জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে না বলে মন্তব্য করেছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গোপালগঞ্জে দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, “আমরা কোনো যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে গোপালগঞ্জে যাইনি। আমাদের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা যদি সময়মতো ব্যবস্থা নিত, তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।”
তিনি বলেন, “আমরা চারজনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। আমরা কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করি না, প্রত্যাশাও করি না। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই বিচারিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘটনার দায় সরকার ও প্রশাসনের। আমরা এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।”
স্ট্যাটাসে নাহিদ ইসলাম দাবি করেন, “গোপালগঞ্জ নিয়ে আমাদের অবস্থান আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যুগের পর যুগ গোপালগঞ্জবাসীর জীবনে দুর্ভোগ ডেকে এনেছে। মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গেও বেইনসাফি করেছে। এই অবস্থার অবসান আমরা ঘটাবো।”
তিনি আরও লেখেন, “৫ই আগস্টের পরও অনেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ আনতে চেয়েছিল। তাদের মনে রাখা উচিত—আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।”
নাহিদ অভিযোগ করেন, “ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জে পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। অথচ তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। যারা গ্রেফতার হয়েছে, তারাও কোর্ট থেকে জামিন নিচ্ছে বা থানা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ঘাপটি মেরে আছে।”
স্ট্যাটাসে তিনি আরও দাবি করেন, “নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গোপালগঞ্জে এসেছিল। সকালবেলার নাশকতার পরও প্রশাসনের অনুমতি ও নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স পেয়েই আমরা সেখানে প্রবেশ করি। আমরা পদযাত্রা করিনি, শুধু পথসভা করেছি। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে, বাস আটকে দেওয়া হয়েছে।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পথসভা শেষ করে ফিরে যাওয়ার পথে সশস্ত্র হামলার শিকার হই। প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনা মেনে আমরা সেখান থেকে সরে আসি।”
তিনি দৃপ্ত ঘোষণা দেন, “আমরা গোপালগঞ্জে গিয়েছিলাম, আবারও যাব। জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায়, প্রতিটি গ্রামে আমরা কর্মসূচি পালন করব। শহীদ বাবু মোল্লা, শহীদ রথীন বিশ্বাসের গোপালগঞ্জকে আমরা পুনরুদ্ধার করব। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও মুজিববাদীদের হাতে যাবে না—ইনশাআল্লাহ।”
স্ট্যাটাসের শেষাংশে তিনি বলেন, “যারা গতকালের হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন, কণ্ঠ তুলেছেন—তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দেখা হবে ফরিদপুরে পদযাত্রায়।”
ইএইচ