Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা নিয়ে এনজিও কর্মকর্তা লাপাত্তা 

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

নভেম্বর ২৫, ২০২০, ১১:৩০ এএম


গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা নিয়ে এনজিও কর্মকর্তা লাপাত্তা 

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ নামের কথিক বেসরকারী এনজিও'র কর্মকর্তা চন্দ্রলাল রবিদাস গ্রাহকের প্রায় ৫ কোটিরও অধিক টাকা  নিয়ে রাতের আধারে উধাও হয়েছে। 

এতে বিপাকে পড়েছে ঐ এনজিও'র নিকট সঞ্চয় রাখা কয়েক শত গ্রাহক।

তবে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষটির তদন্ত চলছে, তদন্ত রির্পোট সাপেক্ষে আইনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ নামের এনজিওটি ২০১৩ সালে উপজেলা সমবায় কর্তৃক নিবন্ধন (যার নং ৫৪৯/১৩) নিয়ে উপজেলার কৃষি ব্যাংক মোড় সংলগ্ন সুহেল বাবুর ভবনের দ্বিতীয় তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করে। 

এনজিওটিতে চারজন আদায়কারী নিয়োগ করে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ডিপিএসে ১৫ শতাংশ এবং এফডিআরে দ্বিগুন অর্থ প্রদানের লোভনীয় লাভ্যাংশের অফার দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করে। এদের সরল কথায় বিশ্বাস করে এলাকার অনেক মানুষ নিজের কষ্টার্জিত টাকা সেখানে লাভের আশায় ডিপিএস, এফডিআর ও সঞ্চয় হিসাবে রাখে। 

এরমধ্যে কিছু গ্রাহক তাদের সঞ্চয় ফেরত চাইলে এনজিওটির কর্মকর্তা চন্দ্রলাল রবিদাস বিভিন্ন ধরনের তালবাহনা করতে থাকে। 

এমবস্থায় গত ১৫ নভেম্বর রোববার নাহিদ নামের সদস্য অফিসে সঞ্চয়ের টাকা নিতে গেলে অফিসের দরজা তালাবন্ধ দেখতে পায়। 

পরে বিষয়টি অন্যান্য গ্রাহকরা জানতে পারলে অফিসে এসে দেখতে পান অফিসের প্রধান কর্মকর্তা চন্দ্রলাল রবিদাস অফিস তালাবদ্ধ করে উধাও হয়েছেন।

উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের গ্রাহক নাফিজুর রহমান নাহিদ বলেন, আমার মায়ের পেশনের ১২ লাখ টাকা সমিতিটিতে এফডিআর হিসাবে জমা রাখি। মাসে লাখে ১৫শ টাকা করে লাভ্যাংশ দেয়ার কথা থাকলেও একটি টাকাও আমাকে দেয়নি। এখন দেখছি সমিতি উধাও। আমার মা এই চিন্তায় শয্যাশায়ী। 

উপজেলার গনেশপুর গ্রামের আদিবাসী সাঙ্গাল উড়াও বলেন, আমি জমি বিক্রয় করে ৪ লাখ টাকা রাখি। অফিসে এসে দেখছি তালা মারা। আমি এখন কি করে খাব। ছেলে মেয়েকে কিভাবে লেখাপড়া করাব।

একই উপজেলার শিমুলতলী গ্রামের রুনা মার্জিয়া বানু জানান, অনেকের মত তিনিও লাভের আশায় গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিতে ৪লক্ষ টাকা জমা রাখেন। অফিসের কর্মকর্তা উধাওয়ের খবরে তার সংসার ভাঙ্গনের মুখে।

গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিঃ এর মাঠ কর্মকর্তা উপজেলার ঢাকারপাড়া গ্রামের রাশেদ মন্ডল জানান, আমি ও আমার স্ত্রী ১০লক্ষ টাকা জামানত দিয়ে মাসে ২২ হাজার টাকা বেতনে সেখানে চাকরি নেয়। সমিতিতে আমার নিজের নামে ৪ লাখ এবং আমার স্ত্রীর নামেও ৩ টাকা সঞ্চয় রাখি। অনেক দিন থেকে বেতনও দেয়না। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

অপর মাঠকর্মী জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমরা শুধু মাঠ পর্যায়ে সঞ্চয় ও ঋণ আদায় করতাম, আর এফডিআরের সঞ্চয় গুলো ম্যানেজার চন্দ্রলাল বাবু নিজে আদায় করতেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের ৫/৬মাস থেকে বেতনও দেননি। আমরা মানবতের জীবন যাপন করছি।

পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সমাজ কর্মী এসকে হক বলেন, গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ সমিতির নামে শত শত গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। নিবন্ধন প্রদানকারী সমবায় অফিস এর দায় এড়াতে পারেন না। আশা করি সমবায় অফিস এই সমিতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ সমিতি বড় ব্যানার টাঙ্গিয়ে এলাকার অসহায় মানুষদের লাভের ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় পরিচালনাকারী ও সমবায় কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবী করেন সমাজ কর্মী আহসানুল হক বিপ্লব।

এ ব্যাপারে গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির লিঃ কার্যালয়ের ভবন মালিক সুহেল বাবু জানান, প্রায় ৭/৮বছর আগে দোতলায় অফিসটি ভাড়া নেন হরেন চন্দ্র নামের ব্যক্তি। হঠাৎ শুনি অফিসে তালা লাগিয়ে কর্মকর্তা উধায় হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, গত মার্চ মাস থেকে অফিসের ভাড়াও পাওনা রয়েছে।

সমিতির সভাপতি শ্রী হরেন চন্দ্র বলেন, আমি বিগত ২০১৬ সালে সমিতি থেকে বের হয়ে এসেছি। আমি এর কার্যক্রমের সাথে জড়িত নই।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি কিভাবে এখনও সভাপতি আছি এটি সববায় অফিস ও তার কর্মকর্তারাই ভাল বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা লুৎফুল কবীর সিদ্দিকীর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ নামের একটি সমিতি বন্ধের অভিযোগ পেয়েছি। 

এ বিষয়ে আমার উর্ধ্বধন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। এটির তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে আইনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমারসংবাদ/এআই