Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

লোকসানের আশঙ্কা: সরকারকে চাল দিতে চাচ্ছে না চালকল মালিকরা

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া 

নভেম্বর ২৮, ২০২০, ০৭:০৫ এএম


লোকসানের আশঙ্কা: সরকারকে চাল দিতে চাচ্ছে না চালকল মালিকরা

আমন মৌসুমে সরকারি গোডাউনে চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য বিভাগের সঙ্গে একজন মিলারও চুক্তি করেনি। এই চুক্তির শেষ দিন ছিল গত বৃহস্পতিবার। 

জেলায় ৫ শতাধিক মিলার থাকলেও লোকসানের আশঙ্কায় একজন মিল মালিকও সরকারি গোডাউনে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি করেননি। এ অবস্থায় আমন চাল সংগ্রহ শুরুতেই বড় ধরনের ধাক্কা খেল কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য বিভাগ।
 
কুষ্টিয়া জেলায় এ বছর আমন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার মেট্রিক টন। আর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার মেট্রিক টনের সামন্য বেশী। 

এর আগে শতাধিক মিল মালিক চাল সরবরাহের আগ্রহ দেখিয়ে আবেদন করলেও চুক্তি থেকে তারা সবাই সরে এসেছে।

জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বোরোতেও সময় বাড়িয়েও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। 

সেসময় ৩৪ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনার জন্য চালকল মালিকদের সাথে চুক্তি হলে ২৬১ জন মিল মালিক সরকারি গোডাউনে চাল দিতে ব্যর্থ হয়। 

সেসময় আরো অনেক মিল মালিক চুক্তি করেও ২০ থেকে ৪০ ভাগ চাল দিয়ে অবশিষ্ট চাল দিতে পারেনি। 

বোরোতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সংগ্রহ কম হলেও এবার আমনে তার উল্টো হচ্ছে। 

মিল মালিকরা জানান, বোরোতে বেশীর ভাগ মিল মালিকরা লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করে। অনেক মিল মালিক ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করেছিল। 

আমনে মোটা ধানের আবাদ ও উৎপাদন বেশী হয়। অন্য বছরে মোটা ধান বিক্রি হয় ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়। 

আর এ বছর সেই ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১১’শ টাকায়। নতুন ধান কিনে চাল উৎপাদনে খরচ পড়ছে প্রতি কেজী ৪০ টাকা। 

মিল মালিকরা জানান, এই মৌসুমে সরকার  প্রতিকেজি  চালের দর নির্ধারণ করেছে ৩৭ টাকা কেজি। সেখানে ৪০ টাকা কেজি চাল উৎপাদন করে সরকারি গোডাউনে দিলে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ টাকা লোকসান হবে। 

গত বোরোতে লোকসান দিয়ে সরকারি গোডাউনে চাল দেয়ার পরেও সরকারি প্রনোদনা না পাওয়া এবার মিলমালিকরা চাল দিতে উৎসাহি হচ্ছে না। এ কারণেই কোন মিল মালিক চুক্তি করেনি। 

কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, সরকারের সাথে মিল মালিকদের বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে বেশীর ভাগ মিল মালিক চাল না দেয়ার বিষয়টি জানিয়েছে। 

আর চাল দিলে চুক্তি অনুযায়ী ২০ ভাগের বেশী চাল দিতে পারবে না। এখন সরকার থেকে সিদ্ধান্ত আসলেই সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

অন্যান্য মিল মালিকরা জানান, এক মৌসুমে লোকসান হলে অন্য মৌসুমে ওই ক্ষতি পুষিয়ে যায়। তবে এবার তা হচ্ছে না। ধানের বাজার বেশী।  নতুন ধান আসলেও বাজার কমার কোন সম্ভাবনা  নেই। 

এ অবস্থায় সরকার ধান ও চালের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে তাতে কোন মিল মালিক সরকারি গোডাউনে চাল দিতে পারবে না। বাহিরে খোলা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। সেখানে ৩৭ টাকা দরে সরকারি গোডাউনে চাল দিবে কিভাবে। 

এদিকে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা দফায় দফায় জেলার মিল মালিকদের সাথে বৈঠক করছেন। ফোনেও অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তার পরও মিল মালিকরা চুক্তি করতে রাজি হচ্ছে না। 

আমারসংবাদ/এআই