাদী বাধা দেন। এতে তার বাঁ কানের উপরে মাথার অংশে মারাত্মক জখম হন। অন্য আসামিরা লাঠি ও চেয়ার দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর এবং লাথি দিয়ে বাদীর শরীরের জখম করেন। তার পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়।’

‘বাদীর সঙ্গে থাকা ব্যারিস্টার জাকারিয়া হাবিবকে মারধর করেন আসামিরা। লাঠির আঘাতে জাকারিয়ার ডান হাতের আঙুল ভেঙে যায়। টানাটানিতে তার পরনের কাপড় ছিঁড়ে যায়। আসামিরা তার মোবাইল ফোন নিয়ে যান। তারা অ্যাডভোকেট রিনা বেগমকে চড়-থাপ্পর ও হুমকি দেন। গলা চেপে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। অজ্ঞাত অন্য আসামিরা অডিটোরিয়ামের ভেতরে ভাঙচুর ও অরাজকতা সৃষ্টি করেন। এর ফলে নির্বাচনি দায়িত্বরত সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। নির্বাচনি কার্যক্রম ভণ্ডুল হয়ে যায়।’

অভিযোগে আরো বলা হয়, “নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে অস্ত্রের মুখে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করতে বাধ্য করেন এক নম্বর আসামি। নির্বাচন সাব-কমিটির সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ঘটনার সবকিছু ধারণ করা আছে।”
এআরএস