Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগে অচলাবস্থা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ৭, ২০২১, ১২:১৫ পিএম


মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগে অচলাবস্থা!

সভাপতি নাহিদ আহমদের দীর্ঘদিন যাবত প্রবাসে অবস্থান আর সাধারন সম্পাদক সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমনের স্বেচ্চাচারীতায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে।  কোন্দল ও পকেট কমিটি গঠনের প্রবনতায় প্রায় নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগ। আর উপজেলা কমিটিগুলো শুধু মেয়াদোত্তীর্ণই নয়, রীতিমতো নানা বিতর্কে বিতর্কিত।

একাধিক সূত্র মতে,  ​ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নির্দেশনা না মানা, কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচী দায়সারা ভাবে পালন, সাংগঠনিক কর্মসূচীকে গুরুত্ব না দিয়ে আত্মপ্রচারনামূলক কর্মকান্ডে বিশেষ আগ্রহ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সাধারন সম্পাদকের বার বার অশোভন আচরন  ইত্যাদি বিষয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা বিরক্তি থাকলেও এবার এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন খোদ কেন্দ্রীয় যুবলীগের দায়িত্বশীল নেতারাও।

সম্প্রতি জেলা যুবলীগ আয়োজিত বর্ধিত সভায় দপ্তর সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ণ পদধারী কয়েকডজন নেতার অনুপস্থিতি, ব্যানার ফ্যাষ্টুনে যুবলীগের চেয়ারম্যান, সাধারন সম্পাদক সহ কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ছবি না দেওয়া, বর্ধিত সভায় চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলায় প্রকাশ্যেই নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেন সভার প্রধান অতিথি ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল আলম জোয়ার্দার সৈকত।

রফিকুল আলম জোয়ার্দার তার  বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটা জেলায় সংগঠনের বর্ধিত সভা হচ্ছে অথচ কোথায় ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি/সম্পাদক এর নামে কোন গেইট নাই, ব্যানার নাই, ফেস্টুন নাই।  জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা হচ্ছে এটার আওয়াজ হবে। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম খুবই ঠাণ্ডা অবস্থা।  শুধু তাই নয় কতো বছর আগে এই জেলায় বর্ধিত সভা হয়েছে তাও কারো জানা নাই।

এসময় সভায় উপস্থিত অন্য দুই কেন্দ্রীয় নেতাকেও বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়।

কেন্দ্রীয় নেতার এমন বক্তব্যের পর নড়েচেড়ে বসেছেন জেলা যুবলীগের নেতারা, তাদের মতে  সাধারন সম্পাদকের স্বেচ্চাচারিতার  কারনে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে ।

তারা বলেন, বর্ধিত সভায় যেন উতসবমুভর পরিবেশে নিশ্চিত করতে আমরা বারবার জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের সাথে কথা বলেছি। ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে বলেও কোন লাভ নেই আর  সাধারন সম্পাদক এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাননি।

নাম প্রকাশ না  করার শর্তে জেলা যুবলীগের পদধারী এক নেতা বলেন,  সভা সফল করার চেয়েও পেশিশক্তি প্রদর্শনে বেশি মনযোগী ছিলেন সুমন। জেলাব্যপী অবৈধ মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজী ও টেন্ডারবাজী অব্যাহত রাখতে যে কোন মূল্যে  পদ নিজের অথবা নিজের পকেটের লোকের  দখলে রাখাই তার একমাত্র লক্ষ্য। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে তিনি এতটাই বেপরোয়া যে,  তার  এখন অন্য কিছুতে মনযোগ দেয়ার সময় নেই।

নাহিদের অনুপস্থিতিতে রেজাউর রহমান সুমন একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সাংগঠনিক বিষয়ে পছন্দের গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া তিনি কারো কথাই শুনেন না , যে কোন বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হয় সেটা যত খারাপই হোক। প্রতিবাদ করলে হুমকী, ধামকী এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে পুরো জেলা শহরজুড়ে  হাতেগোনা দু একটি ব্যানার ফ্যাস্টুন ছিলো, সভাস্থলের সম্মুখে মাত্র একটি গেইট থাকলেও সেখানে ছিলোনা সংগঠনের চেয়ারম্যান, সাধারন সম্পাদক অথবা সম্মেলনে আগত কেন্দ্রীয় কোন অতিথির ছবি। এসব বিষয়ে  অনাগ্রহ থাকলেও কমতি ছিলোন সুমনের ব্যক্তিগত শোডাউনে, পুরো সম্মেলনস্থল জুড়ে সুমন গ্রুপের নেতাকর্মীদের হট্টগোলে বিরক্তিও প্রকাশ করেন সভায় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গরা। মহড়া দিতে আসা কর্মীদের মধ্যে  হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের অসম্মান করা সুমনের পুরনো অভ্যেস দাবী করে জেলা যুবলীগের একাধিক সুত্র জানায়,  পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকা সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষ্যে প্রচারনার উদ্দেশ্যে আসা  একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সাথেও অশোভন আচরন করেন রেজাউর রহমান সুমন। সেবারের ঘটনায় কেন্দ্র কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলেই বারবার একি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছেন বলে দাবী তাদের।

