Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

যা আছে ২৯ পৃষ্ঠার প্রস্তাবিত খসড়ায়

জানুয়ারি ১৮, ২০২১, ০১:২০ পিএম


যা আছে ২৯ পৃষ্ঠার প্রস্তাবিত খসড়ায়

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ১৩ পৃষ্ঠার প্রস্তাবনা ও ২৯ পৃষ্ঠার প্রস্তাবিত নারী নির্যাতন মন আইনটি সংসে বিল আকারে উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় এখন বিধি অনুসারে আইনটি পর্যালোচনা করে সংসদে উপস্থাপনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

অবশ্য এর আগে বিভিন্ন বিষয়ে আইন কমিশন সুপারিশ পাঠালেও তার অধিকাংশই কার্যকর করেনি সরকার। তবে আইন কমিশন সূত্রে জানা যায়, মাঠপর্যায়ের গবেষণা, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মতামত, দেশ-বিদেশের উল্লেখযোগ্য রায়ের ভিত্তিতে নতুন এই আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। 

নতুন প্রস্তাবনায় যা বলা হয়েছে:

সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আইন কমিশনের তৈরি করা ২৯ পৃষ্ঠার প্রস্তাবিত নারী নির্যাতন মন আইনের প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন মন আইন ২০০০ প্রণয়নের পর প্রথম দিকে কয়েক বছর মোটামুটি প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছিল। তবে এখন আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য পূরণ সন্তোষজনক নয়। আসামিদের শাস্তি বা দণ্ড পাওয়ার হার নগণ্য। আইনের অপপ্রয়োগের হারও আশঙ্কাজনক।

প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়, যেহেতু নারী বলতে সব বয়সের নারী বোঝায়, সেহেতু মেয়ে শিশুরা নারী জাতিভুক্ত এবং নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত বিশেষ অপরাধসমূহ অর্থাৎ ধর্ষণ, শিশুসহ যে কোনো বয়সের নারীর ওপরই সংঘটিত হতে পারে। এ জন্য নারী শিশু ও পুরুষ শিশু উভয় শিশুর ওপরে সাধারণভাবে সংঘটিত অপরাধগুলো একটি পৃথক আইনের আওতাভুক্ত করাই বাঞ্ছনীয়। উন্নত বিশ্বগুলোতে অনেক যৌন নির্যাতনকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। কাজেই বর্তমান বাস্তবতায় ধর্ষণের সংজ্ঞা সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া ধর্ষণ ছাড়াও বিকৃত যৌন অপরাধগুলোও সংজ্ঞায়িত করে শাস্তির আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে। এ জন্য আইনে ধর্ষণসহ সংশ্নিষ্ট ১৪টি বিষয়কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

ধর্ষণের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- ক. জোরপূর্বকভাবে নারীর ইচ্ছা ও সম্মতি ব্যতিরেকে; বা খ. তাহার সম্মতিতে, কিন্তু এরূপ সম্মতি আায় করা হয়েছে তাহার অথবা কোনো ব্যক্তি যাহার সঙ্গে তাহার সম্বন্ধ বা সম্পর্ক রয়েছে, এরূপ কোনো ব্যক্তির ক্ষতিসাধন বা মৃত্যুর হুমকি দেখিয়ে বা গ. সংশ্নিষ্ট নারীর আপাত সম্মতিতে, যখন সে ভুলক্রমে বা ভ্রান্ত বিশ্বাসে মনে করে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি তাহার বৈধ স্বামী, কিন্তু ওই অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজে জানে যে, সে ওই নারীর স্বামী নয় বা ঘ. তাহার সম্মতিতে যখন এই ধরনের সম্মতি মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ থাকাবস্থায় বা নেশাগ্রস্ত থাকাকালে বা এমন কোনো মানসিক অবস্থায় দেওয়া হয়েছিল, যখন সে তাহার সম্মতির প্রকৃতি ও পরিণাম বোঝার ব্যাপারে অক্ষম ছিল বা ঙ. তাহার বয়স ১৬ বছরের কম, যদিও তাহার সম্মতি ছিল বা চ. যখন সে তাহার সম্মতি আছে কি নাই তাহা প্রকাশ করতে বা জানাতে অক্ষম।

