Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১২ মে, ২০২৪,

করোনা রোগীর পাশে ফেসবুক গ্রুপ ‘‘প্লাজমা ব্যাংক অব বাংলাদেশ’’

মাহমুদুল হাসান

জুন ৯, ২০২০, ০৪:৩৩ পিএম


করোনা রোগীর পাশে ফেসবুক গ্রুপ ‘‘প্লাজমা ব্যাংক অব বাংলাদেশ’’

 

মার্চের শুরুতে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তখন থেকে নয়া ভাইরাসের আতঙ্ক সবার মধ্যে। এরমধ্যে গণমাধ্যমে খবর রটে করোনার উপসর্গ থাকায় সন্তান মাকে রাস্তায় ফেলে গেছে! করোনা রোগীর পাশে নেই স্বজনরা! মৃত্যুর পরেও পরিবারের কেউ লাশ নিতে আসেনি!

ঠিক তখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে একদল যুবক বেরিয়ে আসে। মহামারির মধ্যে নেমে পড়ে মানবতার সেবায়। মুমূর্ষু রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার চিকিৎসা বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোজখবর রাখেন। এমনকি মৃত্যু হলে স্বজনরা এড়িয়ে গেলেও তারা পাশে থেকে লাশ সৎকার করছেন।

এরপর দেশে নতুন থেরাপির প্রচলন শুরু হয় এই প্রতিষেধকহীন রোগের। চিকিৎসরা রোগীকে প্লাজমা থেরাপি দিতে শুরু করেন। কিন্তু এই ব্যবস্থায়ও বিপত্তি ঘটে। সচেতনতার অভাবে অনেকের ইচ্ছে থাকার পরেও প্লাজমা দিচ্ছেন না।

ফলে চাহিদার অনুপাতে ১০ শতাংশেরও কম রোগীর প্লাজমা থেরাপির সুযোগ পাচ্ছেন। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেননি। তারা আবার করোনা রোগীকে প্লাজমা দিতে উদ্বুদ্ধ করতে মাঠে নামেন।

প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা সাহিদ আহমেদ জয়ের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ফেসবুক ভিক্তিক প্লাটফর্ম ‘‘প্লাজমা ব্যাংক অব বাংলাদেশ’’। অল্প সময়ে প্লাটফর্মটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

গত মাসের শেষ দিনে যাত্রা শুরু করলেও ইতিমধ্যে জয়দের এই উদ্যেগে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ যুক্ত হয়েছে। সরাসরি প্লাজমা ডোনারকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে। প্লাটফর্মটিতে ডাক্তার, শিক্ষার্থীসহ অনেকেই যুক্ত হয়েছেন এবং সহযোগীতার হাত বাড়ি দিয়েছেন।

‘‘প্লাজমা ব্যাংক অব বাংলাদেশ’’ এর প্রতিষ্ঠাতা সাহিদ আহমেদ জয় বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছি। খবরের পাতায় যখন দেখা গেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর পাশে কেউ নেই।

করোনা সন্দেহে মাকে ফেলে গেলো সন্তান কিংবা করোনায় মৃত্যু বাবার লাশ ফেলে গেলো সন্তান। আমরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুমূর্ষু অবস্থায় করোনা রোগীকে বাসা থেকে হাসপাতালে ভর্তি করছি।

মৃত্যু হলে স্বজনরা লাশের পাশে না আসলে নিজেরা শেষ পর্যন্ত থেকে লাশ সৎকারে অংশ নিচ্ছি। এমনকি সুস্থ হলে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার মিশনেও অংশ নিচ্ছি।

এরপর যখন প্লাজমা থেরাপির কথা শোনা যাচ্ছিলো তখন থেকে আমরা এই কাজে নেমে পড়ি। কারণ আমরা দেখেছি অনেক করোনা জয়ী মানুষ ইচ্ছে থাকার পরেও প্লাজমা দেয়ার প্রচলন দেশে নতুন হওয়ায় ভয়ে দিচ্ছেন না।

তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে গত ৩১ মে ফেসবুকে একটি প্লাটফর্ম (ফেসবুক গ্রুপ) চালু করেছি। ইতিমধ্যে সেখানে প্রায় দুই লাখের বেশি মানুষ যুক্ত হয়েছেন।’’

তিনি বলেন, ‘‘প্লাটফর্মটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ জনের বেশি রোগীর জন্য প্লাজমা সংগ্রহ হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য মানুষের মধ্যে প্লাজমা দিতে ভীতি দূর করে সচেতনতা তৈরি করা।

স্বেচ্ছায় প্লাজমা দিতে উদ্বুদ্ধ করা। স্বজনরা প্লাটফর্মটিতে প্লাজমা চেয়ে স্ট্যাটাস দিলে আগ্রহীরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তার হাত বাড়াচ্ছেন। বলতে পারেন ডোনার টু রোগী সংযোগের কাজ করছে প্লাজমা ব্যাংক অফ বাংলাদেশ।’’

সাহিদ আরও বলেন, ‘‘আমাদের কাজ শুধু প্লাজমা ম্যানেজ করে দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই উদ্যোগের সঙ্গে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন। তারা করোনা থেকে বাচতে করনীয় নানা বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। সেইসাথে করোনা কালে রক্ত পাওয়া খুব দূরহ হয়ে পড়েছে।

কিন্তু মানুষের জীবনে দূর্ঘটনা তো বলে কয়ে আসে না। তাই এই সময়ে গ্রুপ থেকে রক্তও ম্যানেজ করে দেয়া হচ্ছে।

এছাড়াও একটি চক্র প্লাজমা দেয়ার কথা বলে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছে প্লাটফর্মটি।’’

প্রসঙ্গত, সাহিদ আহমেদ ইউনাইটেড হেলথ ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনা রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

ফেসবুক গ্রুফ Plasma Bank of Bangladesh (Covid-19)

আমারসংবাদ/জেআই