রুট পারমিট ছাড়াই চলছে গণপরিবহন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ১২:০২ এএম

রাজধানীর সড়কে রুট পারমিট ছাড়াই চলাচল করে অসংখ্য গণপরিবহন। বিআরটিএ তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে রাজধানীতে ৩৮৮টি অনুমোদিত রুট রয়েছে। তার মধ্যে বাসের অভাবে ২৯৩টি রুট বন্ধ রয়েছে। আর ১২ রুটের কোনো অনুমোদন না থাকলেও নিয়মিত বাস চলাচল করছে।

তাছাড়া ৩৪টি রুটে কয়েকগুণ বেশি বাস চলছে। তার মধ্যে রুট পারমিট ছাড়াই ১ হাজার ৬৪৬টি বাস চলছে। পাশাপাশি ২৭ হাজারের বেশি লেগুনা রাজধানীর সড়কে অবৈধভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেশির ভাগ বাসই রাজধানীতে রুট পারমিট ছাড়া চলছে। আবার কিছু কোম্পানির বাসের রুট পারমিট থাকলেও সেগুলো চলছে না নির্ধারিত রুটে। বরং বেশি যাত্রীর আশায় এক রুটেই একাধিক কোম্পানির বাস প্রতিযোগিতা করে চলাচল করছে। আর অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে।

ঢাকা মহানগরীতে কাগজে-কলমে ৯৫টি সক্রিয় রুটে ৭ হাজার ৯১টি বাস নিবন্ধিত রয়েছে। তার মধ্যে ৩ হাজার ৪২৭টি বাস নিজস্ব রুটে চলাচল করলেও অন্য রুটে চলাচল করে ২ হাজার ১৮টি বাস। 

তাছাড়া ১ হাজার ৬৪৬টি বাস কোনো রুট পারমিট ছাড়াই ঢাকায় চলাচল করছে। আর ২০২৪ সালে অনুমতি ছাড়া ১৯টি কোম্পানি তাদের নির্ধারিত রুট পরিবর্তন করেছে। ২০টি বাস কোম্পানি নির্দিষ্ট সিলিং নম্বরের বাইরে অতিরিক্ত বাস পরিচালনা করছে। 

৯টি বাস কোম্পানির মালিক প্রভাব খাটিয়ে আরটিসি কমিটি থেকে সিলিং নাম্বার বাড়িয়ে নিয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি বাস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বা আমদানিকারকের নামে বাস রুট দেয়া হলেও তা ভিন্ন নামে চলছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) তালিকা অনুযায়ী রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এ-২২৫ নম্বর রুটে বিভিন্ন অনুমোদন দেয়া হয়েছে মালিকের ১৫৮টি মোটরযান। কিন্তু রুট পারমিট ইস্যুকৃত মোটরযানের সংখ্যা মাত্র ৪২টি। বাস্তবে ওই রুটে চলাচল করে ১৮০টি গাড়ি।

আবার অন্য রুটে পারমিট ইস্যুকৃত ২০টি গাড়ি থাকলেও রুট পারমিটবিহীন ৩৯টি গাড়ি চলাচল করে। তার মধ্যে ৮টি ফিটনেস মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান রয়েছে। এ-২৩৪ রুটেও একই অবস্থা।

শ্রাবণী ট্রান্সপোর্টের মদনগঞ্জ থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ৩৫টি বাসের অনুমোদন থাকলেও ১০৩টি বাস চলছে। তার মধ্যে অন্য রুটের ৮১টি বাস চলছে। তার মধ্যে ১২টি রুট পারমিটবিহীন  ও ২৪টি বাসের অবৈধ। 

সূত্র আরও জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) আহ্বায়ক। ওই কমিটিতে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও রয়েছে। বিআরটিএর ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক ২২ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির সদস্য সচিব। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। আর বিগত ২০১৮ সাল থেকে ঢাকা মহানগরীতে বাস ও লেগুনার রুট পারমিট বন্ধ রয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে ডিটিসিএর ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্যানার ধ্রুব আলম জানান, বেশি আয়ের আশায় পরিবহন মালিকরা এক রুটের পারমিট নিয়ে অন্য রুটে চলে যান। পরে বাসের নাম ও রং পরিবর্তন করে অনুমোদন ছাড়াই ওই রুটে চলাচল করে। ফলে কিছু রুটে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করায় ট্রাফিক জট ও বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় রুট পারমিট দেয়া হলে তা সাংঘর্ষিক হতো। তাই ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নতুন কোনো রুট পারমিট দেয়া হয়নি। তাতে নতুন বাস পরিচালনা বন্ধ হয়ে গেছে।

বিআরটিএ তালিকা অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীতে ৩৮৮টি অনুমোদিত রুট রয়েছে। তার মধ্যে ১১০টি সচল রুট রয়েছে। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস রুট ভেরিফিকেশন শীর্ষক ট্রাফিক জরিপের নতুন ৯৫টি রুট পায়। তার মধ্যে ৫টি রুট ২০২১ সালেও সচল ছিল না, পরে চালু হয়েছে। আর ১৪টি রুটে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।