৮৫ বছরে পদার্পণ করলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ক্ষুদ্রঋণ মডেলের প্রবর্তক হিসেবে তিনি শুধু দেশের আর্থসামাজিক ভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করেননি, বরং দারিদ্র্যবিমোচনের বিকল্প পথ দেখিয়েছেন গোটা বিশ্বকে।
১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. ইউনূস। বাবার নাম হাজি দুলা মিয়া সওদাগর, মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। দশ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা শুরু, পরে চট্টগ্রাম কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৬৫ সালে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি নিয়ে ফিরে আসেন নিজ দেশে।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে দরিদ্র মানুষের অসহায়তা তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তিনি উপলব্ধি করেন—ব্যাংকিং ব্যবস্থা দরিদ্র মানুষের জন্য নয়। সেখান থেকেই জন্ম নেয় এক বিপ্লবী ভাবনা—ক্ষুদ্রঋণ।
১৯৭৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয় গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম। ব্যাংকিংয়ের বাইরে গিয়ে তিনি দরিদ্র, বিশেষত নারীদের হাতে তুলে দেন জামানতবিহীন ঋণের হাতছানি। ছোট উদ্যোগে স্বাবলম্বিতা—এই মডেলই হয়ে ওঠে অর্থনৈতিক মুক্তির নতুন দিগন্ত।
২০০৬ সালে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। নোবেল কমিটি জানায়, “দারিদ্র্য বিমোচনের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যকর একটি হাতিয়ার—যা শান্তি প্রতিষ্ঠার পথও দেখায়।”
নোবেলের পর তিনি ধারণা দেন ‘সামাজিক ব্যবসা’-র—যেখানে ব্যবসার উদ্দেশ্য মুনাফা নয়, সামাজিক সমস্যার সমাধান। বিনিয়োগ ফিরে আসবে, কিন্তু মুনাফা পুনর্বিনিয়োগ হবে মানবিক কাজে। এই মডেলে তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক একাধিক প্রকল্প, দেশ-বিদেশে।
ড. ইউনূস ছিলেন জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (MDG) অর্জনের অগ্রগামী কণ্ঠ। এখন কাজ করছেন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) নিয়ে। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি একজন সক্রিয় দূত।
গত বছরের জুলাই মাস থেকে ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন শুরু করেন। এ আন্দোলন ক্ষমতালোভী শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে পরিণত হয়। শেখ হাসিনা দলবলসহ ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তিনি এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
৮৫ বছরেও তিনি সক্রিয়, স্বপ্ন দেখেন—একটি দারিদ্র্যমুক্ত, মানবিক বিশ্ব গড়ার। আজ তাঁর জন্মদিনে, তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ ও শুভেচ্ছা।
বিআরইউ