Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫,

খরস্রোতা কাকেশ্বর এখন মরা ড্রেন

সুলতান আবু নাসের, গোলাপগঞ্জ (সিলেট)

ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২০, ১২:১২ পিএম


খরস্রোতা কাকেশ্বর এখন মরা ড্রেন একসময় খরস্রোতা এই নদীতে নৌকা চলত, জেলেরা মাছ ধরতেন, নৌকাবাইচে মেতে উঠত নদীপারের মানুষ। নদী ঘিরেই ছিল এখানকার কৃষি, অর্থনীতি, যোগাযোগ ও সংস্কৃতি। সিলেটের ' হৃৎপিণ্ড' বলে পরিচিতি সেই কাকেশ্বর এখন দখল-দুষণে শ্রীহীন ও গতিহারা মরা খাল। নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা তৈরি করায় প্রতিনিয়ত সংকুচিত হচ্ছে কাকেশ্বর। নদী বুক দখল করে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে কাকেশ্বর নদীর অস্তিত্ব এখন শুধুই ইতিহাস। ঢাকাদক্ষিণ বাজারের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হওয়া এ নদীটি বর্তমানে আবর্জনায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যুগ যুগ ধরে ভূমি খেকোদের অবৈধ দখল, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব আর ময়লা-আবর্জনার স্তুপের কারণে মূলত নদীটির চেহারা পাল্টে এখন বিবর্ণ ড্রেনের আকারে পরিণত হয়েছে। অতীতে এ অঞ্চলের যোগাযোগ আর বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের মানুষদের ব্যবসায়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ছিল এ নদী। তারা এ নদী পথে মালপত্র নিয়ে এসে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন ঢাকাদক্ষিণ বাজারে। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় নৌকা চলাচল দূরের কথা ময়লার স্তুপে পরিণত হওয়া নদী দিয়ে টিকমতো পানি চলাচলই করতে পারছে না। সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায় বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর দু’পাড় দখল আর ভরাট করে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা। এমনকি নদীর মূল সীমানার মধ্যখানের উপরও গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানকোটা। ভূমিখেকোদের নদী দখল এখনও থেমে নেই, ময়লা-আবর্জনা ফেলে আর দোকানকোঠা নির্মান করে চলছে নদী দখলের উৎসব। গড়ে উঠছে নতুন নতুন অসংখ্য স্থাপনা। জানা যায়, নদীটি ঢাকাদক্ষিণ বাজার থেকে পূর্বদিকে গিয়ে কুশিয়ারা নদীতে সংযুক্ত হয়েছে। অপরদিকে বাজারের পশ্চিমমুখী হয়ে দত্তরাইল, খর্দ্দাপাড়া, নিজ ঢাকাদক্ষিণ হয়ে দেওরভাগা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিতেই অনেক দোকানে পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয় এবং তলিয়ে যায় পুরো ঢাকাদক্ষিণ বাজার। আর এর মূল কারণ হিসেবে কাকেশ্বর নদীর ভরাট আর দখল হয়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। তাছাড়া প্রতিটি কৃষি মৌসুমে সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়ে কাকেশ্বর নদীর পানি এ অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতো। কিন্তু বর্তমানে নাব্যতা আর পানি সংকটে কৃষকরা সেই সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া ঢাকাদক্ষিণ বাজারে নদীর ধারে রয়েছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই বিদ্যালয়গুলোতে পানি উঠে গেলে বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হয়। গেল বছর পানি উঠে পাঠদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ায় সরকারি অর্থায়ানে নদীর কিছু অংশ দায়সারাভাবে খনন করা হয়। কিন্তু সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বাজার অংশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ বা খনন কিছুই হয়নি। ফলে এই খনন কোনো কাজেই আসছেনা বলে জানান স্থানীয়রা। গত বছরের জুনের মাঝামাঝিতে বাজার পানির নিচে নিমজ্জিত হলে পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান। সে সময় দখলদার উচ্ছেদ করে নদী খননের আশ্বাস দিলেও সে আশ্বাস দৃশ্যমান এখনও হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন জানান, প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিতেই নদী দখলের কারণে পর্যাপ্ত পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে পুরো ঢাকাদক্ষিণ বাজার। গত বছরেও একাধিকবার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঢাকাদক্ষিণ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি বদরুল ইসলাম জামাল জানান, আমরা বিভিন্ন সময় ময়লা পরিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু অবৈধ স্থাপনা আর আর্থিক সংকটের কারণে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়না। নদীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নদী দখলমুক্ত করতে হবে। আর খনন করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন যার জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। এব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, ‘বাজার কমিটি অনুরোধ করেছিল অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য। কিন্তু যে পরিমাণ অবৈধ দখলদার তা ছোটখাটো অভিযানের মধ্য দিয়ে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। এর জন্য আমাদের জেলা পর্যায়ের সিদ্ধান্ত লাগবে। তবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য আমাদের একটি উদ্যোগ আছে’। আমারসংবাদ/এমআর