গর্ভপাত বৈধ ও ধর্ষণজাত সন্তানের ভরণপোষণ দিবে সরকার:

নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, অন্য আইনে যাহা থাকুক না কেন, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি ধর্ষণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা হন এবং তাতে তাহার স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা না থাকলে গর্ভধারণের ১০ সপ্তাহের মধ্যে তিনি স্বেচ্ছায় গর্ভপাত করাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার নারীর বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয়, তাহলে তাহার নিজের সম্মতির অতিরিক্ত বাবা-মা কিংবা প্রযোজ্য আইনানুগ অভিভাবকের সম্মতি নিতে হবে। তবে গর্ভপাত শুধুমাত্র সরকার স্বীকৃত হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সম্পন্ন করতে হবে।

এ ছাড়া ধর্ষণের কারণে কোনো সন্তান জন্ম নিলে শিশুটি শুধুমাত্র তার মাতার পরিচয়ে পরিচিত হবেন এবং প্রয়োজনে সরকার ২১ বছর পর্যন্ত তার ভরণপোষণের ব্যয় নির্বাহ করবে। তবে এক্ষেত্রে ২১ বছরের বেশি বয়স্ক কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে তাহার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রতিবন্ধী সন্তানের ক্ষেত্রে তিনি স্বীয় ভরণপোষণের যোগ্যতা অর্জন না করা পর্যন্ত সরকার ব্যয় বহন করবে। উল্লেখিত সন্তানদের ভরণপোষণ বাবদ টাকার পরিমাণ নির্ধারণে সরকারকে বিধি প্রণয়ন করতে হবে। এর আওতায় সরকার ধর্ষকের কাছ থেকে ভরণপোষণ আদায় করতে পারবে, এর প্রয়োজনে ধর্ষকের সম্পদ থেকেও তা আদায় করা যাবে।

ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনমূলক অপরাধের যে দণ্ড চাওয়া হয়েছে:

প্রস্তাবিত আইনে চৌদ্দ বছরের কম বয়সী শিশু ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে অন্যূন ২০ বছর অথবা ৩০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে এবং এর অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। কারও হেফাজতে বা আশ্রয়ে থাকাকালে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, কোনো নারী সহকর্মী বা অধস্তন কর্মী বা কোনো নারী তাহার হেফাজতে বা আশ্রয়ে বা আওতাধীন স্থানে থাকাকালে কোনো নারীর অবস্থানের সুযোগ গ্রহণ করে তাহাকে ধর্ষণ করে, সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি অন্যূন ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড হবে ২০ লাখ টাকা। একইভাবে আইনে আস্থা বা বিশ্বাস ভঙ্গপূর্বক বা সম্পর্কের সুযোগ গ্রহণ করে অথবা সাম্প্রায়িক সহিংসতাকালে বা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বা সম্মতি প্রদানে অক্ষম ইত্যাদি ক্ষেত্রে চৌদ্দ বা তদূর্ধ্ব বয়সী শিশুর সম্মতিক্রমে ধর্ষণের ফলে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক বৈকল্য ইত্যাদি শাস্তি বা দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের শাস্তি বা অপরাধীর পুনরাবৃত্তির শাস্তিসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি হিসেবে অন্যূন ১০ বছর কারাদণ্ড থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

খসড়ায় ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং এর অতিরিক্ত দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনে নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে প্রমাণিত ধর্ষণকারীর অন্যূন ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩০ বছর কারাদণ্ড। একইভাবে সালিশ বা ফতোয়াকারীর আত্মহত্যায় ইন্ধন জোগানোর জন্য শাস্তি হিসেবে প্রত্যেককে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আমারসংবাদ/এসআর/জেআই