এত অব্যবস্থাপনা আর অনিয়ম নিজ চোখে দেখার পরেও, কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কিভাবে মেয়াদোত্তির্ণ এ কমিটির অধিনে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন, এখন যদি এদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন হয় তবে সেখানে ত্যাগী, পরিশ্রমী ও ক্লীন ইমেজের পদবঞ্চিতরা স্থান পাবেনা বরং তারা তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকদের নিয়ে কমিটি গঠনের করে গ্রুপ বড় করাতে মনযোগ দেবে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, কোন প্রকার পূর্বঘোষনা ছাড়াই জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভার মাসখানেক আগে হঠাত  কমলগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা করে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে উপজেলার সম্মেলনে তারিখ ঘোষনা করেন সুমন, এদিন বিভিন্ন ইউনিয়নের ৪জন ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদককে মৌখিকভাবে পূর্ণ সাধারন সম্পাদক হিসেবে ঘোষনা দেন তিনি। তার কিছুদিনের মধ্যে তড়িঘড়ি করে কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বর্ধিত সভা করে সিভি আহবান করা হয় এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন করার ঘোষনা দেয়া হয়।

কয়েকদিনের মধ্যে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ১টি, পৌরসভার ২টি ও শমসেরনগর ইউনিয়নের ১ টি করে মোট ৪টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি মৌখিক ভাবে ঘোষনা করেন সুমনের অনুষারী মেয়াদোত্তির্ণ কমলগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মেয়র জুয়েল।

এসব কমিটি করার সময় অর্থ লেনদেন , ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি বানানো এবং ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে রহস্যজনক দ্রুততায় কমিটি গঠনের প্রতিবাদে স্থানীয় নেতাকর্মীরা সরব হলে , নির্বাচনের আগে কোন প্রকার কমিটি না করতে সহযোগী সংগঠনগুলোকে অনুরোধ করে উপজেলা আওয়ামিলীগ।

২০১৭ সালের ২৯ মার্চ কমলঞ্জের পৌর মেয়র জুয়েল আহমেদকে আহবায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির অনুমোদেন দেন ততকালীন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, তারপর প্রায় চার বছর কেটে গেলেও উপজেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো করেননি জুয়েল, তবে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন  ইউনিয়নে পকেট কমিটি গঠন করেছেন ।

মূলত  সীমান্তবর্তী এ উপজেলার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে রাখতে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাদের ব্যবহার করেন তিনি। বিগত ২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার করিমপুর এলাকায় ইসলামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বাবুলের মালিকানাধিন সিনএনজিতে করে পাচারের সময় তিন কেজি গাজা সহ গ্রেফতার হন তার ভাই বকুল হোসেন (৩০)। জানা যায়, বাবুল-জুয়েলের মাদক ব্যবসার টাকার ভাগ রেজাউর রহমান সুমন পর‌্যন্ত পৌছায়।

বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কমলগঞ্জ উপজেলায় নৌকা সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামিলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমানের বিপক্ষে স্বতন্ত্র এক স্বত্রন্ত্র প্রার্থীকে জেতাতে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের যুবলীগ নেতাকর্মীদের নিজে কাজ করেন মেয়র জুয়েল। এছাড়া ইসলামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বাবুল আহমেদ স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে আওয়ামিলীগ সমর্থীত প্রার্থী সুলেমান মিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বিজয়ী করেন। এভাবে প্রতিটি উপজেলায় সুমনের আশ্রয়ে পশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠা বিতর্কিতদের কারনে  কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন ত্যাগী ও ক্লীন ইমেজের নেতাকর্মীরা।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। প্রায় একবছর ধরে মেয়াদোত্তির্ণেএ কমিটির সভাপতি বিগত প্রায় ছয়মাস ধরে ব্যক্তিগত কাজে যুক্তরাস্ট্র সফরে রয়েছেন। সে সুযোগে জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক রেজাউর রহমান সুমন  বিভিন্ন স্তরের বিতর্কিত নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে শক্তিশালী গ্রুপ গড়ে তুলেছেন।


আমারসংবাদ/ইএফ